বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিলেটে প্রায় ২৫২ কোটি টাকার পাথর লুটের নায়ক মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২১, ২:৫৮ পিএম

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলা থেকে অবৈধভাবে ২৫১ কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকার পাথর লুটের ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনার অভিযোগে একটি গত বুধবার রাত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে দায়ের করছেন একটি মামলা। মামলায় একমাত্র আসামি এই টিলার কোয়ারি ইজারাদার মেসার্স বশির কোম্পানীর সত্ত্বাধিকারী উপজেলার কাঠালবাড়ি এলাকার মোহাম্মদ আলী (৪০)।

সূত্র মতে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ১৩৭ দশমিক ৫০ একর আয়তনের শাহ আরেফিন টিলার নিচে রয়েছে বিপুল পাথরে সম্পদ। এসব পাথর উত্তোলনে করতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে সরকারি খাস খতিয়ানের বিশাল এই টিলায়। লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এই টিলার পুরোটা খুঁড়ে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য গর্তের। এতে অস্তিত্ব সংকটে খোদ টিলাই। টিলার মাটি কেটে গর্ত খুঁড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রায়ই মাটি ধসে এখানে মৃত্যু হয় শ্রমিকের। গত পাঁচ বছরে এই টিলা ধসে মারা গেছেন অন্তত ২৫ জন পাথর শ্রমিক শাহ আরেফিন। অবৈধভাবে টিলা ধ্বংস করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে। এরইপেক্ষিতে ২০১৬ সালে এই টিলা থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও হয় একাধিক। তবু ঠেকানো যায়নি অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলন। এবার দুদকের পক্ষ থেকে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকার পাথর লুটের অভিযোগে মামলা করা হলো। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুদকের সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। এব্যাপারে তিনি বলেন, অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া যাওয়ায়, দায়ের করা হয়েছে এই মামলাটি। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০০৪ সালের এপ্রিলে শাহ আরেফিন টিলার ৬১ একর ভ’মি পাথর উত্তোলনের জন্য ১৩ শর্তে মোহাম্মদ আলীকে ইজারা দেওয়া হয়। তবে ইজারা নেওয়ার পর শর্তভঙ্গ করে পাথর উত্তোলন শুরু করেন মোহাম্মদ আলী। এতে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে টিলা থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে খনিজ সম্পদ উন্নয় ব্যুরো। তবে মোহাম্মদ আলী এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখেন। এমনকি ৬১ একর ভ’মি ইজারা নিলেও তিনি টিলার পুরো ১৩৭ একর জায়গা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করেন। পাথর উত্তোলনের পূর্বে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নেননি ইজারাদার। এসব অভিযোগ এনে মামলার এজাহারে বলা হয়, সার্বিক বিচারে অবৈধভাবে ৬২ লাখ, ৮৮ হাজার ৭৫০ ঘনফুট সরকারি পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে ২৫১ কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা লুট করেছেন মোহাম্মদ আলী। যা দন্ডবিধি ৪২০/৪০৬ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরআগে ২০১৭ সালে পাথর উত্তোলনকালে একসাথে ৫ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায়ও এই টিলায় অবৈধ কার্যক্রমের বিষয়টি আলোচনায় উঠে। সেসময় জেলা প্রশাসনের তদন্তেও ইজারাদারেরর ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ মেলে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৬৫ একর ভূমি লিজ নিয়ে ১৩৭ একরের পুরো টিলাটি ধ্বংস করে দিয়েছেন ইজারাদার মোহাম্মদ আলী।

সিলেটের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে টিলা ধ্বংসের সাথে জড়িত ৪৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। টিলা কেটে পাথর উত্তোলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শাহ আরেফিন খানকা শরীফের খাদেম এবং ইজারাদার জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন