মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

প্রতীক্ষার রবিউল আউয়াল

পীরজাদা মুহাম্মদ এমদাদুল্লাহ্ শাজলী | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

আরবী বার মাসের মধ্যে ৩য় মাসের নাম রবিউল আউয়াল। ঈমানী চেতনা ও নবী প্রেমের জজবা বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে জান্নাতী ফুল মানব ধারায় এসেছেন এ মাসে । গোটা সৃষ্টি তথা জীন-ইনসানের দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে মহানবীর (সা.) শুভাগমন হয়েছিল ৫৭০ খ্রীঃ ১২ রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার।

মহানবী (সা.) এর আবির্ভাবকালে নিখিল বিশ্ব অনাচার, অবিচার, জুলুম, অত্যাচারে তিমিরাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আরবের ন্যায় পারস্য মিশর, রোম, ভারতবর্ষসহ গোটা দুনিয়ায় সভ্যতার আলো নিভে গিয়েছিল। অগ্নি উপাসনা, চন্দ্র পূজা, সূর্য পূজা, গাছ-মাছের পূজার অভিনব আবিষ্কার চালু হয়েছিল। ধর্ম সংক্রান্ত মতানৈক্য, রাজনৈতিক আত্মকলহ, পেশীশক্তির দাপট এবং দলাদলির দাবানলে দগ্ধ হয়ে দ্রুত গতিতে অবনতির পথে অগ্রসর হয়েছিল পৃথিবী। খাঁ খাঁ মরুভূমি, স্রষ্টার অথৈই জল, মাজলুম জনগোষ্ঠীর আত্মচিৎকার সবই যেন একজন উদ্ধারকারী মহামানবের শুভাগমনের প্রতিক্ষায় অশ্রুসজল চোখে পথচেয়ে ছিল দীর্ঘ বছর ধরে।

মানব জাতিকে এহেন দুরাবস্থার বেড়াজাল থেকে মুক্তি, আখেরী জামানার দুর্বল বান্দাদের হিদায়াত, মাজলুমদের উদ্ধার, সর্বস্তরে নৈতিক শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়ার জন্য আদি মানব আদম (আ.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির ছয় হাজার একশত তের (৬১১৩) বছর পর সকল পয়গাম্বরের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ পয়গাম্বর সৃষ্টির দুলাল মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহকে (সা.) আল্লাহ্ পাক রহমত সহ দুনিয়াতে পাঠালেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীদের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’

শীতের অবসান প্রায়, তরু শাখা প্রশাখায় নব পাতা পল্লব সমাগত। এমন এক দিনে রাতের শেষ প্রহরে হালকা শীতের স্নিগ্ধ বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল।

পবিত্র মক্কা নগরীতে উচুঁ-নীচু ভুমিতে প্রভাতী আলোক শিখা শুভাগমী বার্তা নিয়ে কারা যেন ছড়িয়ে পড়েছিল। যার আগমণের অপূর্ব নুরে আসমান জমিন আলোকিত হয়েছিল। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল- ‘মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ্, শুভাগমণ! অভিনন্দন! কুল মাখলুকাত আজ আনন্দে আত্মহারা, গগণে গগণে ফেরেস্তাদের ছুটাছুটি, তোরনে তোরনে বাঁশি আর বাঁশি। সবই আজ বিস্মিত, পুলকিত, কম্পিত ও শিহরিত। জড় প্রকৃতির অন্তরেও লেগেছে দোলা। বেহেশ্তী খুশবুতে বাতাস আজ সুরভিত। যুগ-যুগান্তের প্রতীক্ষিত না আসা অতিথির আগমণ মূহুর্ত আজ যেন আসন্ন হয়ে ওঠেছে। তারই অভ্যর্থনার জন্য আজ সব আয়োজন। এমন স্নিগ্ধ শান্ত আমেজের মধ্যদিয়ে শুভ মূহুর্তে সোবহে-সাদেকের সময় আরবের মরু দিগন্তে মক্কা নগরীর এক জীর্ণ কুটিরের নিভৃত কক্ষে মা আমেনার কোলে তাশরীফ আনলেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)। মহৎ ব্যক্তি বিশেষত: আম্বিয়াগণের শুভাগমণের মূহুর্তে বিষ্ময়কর ও আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা ইতিহাসে উল্লেখ আছে। সৃষ্টির দুলালের আগমনের মূহুর্তে ও অভাবনীয় বিস্ময়কর ও অতি আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। মুহাদ্দিছগণের পরিভাষায় যাকে বলে- “ইরহাসাত।” পিয়ারা নবীর (সা.) জন্মলগ্নে সত্যের আগমন মিথ্যার কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল তামাম দুনিয়ার খোদাদ্রোহী শাষকদের অন্তরে। সৃষ্টির দুলালের শুভ পয়দায়েশের সময়ে পারস্যের রাজ প্রাসাদে ফাটল দেখা দেয়, উহার ১৪টি গম্বুজ ভ‚মিতে ধ্বসে পড়ে, পারস্য মন্দিরের অগ্নি নির্বাপিত হয়ে যায়, যা ইতিপূর্বে হাজার বছরেও নির্বাপিত হয়নি। কা’বা মন্দিরের দেব-মুর্তিগুলো ভুলণ্ঠিত হয়েছিল, সিরিয়ার মরুভূমিতে নহর প্রবাহিত হলো। সাওয়া নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হলো। সায়্যিদা আমেনার জীর্ণ কুটিরের আলোতে সিরিয়ার সব মহল ও রোম সাম্রাজ্যের প্রাসাদ সমূহ পর্যন্ত আলোকিত হলো। মা আমেনার কোলে তাশরীফ এনেছেন যে-নূর তার নাম মুহাম্মদ (সা.)। হযরত মুহাম্মদ (সা.) একটি নাম। কোটি কোটি মানুষের ওষ্ঠদ্বয় প্রতিদিন বহুবার এ নামের আস্বাদ গ্রহণ করেন। এ নাম মুমিনের হৃদয়ে প্রবাহিত করে খুশি ও আনন্দের ফুল্লধারা। ১৪০০ বছর ধরে এভাবেই চলছে দুনিয়ার ইতিহাস। পৃথিবীর শেষ দিনটি পর্যন্ত অগনিত মানুষের মুখে মরুর দুলালের নামের উচ্চারণ এবং হৃদয়ের গভীরে তার অনুরাগ এমনিভাবে অব্যাহত থাকবে।

দু’জাহানের বাদশা, সায়্যিদা আমেনার নয়নমনি, রাসুল পাক (সা.) এর শুভ পয়দায়েশের দিন সোমবার দিবসটি ইতিহাস বিজড়িত। রাসুল পাক (সা.) এর শুভ জন্ম হয়েছে সোমবার, নবুওয়্যাত লাভ করেছেন সোমবার, মদিনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেছেন সোমবার, মদিনা মুনাওয়্যারায় তাশরীফ নিয়েছেন সোমবার, উম্মতদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে পরপারে যাত্রা করেছেন সোমবার এবং হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করেছেন সোমবার। মানব সৃষ্টির ছয় হাজার এক শত তের (৬১১৩) বছর পর সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ওহির জ্ঞানে আলোকে আদর্শ সমাজ গড়ে যে শিক্ষা মানব জাতিকে দিয়েছেন সে শিক্ষার আলোকে পথ চলে আমরা ও হাউজে কাউসার পানকারী এবং তাঁর শাফায়াতের যোগ্য হতে পারি। পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট আমাদের প্রার্থনা ও আর্তি- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পক্ষ হতে অক্ষম হস্তের এ লেখা তুমি কবুল কর, তুমিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ ও দোয়া কবুলকারী। আমিন!!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Monjur Rashed ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ২:৩৪ পিএম says : 0
মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ্, শুভাগমণ! অভিনন্দন!
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন