বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জুমার পর বিক্ষোভ মিছিল বিজয়নগরে সংঘর্ষ

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় সারাদেশে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র আল-কোরআন অবমাননার ঘটনায় গতকাল শুক্রবার সারাদেশে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। তবে কুমিল্লার ঘটনার জেরে গতকাল জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে ধর্মপ্রান সাধারণ মুসল্লিরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি রাজধানীর পল্টন-বিজয়নগর হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। আর তখনই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ ও বেধরক লাটি চার্জ করে। তখন বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। আর এই পুরো সময় পল্টন, কাকরাইল, বিজয় নগর, ফকিরাপুল এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ১০জন সাধারণ মুসল্লি এবং ৫জন পুলিশ আহত হয়েছে। এ সময় ৭জনকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈমাম জুমার নামাজের সালাম শেষ করার সঙ্গে-সঙ্গেই সাধারণ মুসল্লিদের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ শুরু হয়। শুরুতে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করলেও আস্তে-আস্তে রাস্তায় নেমে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা মিছিলটি মালিবাগের দিকে এগোতে থাকে। তখন পুলিশ তাদের নাইটিঙ্গেল মোড় ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। সাধারণ মুসল্লিদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হলেও এতে হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ থেকে পবিত্র কোরআন অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি হেফাজতের সাবেক নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সংগঠনটির নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেয়া হয়। এছাড়া সরকার ‘নাস্তিকদের’ হেফাজত করছে এমন অভিযোগ তুলে স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই সময় বিক্ষোভকারীদের কেউ-কেউ উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি আ. আহাদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পরিস্থিতি অবনতি যাতে না ঘটে এবং অন্য কোনো গোষ্ঠী যেন সাধারণ মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিলকে ব্যবহার করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য পুলিশ শুরু থেকে শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। নাইটিঙ্গেল মোড়ে আসার পর বিক্ষোভকারীদের কেউ-কেউ পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। তখন পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ধাওয়া দেয় এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বেলা আড়াইটার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে ও যান চলাচল শুরু হয়।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, সাধারণত বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে যেসব বিক্ষোভ হয়, সেইগুলোর নেতৃত্ব কোনো না কোনো সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দল দিয়ে থাকে। কিন্তু এবারের বিক্ষোভে প্রকাশ্যে কেউ নেতৃত্বে ছিলেন না। তাই মিছিলটি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় ইট-পাটকেলের আঘাতে সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ (এসি) পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। আহতরা হলেন-রমনা জোনের এসি বায়জিদুর রহমান, এসআই সালমান, এএসআই মহিদুল ও বাকি দুই পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায়নি।
ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, নাইটিংগেল মোড়ে সাধারণ মুসল্লিদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করেছে। এই ঘটনায় আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহতরা হলেন- আশরাফুল (১৯), মহিউদ্দিন (২০), কাওসার (২৪), ফজলে রাব্বি (১৮)।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আলিম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জুমার নামাজের আগেই বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশের একটি কেঁচি গেট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয় পুলিশ। ওই সময় একজন নিরাপত্তারক্ষী গেটটি বন্ধ করে দেন। এতে নামাজ পড়তে আসা একদল মুসল্লি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। নামাজ শেষে ওই গেটের তালা ভেঙে বেরিয়ে আসে একদল মুসল্লি। শুরুর দিকে অল্প কিছু মুসল্লিকে দেখা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরপর মুসল্লিরা রাস্তায় নেমে আসেন এবং একটি মিছিল বের করেন। উল্লেখ্য গত বুধবার দুর্গাপূজা চলাকালে কুমিল্লা শহরের একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জেরে কুমিল্লা-চাঁদপুরসহ দেশের কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বিজিবি মোতায়েন করে। এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনা তদন্তে করা হয়েছে কমিটি। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বালাগঞ্জ (সিলেট) : জুমআর নামাজের পর উপজেলার মহাসড়কসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তাজপুর বাজারে ওসমানীনগর ইসলামী যুব ফোরামের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। জুমআর নামাজের পর তাজপুর বাজার মসজিদ থেকে মিছিলটি বের হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদুল্লাহ মার্কেটের সম্মূখে ইশফাক আহমদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান রব্বানী, আব্দুল হাশিম, একে আজাদ, নুরুল হক টিটু, আব্দুস সামাদ, হামীম আহমদ ও নায়ীম কামালী প্রমূখ।
এদিকে কদমতলা জামে মসজিদ থেকে ‘আহনাফ শিল্পী গোষ্ঠি’র ব্যানারে একটি মিছিল বের করা হয়, তাজপুর মাটিহানী মঙ্গলচন্ডী এলাকাবাসীর উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
ও দয়ামীর বাজারে ‘তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা মোসাদ্দিম বিল্লাহ মতছির, দয়ামীর টাইটেল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নজরুল ইসলাম, ওসমানীনগর উপজেলা জাতীয় পার্টিও সেক্রেটারী মকবুল হোসেন, মাওলানা রায়হান আহমদ,হাফিজ সায়েম আহমদ, সুমন আহমদ প্রমূখ। বক্তারা তাদের পৃথক বক্তব্যে বলেন, কুরআন অবমাননায় মুসলমানের রক্তে আগুন লেগেছে। অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন