শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

যে ছবি যায় না আঁকা শিল্পির তুলিতে

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

সহীহ বুখারী শরীফে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি নবী কারীম (সা.)-কে কখনো জোরে অট্টহাসি দিতে দেখেননি যাতে মুখের কণ্ঠতালু দৃষ্টিগোচর হয়।
হুযুর আকরাম (সা.)-এর ওষ্ঠাধরে সর্বদাই মৃদু হাসি লেগে থাকত। কোনো কোনো হাদীসে এরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়, তিনি এত বেশি হাসতেন না, যাতে নাওয়াজেয দাঁত দৃষ্টিগোচর হয়। চোয়ালের শেষ প্রান্তের দাঁতকে ‘নাওয়াজেয’ বলা হয়।
ওপরের বর্ণনা কোনো ব্যক্তির অত্যধিক হাসাহাসি করার একটা উদাহরণমাত্র। এখানে নাওয়াজেয বলতে আক্কেল দাঁত বোঝানো হয়নি, বরং সাধারণ দন্তপাটিকেই বোঝানো হয়েছে।

রাসূলে কারীম (সা.) এর হাসি ‘মৃদু হাসি’ই ছিল। আওয়াজবিহীন বড় হাসিকে জিহক বলা হয়। আর জিহকের প্রাথমিক অবস্থা মুচকি হাসি; এতে খুশির প্রাবল্য যদি বেশি থাকে, তবে কখনো কখনো দু’-একটি দাঁত প্রকাশিত হওয়া স্বাভাবিক; এরূপ অবস্থায় যদি আওয়াজ বিদ্যমান থাকে, তবে তাকে বলা হয় কাহ্কাহা বা অট্টহাসি; নিঃশব্দে হাসলে এবং এতে দাঁত প্রকাশ পেলে তাকে বলে জিহক; আর যদি একেবারে শব্দ না থাকে এবং দাঁতও বের না হয়, তবে সে হাসিকে ‘তাবাস্সুম’ বা মৃদু হাসি বলে। সাররাহ নামক কিতাবে আছে, ওষ্ঠদ্বয় মিলিত থাকা অবস্থায় যে হাসি হয়, তাকে তাবাস্সুম বলে। তবে তাবাস্সুম বা মুচকি হাসির এ সংজ্ঞাই সমধিক প্রসিদ্ধ যে, নিঃশব্দ হাসিতে দাঁতের শুভ্রতা ঈষৎ দৃষ্টিগোচর হয়।

হযরত শায়খ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, নবী কারীম (সা.) এর বিশেষ থেকে বিশেষতর অবস্থার অধিকাংশ হাসি তাবাস্সুম বা মুচকি হাসি ছিল। তবে এটা হতে পারে যে, কখনো কখনো তিনি জিহক হাসি হেসেছেন, কিন্তু তাই বলে জিহকের সীমা অতিক্রম করেননি আর কাহ্কাহা বা অট্টহাসির তো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, অট্টহাসি অপছন্দনীয়। অধিক হাসাহাসি করলে বা জিহক হাসির আধিক্যে মানুষের ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মান ক্ষুণ্ন হয়।
ইমাম বায়হাকী রহ. হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম (সা.) যখন হাসতেন, তখন পার্শ্ববর্তী দেয়াল আলোকিত হয়ে যেত এবং তাঁর পবিত্র দাঁতের নূরে দেয়াল সূর্যরশ্মির ন্যায় ঝিলিক মারত। তিনি যখন ক্রন্দন করতেন, তখনও এরূপ অবস্থা হতো। ক্রন্দনের সময় আওয়াজ উচ্চ হতো না। পবিত্র চোখ থেকে অশ্রু নির্গত হতো। তামার ডেকচির ভেতর ফুটন্ত পানির শব্দের মতো পবিত্র বক্ষাভ্যন্তর থেকে একধরনের বিশেষ শব্দ শোনা যেত।

কোনো কোনো বর্ণনায় তাকে যব ভাঙানোর চাকা ঘূর্ণনের আওয়াজের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাঁর এরকম ক্রন্দন কখনো নিজের দুঃখ-যাতনার জন্য হতো না। তিনি কাঁদতেন আল্লাহ তাআলার প্রবল পরাক্রান্ত সিফাতের গভীরতা অনুধাবনের কারণে, উম্মতের প্রতি অপার স্নেহ-মমতা বা কোনো মৃতের তরে আল্লাহ তাআলার রহমত কামনা করার জন্যে। তিনি যখন তন্ময় হয়ে আল্লাহর কালাম শ্রবণ করতেন অথবা কোনো কোনো সময় রাতে নামাজ আদায় করতেন, তখন এমন করুণ অবস্থার উন্মেষ ঘটত। নবীজি কখনো হাই তুলতেন না; হাই তোলা দৈহিক অবসন্নতার বহিঃপ্রকাশ। হুযুর পাক (সা.) এর ব্যক্তিত্বে এরকম অবস্থা আদৌ ছিল না। আল্লাহ তাআলা তাঁকে এ কাজটি থেকে সুরক্ষিত রেখেছিলেন।

কোনো কোনো বর্ণনা এরকমও আছে, কোনো নবীই কখনো হাই তোলেননি। এক হাদীসে এরকম আছে, হাই শয়তানের তরফ থেকে হয়ে থাকে। কারও যদি হাই প্রবল হয়ে যায়, তা হলে বাম হাতের পিঠ মুখের ওপর স্থাপন করতে হবে অথবা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরতে হবে। হাই তোলার সময় আলস্যসূচক কোনো শব্দ মুখ থেকে বের করা খুবই অপছন্দনীয় কাজ।
এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি হাই তুলে আওয়াজ বের করে, শয়তান তার মুখের ভেতর থেকে হাসাহাসি করতে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
সোয়েব আহমেদ ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪৯ এএম says : 0
একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি জীবনীগ্রন্থ লেখা হয়েছে কার, এ–বিষয়ক কোনো জরিপ কখনো হয়েছে কি? হলে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর নাম ওপরেই থাকবে।
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪৯ এএম says : 0
মহানবী (সা.)–কে জানার প্রথম উৎস হলো কোরআন। যেমন তাঁর সম্পর্কে তাঁর জীবনসঙ্গী আয়েশা (রা.)–এর কাছে জানতে চাওয়ার পর তিনি বলেছেন, কোরআনই তাঁর চরিত্র। (ইমাম বুখারি, আল আদাব আল মুফরাদ, হাদিস: ৩০৮)।
Total Reply(0)
তারেক আজিজ ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:৫০ এএম says : 0
মহানবী (সা.)–এর জীবনী আলোচনার প্রধানতম দুটি বাহু রয়েছে। একটি হলো ‘সিরাত’; যাকে ‘সিয়ার’ ও ‘মাগাজি’ও বলা হয়। সিরাত মানে জীবনী। আমরা মহানবী (সা.)–এর জীবনীর যে সাধারণ ধরনটি দেখি, অর্থাৎ জন্ম থেকে তাঁর জীবনের ধারাবাহিক ঘটনাবলির বিবরণ সেটিই ‘সিরাত’ নামে পরিচিত এবং এ-জাতীয় গ্রন্থকে সাধারণত সিরাতগ্রন্থ বলা হয়।
Total Reply(0)
দেওয়ান মাহদী ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
হিজরি প্রথম ও দ্বিতীয় শতক ছিল নবীজীবনী রচনার প্রথম যুগ। তৃতীয় শতক থেকে দ্বিতীয় যুগের সূচনা হয়। এই যুগই হলো নবীজীবনী রচনার স্বর্ণযুগ এবং ইতিহাসের ধুলোর আস্তর কঠিন হওয়ার আগেই ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতগণ বিরাট বিরাট কলেবরের জীবনী ও ইতিহাসগ্রন্থ রচনা করেছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন