বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিশু চিকিৎসায় আস্থার নাম শিশু হাসপাতাল

জটিল অপারেশনসহ মিলছে পূর্ণাঙ্গ সেবা সরকার নজর দিলে শিশুদের চিকিৎসাসেবায় বিশ্বমান অর্জন করবে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

নবজাতক ও শিশুদের শল্য চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে ঢাকা শিশু হাসপাতালে। আধুনিক মডিউলার অপারেশন থিয়েটার, সার্জিক্যাল আইসিইউসহ বিশেষায়িত ৩২ শয্যার ওয়ার্ডে চালু হওয়া সেবা পেয়ে স্বস্তি জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আশা শিশুর অভিভাবকরা।
চিকিৎসকরা বলেছেন, দরিদ্র শিশুদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বিশ্বমানের আধুনিক সেবা প্রদাণ করতে পেরে ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুশী। তাদের মতে, সরকার নজর দিলে শিশুদের চিকিৎসাসেবায় বিশ্বমান অর্জন করবে বাংলাদেশ।

সূত্র মতে, ক্রিটিক্যাল অপারেশনসহ বিশ্বমানের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা মেলে ৬৭৩ শয্যার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে। শিশুদের জন্য এতো বড় চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান বিশ্বে খুব কমই রয়েছে। হার্ট, কিডনি জটিলতা, ভাল্ব সংযোজন, হার্টের ছিদ্র অপারেশনসহ শিশুদের সব ধরনের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে সবচেয়ে বড় স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানে। গরীব থেকে উচ্চবিত্ত- সব শ্রেণীর মানুষ উন্নত মানের সেবা পেতে এই হাসপাতালে আসেন। গত তিন বছরে হাসপাতালে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সব কিছুতেই আমূল পরিবর্তন। পুরো হাসপাতালটিতে এখন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক পরিবেশ বিরাজ করছে। অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এই হাসপাতালে আছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রোগীদের চিকিৎসা সেবা চলছে। অনেক বেসরকারি হাসপাতালের পরিবেশও এমন নয়। এত সব কিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতা ও সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে। সর্বশেষ গত মার্চে ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইন-২০২১’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে বেরিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, এর ফলে শিশুদের চিকিৎসার মান বাড়বে। শিশু হাসপাতালের ইনকিউবেটরের সংখ্যা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া এখন যে শিশু হাসপাতালটি আছে এটাকে বড় করা হবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, হাসপাতালের সুন্দর ও অত্যাধুনিক এই ব্যবস্থাপনা ধরে রাখা খুবই চ্যালেজ্ঞিং। এজন্য দরকার গতিশীল নেতৃত্ব । এই হাসপাতালের এক শ্রেণীর চিকিৎসক দলীয় প্রভাব বিস্তার করায় যোগ্য ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। যারা দলীয়করণ করার চেষ্টা করেছেন, তারা দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তাদের কাজই হচ্ছে দলবাজি করে পদ-পদবি হাতিয়ে নেয়া, যারা ওই পদের যোগ্য নয়। অথচ এই হাসপাতালে অনেক যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবার এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ ও যোগ্য লোকের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অযোগ্য ও দলবাজ লোকেদের জন্য অত্যাধুনিক এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশংকা রয়েছে। বিশ্বমানের এই হাসপাতালের অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবার মান ধরে রাখার জন্য যোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বের প্রয়োজন এবং সেই ধরনের যোগ্য ব্যক্তিদের যেন প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হয় সেজন্য সরকারের কাছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আবেদন করেছেন। দেশে অনেক চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানই আছে অত্যাধুনিক মানের। কিন্তু দলবাজির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো চিকিৎসা সক্ষমতা হারিয়ে প্রায় বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে শিশু কার্ডিয়াক সেন্টার উদ্বোধন করেছেন। হাসপাতালে অত্যাধুনিক ক্যাথলাব রয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৩০টি অস্ত্রোপচার ছাড়া ক্যাথলাব এর মাধ্যমে হার্টের অপারেশন করা হয়েছে। ৭৫০টি হার্টের ছিদ্রসহ জটিলতা শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি শিশু রোগীর ইকো করা হয়। শিশুদের এমন কোন চিকিৎসা নেই, যা এই হাসপাতালে করা হয় না। হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক নন-পেয়িং বিছানা। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে ১৫০০ জন শিশু রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে আসছে। সরকারি সার্কুলার অনুযায়ী নবজাতক থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের সব ধরনের রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখানে সূচারুরূপে চালু আছে। হাসপাতালের ৫টি মেডিক্যাল ডিভিশনের মধ্যে শিশু মেডিসিন ডিভিশনের ১৪টি সাব স্পেশালিটি বিভাগ রয়েছে। এছাড়া শিশু সার্জারি ডিভিশনের ৫টি সাব স্পেশালিটি বিভাগ রয়েছে। একই সঙ্গে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার মধ্যে আছে শিশু নিবিড় পরিচর্যা বিভাগ (পিআইসিইউ), নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা বিভাগ (এনআইসিইউ), শিশু হৃদরোগ কেন্দ্র, পেডিয়েট্রিক কার্ডিয়াক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, রিকভারি ইউনিট, হাই ডিপেনডেন্সি এবং আইসোলেশন ইউনিট, এনআইসিইউ, এসসিএনইউ, পোস্ট কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব সার্ভিস, ক্রিটিক্যাল কেয়ার নেফ্রলজি (কিডনি) এবং ডায়ালাইসিস (সিসিএন্ড এন্ড ডি), ডিএনএ ল্যাবরেটরি, শিশু ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ইন্টারভেনশনাল এন্ডোসকপি সেন্টার, শিশু থ্যালাসেমিয়া সেন্টার এবং শিশু এ্যাজমা সেন্টার এর মাধ্যমে শিশুদের চিকিৎসা সেবা সফলভাবে চালু রয়েছে।

অপরদিকে হাসপাতালে শিশু চিকিৎসার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সরকারের শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রায় সকল ধরনের প্রশিক্ষণ এই হাসপাতালে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স সমূহের মাধ্যমে এফসিপিএস (জেনারেল পেডিয়েট্রিক), এফসিপিএস নিউনেটোলজি, পেডিয়েট্রিক নেফ্রোলজি, পেডিয়েট্রিক ইউরোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট, পেডিয়েট্রিক হেমাটোলজি-অনকোলজি, পেডিয়েট্রিক পালমোনোলজি এবং এমডি রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম, এম এস পেডিয়েট্রিক সার্জারি, ডিসিএইচ, বিএসসি-ইন হেলথ টেকনোলজি, ডিপ্লোমা ইন পেডিয়েট্রিক নার্সিং এর মাধ্যমে দেশে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ, পেডিয়েট্রিক নার্স ও সহযোগী জনবল তৈরির মাধ্যমে শিশু স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। সর্বসাধারণের আধুনিক উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে এখানে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক বিছানায় রোগীর ফ্রি চিকিৎসা অর্থাৎ বিছানা ভাড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধপত্র, খাবার-পথ্য সবই ফ্রি করা হয়।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, গত দুই বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা অত্যাধুনিক করা হয়েছে। শিশুদের জন্য এটি একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান। এই হাসপাতালে বিশ্বমানের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা ধরে রাখতে গতিশীল নেতৃত্ব প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মদ হোসেন ১১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:২৪ পিএম says : 0
আমি একজন গরীব হতদরিদ্র রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারি না। ওনাদের কাছে বলে ও তারা কোন আস্বাস না দেওয়ায় রোগী নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি। ব্যয় বহন করা আমার পক্ষে সম্ভাব হচ্ছে না।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন