বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি মুহাব্বত-১

খালেদ বেগ | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মহানবী (সা.)-এর বিলাদত উপলক্ষে ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে বিশেষ আয়োজন ও সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়। রাসূল (সা.)-কে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ ও তাঁর জন্মদিবস উদযাপনই এই সকল আয়োজনের লক্ষ্য। নানা ধরনের বিশেষ বিশেষ কার্যক্রমে আকৃষ্ট হয়ে বিপুল সংখ্যক মুসলমান মেতে ওঠে এবং নানাভাবে অংশগ্রহণ করে। এ বিষয়ে কোনো ঈমানদার মুসলমানের মধ্যেই কোনোরূপ দ্বিমত নেই যে, রাসূল (সা.)-কে স্মরণ ও তাঁর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষাগ্রহণ খুবই বড় রকমের একটা পূণ্যকর্ম। উল্লেখ করা বাহুল্য যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা বিশ্বব্যাপী মুসলমানের একটি স্পষ্ট চরিত্রবৈশিষ্ট্য, যা বহু শতাব্দী ধরে এই উম্মাহর মধ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে সক্রিয়।

রাসূল (সা.)-এর প্রতি উম্মাহর পক্ষ থেকে মুহাব্বতে এখনও কোনো পরিবর্তন আসেনি সত্য, কিন্তু ভালোবাসার প্রকৃতি বদলে গেছে। প্রথম সময়ের ভালোবাসা ও ভক্তির মধ্যে আমরা যা অবলোকন করি, সেই ভালোবাসা এখন ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করেছে। সাহাবীরা রা. ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, স্বতন্ত্র ধরনের মানুষ। তাঁরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর প্রত্যক্ষ সাহচর্য লাভ করেছিলেন, তাঁরা ছিলেন রাসূল (সা.)-এর নিকট থেকে সরাসরি শিক্ষাপ্রাপ্ত। তাঁর সঙ্গে বহু জিহাদে অংশগ্রহণকারী।

রাসূল (সা.)-এর সংগ্রামী মিশনে তাঁরাই ছিলেন সমর্পিত অগ্রসৈনিক, যারা হাসিমুখে জীবন কুরবানি করে দিয়েছেন এবং এমন কৃতিত্বের তাঁরা অধিকারী, যা তাঁদেরকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত ও অনুগামী ও অনুসারী হিসাবে অক্ষয় পরিচিতি দান করেছে।

সাইয়্যিদুনা মুসআব ইবনে উমাইর রা. ছিলেন এই সাহাবীদেরই অন্যতম। তিনি যখন মক্কার একজন যুবক-মুশরিক, তখন তিনি ছিলেন পোশাক-পরিচ্ছদে সর্বাপেক্ষা সুসজ্জিত এবং সর্বাধিক সৌন্দর্যসচেতন। তিনি যখন বহু মূল্যবান রেশমিবস্ত্র পরিহিত অবস্থায় উৎকৃষ্ট সুগন্ধি মেখে রাস্তা দিয়ে চলতেন পেছনে ছড়িয়ে পড়ত এক মুগ্ধকর সুবাস ও সৌরভ। তারপর এক নতুন ঘটনা।

তিনি রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন এবং রাসূল (সা.)-এর পয়গাম তাঁর হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করল। তাঁর জীবন আমূল বদলে গেল। তাঁর স্নেহময়ী মুশরিক জননী তাঁকে ঘৃণা করতে শুরু করল। আর শুধু ঘৃণাই নয়, তাঁর উপর শুরু হয়ে গেল চরম শাস্তি ও নির্যাতন। তিনি হয়ে গেলেন ধনাঢ্য থেকে ছিন্ন-মলিন বস্ত্র পরিহিত এক হতদরিদ্র ব্যক্তি। একদিন রাসূল (সা.) তাঁকে দেখলেন।

দেখলেন, পুরাতন চামড়ার তালি দেওয়া শত চ্ছিন্ন-বস্ত্র তাঁর পরিধানে এবং দেখলেন, কী কঠিন দুঃসহ জীবনই তাঁকে বরণ করে নিতে হয়েছে। তিনি (রাসূল (সা.) বললেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি মক্কাতে এই যুবককে দেখেছি, তখন তার চাইতে সুদর্শন ও সৌন্দর্যবিলাসী ও উত্তম পরিচ্ছদশোভিত আর কেউ ছিল না। আর আজ শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-কে ভালোবাসতে গিয়ে সে তার জীবনের সকল আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যকে কুরবানি করে দিয়েছে।’

এই মুসআব রা. ছিলেন মদীনার আনসারদের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম শিক্ষক এবং বদরযুদ্ধে মুহাজিরদের পক্ষ থেকে পতাকাবাহী। ওহুদ যুদ্ধে তিনি যখন শাহাদাত বরণ করেন তাঁর কাফনের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়ও ছিল না। কাপড়ের অভাবে ঘাস দিয়ে তাঁর শরীরের নিম্নাংশ ঢেকে দেওয়া হলো। কোনো কোনো বর্ণনামতে রাসূল (সা.) তাঁর মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন, ঈমানদারদের মধ্যে কেউ কেউ আছে, যারা আল্লাহর কাছে তাদের কৃত অঙ্গীকার পরিপূর্ণরূপে পালন করেছে।’ (সূরা আল আহযাব : ২৩)।

এই ওয়াদা পালনকারীদের আরেকজন ছিলেন আনসারদের নেতা সাইয়্যিদুনা সা’দ ইবনে মুয়াজ রা.। আনসার যারা ছিলেন তাঁরা রাসূল (সা.) ও মক্কা থেকে আগত মুহাজিরদের জন্য আতিথেয়তা ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু অচিরেই অন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হলো তাঁদের। তাঁরা কি বিপুল রণসম্ভারে সজ্জিত মক্কার বিরাট সৈন্যদলের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত? বদরযুদ্ধের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত সভায় সা’দ বিন মুয়াজ রা.-এর বলিষ্ঠ ঘোষণা এ রকম- ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.), আমরা আপনার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেছি, আপনার নবুওয়তের সত্যতা ও আপনার আনুগত্যের শপথ নিয়েছি।

যে আল্লাহ তাআলা আপনাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, সেই আল্লাহর শপথ, আপনি যদি সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেন, আমরা তা-ই করব। আমাদের মধ্যে এমন একজনও নেই, যে পেছনে থাকবে। হতে পারে আল্লাহ তাআলা আমাদের মধ্য দিয়ে আপনাকে এমন কিছু দেখাবেন, যা আপনার চোখে আনন্দ ও শীতলতা বয়ে আনবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
মনিরুল ইসলাম ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ২:১৯ এএম says : 0
বিশ্ব জগতের একচ্ছত্র মালিক ও পালনকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য সকল প্রশংসা, যিনি মানব জাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। শেষ নবী হিসাবে আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রেরণ করে তার অনুকরণের মাধ্যমে তাকে ভালবাসার নির্দেশ দিয়েছেন।
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ২:১৯ এএম says : 0
শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক সকল সাহাবায়ে কেরামের প্রতি যারা ছিলেন রাসূলের (সা.) ভালবাসার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় এবং সকল তাবেয়িন ও তাবে তাবেয়িনসহ কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মুসলিম উম্মাহর প্রতি।
Total Reply(0)
গাজী ফজলুল করিম ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ২:২০ এএম says : 0
নিঃসন্দেহে মহানবী (সা.) কে ভালবাসা এবং তার প্রদর্শিত পথ অনুযায়ী জীবন-যাপন করা ঈমানের অংশ। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারি (র.) বুখারি শরীফে স্বতস্ত্র একটি শিরোনাম এনেছেন। যার অর্থ ‘নবী (সা.) এর ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ’।
Total Reply(0)
সত্যের সন্ধানে ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ২:২০ এএম says : 0
শান্তুির ধর্মের লোকেরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক সেই দেশ অশান্ত না করে এরা ছাড়বে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন