শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি মুহাব্বত-২

খালেদ বেগ | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

এমনি অপর একজন সাহাবি হজরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)। তিনি একদিন তাঁর ভৃত্যকে একটি ঘোড়া কিনে আনার জন্য পাঠালেন। ভৃত্যটি তিন শত দিরহামে একটি ঘোড়া ক্রয় করত: অশ্ববিক্রেতাকে মূল্য পরিশোধের জন্য গৃহে নিয়ে আসল। সাইয়্যিদুনা জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) ঘোড়াটিকে দেখার পর বুঝলেন বিক্রেতা ঘোড়াটির মূল্য কম চেয়েছে। তিনি জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি ঘোড়াটিকে চারশ’ দিরহামে বিক্রয় করবে?’ বিক্রেতাসম্মত হলো।

জারীর (রা.) বললেন, ‘পাঁচশ’ হলে কেমন হয়?’ মূল্যবৃদ্ধির এই অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া তিনি অব্যাহত রাখলেন এবং শেষ পর্যন্ত আট শত দিরহাম মূল্যে হজরত জারীর (রা.) ঘোড়াটি কিনে নিলেন। পরে তাঁর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, ‘ঘোড়াটির প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে বিক্রেতার সঠিক ধারণা নেই। আমি তাকে সঠিক মূল্য দিয়েছি মাত্র। কারণ আমি রাসূল (সা.)-এর কাছে অঙ্গীকার করেছি, আমি সর্বদা সকল মুসলমান ভাইয়ের কাছে অকপট ও শুভাকাক্সক্ষী থাকব।’

আরেকজন সাহাবির কথা। যিনি একটি সোনার আংটি পরিধান করতেন। উল্লেখ্য, কোনো মুসলিম পুরুষের সোনা পরিধান করা নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) সাহাবির নিকট থেকে আংটিটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, এটা জাহান্নামের জ্বলন্ত অঙ্গার পরে থাকার সমতুল্য। পরে কেউ কেউ তাঁকে আংটিটা তুলে নিয়ে অন্য কোনো হালাল উপায়ে ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন। কিন্তু তিনি তাদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে বললেন, ‘অসম্ভব, আল্লাহর শপথ! যে বস্ত্ত আল্লাহর রাসূল (সা.) ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন আমি আর তা কিছুতেই গ্রহণ করব না।’

বলাবাহুল্য, মহান সাহাবিদের জীবন ও মনের যে স্বরূপ, এসব তার এক একটি ছোট ছোট জোনাকী সদৃশ উদাহরণ মাত্র। আসলে তাঁদের পুরো জীবনই এই ধরনের দৃষ্টান্ত দ্বারা পরিপূর্ণ। তাঁরা তাঁদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে রাসূল (সা.)-এর নবুওয়তকে মেনে নিয়েছিলেন এবং তাঁরা পরিষ্কার জানতেন, এই মেনে নেওয়ার অর্থ কী এবং সবকিছু জেনেই তাঁদের পুরো জীবন ঈমানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলো। পৃথিবীর যে কোনো বস্তুত ও ব্যক্তির তুলনায় তাঁরা রাসূল (সা.) কে অধিক ভালোবাসতেন।

তাঁরা সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে তাঁর কার্যাবলি লক্ষ করতেন এবং সর্বান্তকরণে শ্রবণ করতেন তাঁর কথা। তাঁরা সর্বক্ষণই তাঁকে স্মরণ রাখতেন। তাঁর প্রতিটি নির্দেশ তাঁরা নিঃশর্তভাবে মান্য করতেন! তাঁরা কখনও এই কথা বলেননি যে, ‘এটা তো সুন্নাহ’ (ফরজ নয়)। অর্থাৎ উপেক্ষা করা যেতে পারে। তাঁরা কখনও এমন প্রশ্ন করেননি যে, এই নির্দেশ কেন দেওয়া হলো। তাঁরা কখনও অজুহাত খুঁজতেন না। ঘরে-বাইরে, ব্যবসাস্থল কি জিহাদের ময়দান, ছোটখাটো ব্যক্তিগত সমাবেশ অথবা রাজদরবার, সর্বত্রই তাঁরা ছিলেন আল্লাহ তায়ালার অনুগত বান্দা, ছিলেন রাসূল (সা.)-এর সর্বাধিক বাধ্য ও অকুণ্ঠ অনুসারী।

এই সাহাবিরা কেউই কখনও রাসূল (সা.)-এর জন্মদিবস পালন বা উদযাপন করেননি। তাঁরা কেউ প্রয়োজনই অনুভব করেননি যে, রাসূল (সা.)-এর জন্য কোনো বিশেষ দিবস বা মাস উৎসর্গ করা উচিত, কারণ তাঁদের পুরো জীবনই ছিল রাসূল (সা.)-এর প্রতি উৎসর্গকৃত। কিন্তু আমাদের জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাহাবিদের অতি সামান্যই সাদৃশ্য আছে। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, কিন্তু তাঁর কথার আনুগত্য করি না।

আমরা মুহাববতের দাবি করি, কিন্তু তাঁকে অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকি। আমরা বিশ্বাসের দাবি করি, কিন্তু আমাদের জীবন পরিচালিত অবিশ্বাসীদের মতো। আমরা সেই সকল বিষয়ে অধিক গুরুত্বারোপ করি, যে সকল বিষয় ছিল সাহাবিদের নিকট গৌণ। আর সেসকল বিষয়কে উপেক্ষা করি, যা ছিল সাহাবিদের নিকট অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা রাসূল (সা.) কে মুহাব্বত করতেন এবং তাঁদের জীবন ছিল এই মুহাববতেরই মূর্ত প্রতীক। কিন্তু আমরা? আমরা কি সৎ ও বিশ্বস্তভাবে এই কথা বলতে পারি যে, রাসূল (সা.) কে যেভাবে ভালোবাসা উচিত, আমরাও তাঁকে সেভাবেই ভালোবাসি?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
salman ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১৭ এএম says : 0
Peyera NOBI, Allah'r Habib, Muhammad (S) Somogro Manib Zatir Jonno RAHAMOT. Allah amad'er sobai k tar Habib k Zibon er chaite o beshi Valo Bashar Towfik dan korun...ameen
Total Reply(0)
Naib Al Emran ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৮ এএম says : 0
আমরা ছিলাম পথহারা, দিশেহারা। হেদায়াত ও সফলতার পথ সম্পর্কে ছিলাম অজ্ঞ। অতপর মহান রাব্বুল আলামীন হেদায়েতের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তিনি এসে আমাদেরকে সত্য-মিথ্যা চিনিয়েছেন। আমাদের নিকট সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন। নাজাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পন্থা শিখিয়েছেন।
Total Reply(0)
Kamrul Sharif ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৮ এএম says : 0
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনিভাবে নবীগণের সর্দার তেমনিভাবে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেও তিনি সকলের চেয়ে মহান। তিনি এমন এক উৎকৃষ্ট সমাজ রেখে গেছেন, যার নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে নেই।
Total Reply(0)
Badal Sikdar ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৯ এএম says : 0
(হে নবী!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। Ñসূরা আম্বিয়া (২১) : ১০৭
Total Reply(0)
Imam Hossain ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৯ এএম says : 0
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জগতের সকলের প্রতি আল্লাহ পাকের রহমত। মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকল মাখলুকই কিয়ামত পর্যন্ত এই মহান রহমতের মাধ্যমে উপকৃত হতে থাকবে।
Total Reply(0)
Kamrul Hassan ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১০ এএম says : 0
মুমিনের জীবনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহব্বতে রাসূল তো ঈমানের রূহ, মুমিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই ইশ্ক ও মহব্বত ছাড়া না ঈমানের পূর্ণতা আসে, আর না তার স্বাদ অনুভূত হয়। আর নিছক ভালবাসাই যথেষ্ট নয়, বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর উপর এই ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালবাসার প্রকাশ ঘটতে হবে।
Total Reply(0)
Billal Hossain ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:১১ এএম says : 0
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৫
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন