মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সন্দেহভাজন আটক মুসলমানদের নিন্দা

স্যার ডেভিড অ্যামেস হত্যাকাণ্ড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ব্রিটিশ এমপি স্যার ডেভিড অ্যামেসকে ছুরি মেরে হত্যার ঘটনায় ২৫ বছর বয়সী আলী হারবি আলীকে সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে আটক করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির মুসলিম নেতৃবৃন্দ। সাউথএন্ডের সমস্ত মসজিদ থেকে প্রকাশিত একটি যৌথ বিবৃতিতে মুসলিমরা একে ‘অনস্বীকার্য নৃশংসতা’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। কারণ পুলিশ বলেছিল যে, এই হামলা ইসলামী চরমপন্থার সাথে যুক্ত হতে পারে।

ধর্মীয় নেতারা বলেন, পাঁচজন সন্তানের জনক ও এমপি স্যার ডেভিড ছিলেন ‘আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন ভাল বন্ধু’ এবং তিনি বিয়ে, মসজিদ উদ্বোধন এবং শহরের প্রথম মুসলিম স্কাউট গোষ্ঠীর উদ্বোধনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ডিন হেইডন, দেশের সবচেয়ে সিনিয়র কাউন্টার টেররিজ অফিসার, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনাটিকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে ‘ইসলামী চরমপন্থার সাথে যুক্ত একটি সম্ভাব্য প্রেরণা’ প্রকাশ পেয়েছে।

শুক্রবার অ্যাসেক্সের লে-অন-সি শহরের বেলফেয়ার্স মেথোডিস্ট চার্চে নিজের নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার সময় হামলাকারীর একাধিক ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৬৯ বছর বয়সী অ্যামেসের। হত্যার সন্দেহে ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে এসেক্স থানার হেফাজতে রাখা হয়েছে। এসেক্স জামে মসজিদ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে, ‘সমস্ত সাউথএন্ড মসজিদের’ পক্ষে মুসলিমরা বলেন যে, তাদের চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা স্যার ডেভিডের পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের সাথে ছিল। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্যার ডেভিডের হত্যা একটি ভয়াবহ নৃশংসতা ছিল, যা একটি উপাসনালয়ের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়েছিল এবং আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ তারা বলেন, ‘এই কাজটি অন্ধ বিদ্বেষের নামে সংঘটিত হয়েছিল এবং আমরা অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার অপেক্ষায় রয়েছি।’

সাউথএন্ডের মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা স্যার ডেভিডকে শ্রদ্ধা জানান। এসেক্স জামে মসজিদের যুগ্ম সচিব রুহুল শামসুদ্দিন এমপিকে ‘আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য ভাল এবং সমর্থনের স্তম্ভ’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘এটি সত্যিই একজন অসাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক সহিংসতা ছিল।’ ইউকেআইএম সাউথএন্ড মসজিদের ইমাম ইফতিখার উল হক এবং ইউকেআইএম সাউথএন্ড মসজিদের সভাপতি ডক্টর আরশাদ ঘুরি বলেন, স্যার ডেভিড ‘সর্বদা সহজলভ্য, তিনি সম্প্রদায়ের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন এবং সর্বদা সমর্থন দেয়ার জন্য ছিলেন’। ফাইজানে মদিনা মসজিদ সাউথএন্ডের সেক্রেটারি ইবরার আজম বলেন, স্যার ডেভিডের মৃত্যুতে তিনি ‘শোকাহত’।

এদিকে, ইরানের একটি বিরোধী দল স্যার ডেভিডকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে, তাকে ‘মানবাধিকার চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘অনেক স্বৈরশাসকের শত্রু’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। হোসেন আবেদিনী ইরানের জাতীয় প্রতিরোধ কাউন্সিলের বেশ কয়েকজন সদস্যের মধ্যে ছিলেন যিনি এমপি এর চার্চের কাছে ফুল এবং ফ্রেমযুক্ত ছবি রেখেছিলেন যেখানে তিনি মারা গিয়েছিলেন। আবেদিনী বলেন, ‘ইরানের জনগণ, ইরানে সংঘটিত বিদ্রোহ, ক্যাম্প আশরাফে ইরানি শরণার্থীদের সমর্থন করার ক্ষেত্রে স্যার ডেভিডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।’ সাউথেন্ড কাউন্সিলর জন ল্যাম্ব বলেন, স্যার ডেভিড ‘অনেক শরণার্থীকে সাহায্য করেছিলেন’। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে কিছু ইরানি আছেন, তিনি প্রায়ই তাদের নিজের দেশে এমনকি পরিবার এবং সমস্যার জন্য সাহায্য করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা স্যার ডেভিডকে সম্মান করত এবং এ ঘটনায় তারা আমাদের মতই শোকাহত।’

এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, ব্রিটিশ নাগরিক আলী হারবি সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০ এর অধীনে লন্ডনের একটি থানায় আটক আছেন আর কর্মকর্তারা ২২ অক্টোবর পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পাবেন। এই হামলার ঘটনায় আর কেউ জড়িত ছিলেন না বলে বিশ্বাস পুলিশ কর্মকর্তাদের। কয়েক বছর আগে আলীকে কাউন্টার-টেরোরিস্ট প্রিভেন্ট স্কিমের আওতায় নেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। এটি যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবাদ-প্রতিরোধী একটি কর্মসূচী। মানুষকে মৌলবাদী হওয়া থেকে বিরত রাখাই এই কর্মসূচীর উদ্দেশ্য। শিক্ষক, সাধারণ নাগরিক, এনএইচএস ও অন্যরা এই কর্মসূচীর জন্য পুলিশের স্থানীয় প্যানেলে কোনো ব্যক্তির নাম দিতে পারে। তারপর কীভাবে তার জীবনে হস্তক্ষেপ করতে হবে সমাজকর্মী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে এই স্কিমে যুক্ত হওয়া ফৌজদারি কোনো দণ্ড নয় বরং স্বেচ্ছামূলক। সোমালী বংশোদ্ভুত আলী ওই কর্মসূচীতে দীর্ঘ সময় ছিলেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি কখনো ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভ এর আনুষ্ঠানিক ‘আগ্রহের বিষয়ও’ ছিলেন না।

অ্যামেস চার কন্যা ও এক পুত্রের জনক ছিলেন। তার স্মরণে শনিবার রাতে লে-অন-সিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। প্রথমে খুনের সন্দেহভাজন হিসেবে আলীকে আটক করা হয়েছিল, কিন্তু পরে শুক্রবার রাতে তাকে সন্ত্রাসবাদ আইনে আটক করা হয়। শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটরা আলীকে ২২ অক্টোবর, শুক্রবার পর্যন্ত হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন গোয়েন্দাদের।

এক বিবৃতিতে মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় যে ছুরিটি ব্যবহৃত হয়েছিল ঘটনাস্থল থেকে সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সারাদিন ধরে লন্ডনের তিনটি ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ দিন অ্যামেসের মৃতদেহের ময়নাতদন্তও হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সূত্র : ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Ohid Bin Younous ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৪ এএম says : 0
বাংলাদেশে হলে কত বড় বড় ডায়লগ শুনাতো এই যুক্তরাজ্য
Total Reply(0)
Amal Sharma ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৫ এএম says : 1
কিছু মহা উদ্মাদের কারণে পৃথিবীর অনেক মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্তল টুকুও শেষ হয়ে যাচ্ছে!
Total Reply(0)
Ahmed Mamun Jibon ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৫ এএম says : 0
হতভাগ হয়ে গেলাম। পৃথিবীর উচিত মানুষের জন্য ভালোবাসা তৈরি করা।
Total Reply(0)
Sadeq Hossain ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৬ এএম says : 0
গণতন্ত্রের দেশেও দেখি শান্তি নেই। তারা ঠিকই অন্যদের ছবক দিবে।গণতন্ত্রের পাঠ শিখাবে।
Total Reply(0)
আবু বকর রাসেল ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০৬ এএম says : 0
যে দেশে এম পি মন্ত্রী সন্ত্রাসীদের হামলায় মারা যায় সে দেশ কি করে অন্য উপদেশ দিতে পারে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন