শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কাবা শরীফ ও ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়ার অভিযোগে পীরগঞ্জের জেলে পল্লীতে আগুন: ৪২ জন গ্রেফতার

রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ১২:২৫ পিএম | আপডেট : ৬:০২ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০২১

পবিত্র কাবা শরিফ এবং ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়ার অভিযোগে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু জেলে পল্লীর বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে উত্তেজিত জনতা। এতে একটি মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর ও ২০টি ঘর পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা গেছে, রংপুরের পীরগঞ্জের বড় করিমপুর মাঝিপাড়ার এলাকার পরিতোষ সরকার নামের ১৬/১৭ বছর বয়সী এক যুবক পবিত্র কাবা শরীফ এবং ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয় এবং সেই পোস্টটি নিমিষেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় হাজার হাজার লোক জড়ো হতে থাকে এবং তারা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভে নামেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঐ হিন্দু জেলে পল্লীতে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর করে। এসময় উত্তেজিত জনতা হিন্দুদের কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে সেখানকার ১টি মন্দিরসহ প্রায় ২০টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌছালেও উত্তেজিত মানুষের ভিড়ে দ্রুত আগুন নেভাতে সক্ষম না হওয়ায় অনেকের বাড়িঘরসহ আসবাবপত্র গবাদিপশু, মন্দিরের অবকাঠামো পুড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। এরপর থেকে সেখানে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি মোতায়েন রাখা হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের বটের হাট পাড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বি ১৬/১৭ বছরের এক ছেলে রোববার বিকেলে ফেসবুকে একটি পোস্টে আপত্তিকর কমেন্ট করে। তা মুহূর্তেই আশপাশের গ্রামের মুসল্লিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কয়েক’শ বিক্ষুব্ধ জনতা ওই কিশোরের বাড়িতে উপস্থিত হন। খবর পাওয়া মাত্র সন্ধ্যায় পুলিশ ওই কিশোরের বাড়ি যায়। সেখানে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠায়। কিন্তু হঠাৎ রাত ৯টার দিকে কয়েক হাজার লোক লাটি-সোটা নিয়ে ওই কিশোরের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ক্ষেতের ওপারে স্থানীয় মসজিদে জড়ো হন। পরে গ্রামের কসবা উত্তরপাড়ায় প্রবেশ করে হামলা চালায়। এ সময় লোকজন আতঙ্কে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে গেলে উত্তেজিত জনতা কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন মুহুর্তেই একটি বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের ভীড়ের কারনে ফায়ার সার্ভিসের ঠিকমত কাজ করতে না পারায় ১৮/২০টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব মোতায়েন করা হলে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।
পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজ দেবদাস ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়, পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এএসএম তাজিমুল ইসলাম শামীম আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২জন কে আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, রাতে তাদের অনেকেই খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় হৈ-হুল্লোড় করে আকস্মিক হাজার খানেক লোক লাঠি-শোটা নিয়ে তাদের পাড়ায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করতে থাকে। এ সময় গোটা পাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তারা পালিয়ে পার্শ্ববর্তী ধান ক্ষেতসহ বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড়ে আশ্রয় নেয়। পরে তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে ঘরের সমস্ত মালামাল, গবাদিপশু পুড়ে যায়। এতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। তারা দ্রুত তাদের ক্ষতিপুরণ প্রদানসহ পুর্নবাসনের দাবী জানিয়েছেন।
পক্ষান্তরে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন জানিয়েছেন, ফেসবুকে আপত্তিকর পোষ্ট দেয়ায় সন্ধ্যায় শত শত লোক ঐ ছেলের বাড়িতে জড়ো হতে থাকে। এ সময় পৌর মেয়রসহ পুলিশের লোকজন তাদের শান্ত করে ফেরত পাঠায়। এর পর রাত ৯টার দিকে আকস্মিকভাবে হাজার হাজার উত্তেজিত জনতা পাশের জেলে পল্লীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ সময় কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয় এটা এখন পর্যন্ত অজানা। তারা আরও জানান, আমরা বছরের পর বছর ধরে এই গ্রামে বসবাস করে আসছি। হিন্দু-মুসলমান সবাই আমরা সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছি জন্মের পর থেকে। কিন্তু গত রাতের ঘটনায় আমরাও হতবাক হয়েছি। যারা এধরনের কাজে উস্কানী দিয়েছে এবং এহেন ন্যাক্কার জনক ও অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যে ধর্মেরই হোক তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর এই বর্বরোচিত ঘটনায় পীরগঞ্জ থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের সদস্য, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটা ইউনিট ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরও বলেন, এঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। যে ছেলেটির নামে ফেসবুকে কমেন্টের অভিযোগ এসেছে সে পলাতক রয়েছে। সেসহ এঘটনায় জড়িত সকলকে দ্রুত আইনের আওয়তায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।
বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব ভুঁইয়া বলেন, এই ঘটনায় পুলিশ বিজিবি ফায়ার সার্ভিস আন্তরিক ভাবে কাজ করেছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারের ক্ষতির পরিমানসহ তালিকা করে পূর্নবাশনসহ যাবতীয় সহায়তা করতে কাজ শুরু করেছি।
এছাড়াও তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারগুলোর মাঝে চাল ডাল বস্ত্র ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাত ২টার দিকে রংপুর নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। ঘটনার প্রতিবাদে এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবীতে সোমবার সকাল ১১টায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানব বন্ধন ও সমাবেশ করেছে।
এসপি বিপ্লবসহ এসপি পদমর্যাদার ৭ কর্মকর্তাকে বদলি
এদিকে, পীরগঞ্জের জেলে পল্লীতে হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রংপুর জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকারসহ বাংলাদেশ পুলিশের ৭ পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ অধিশাখার উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ বদলি আদেশ দেয়া হয়।
রংপুর জেলার এসপি বিপ্লব কুমার সরকারকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), পুলিশ অধিদপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরীকে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার, ফেনী জেলা পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবীকে পুলিশ অধিদপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক, পুলিশ অধিদপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ফেনী জেলা পুলিশ সুপার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Mehedi Masud ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫২ পিএম says : 0
অপরাধীর বিচার হোক।। নিরীহ মানুষ রক্ষা পাক।। একেক টা ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।
Total Reply(0)
Nadim Rana ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৫৯ পিএম says : 0
যা হচ্ছে গোটা জাতির জন্য লজ্জাকর। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি
Total Reply(0)
Zahid Hossain ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:০৩ পিএম says : 0
অমানবিক এবং জঘন্য কাজের নিন্দা জানাই। মানবতা ও বিবেকবান মানুষ কখনও এধরনের জঘন্য অপরাধ করতে পারে না।
Total Reply(0)
Jayed Uddin ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:০৪ পিএম says : 0
এসব ঘটনার পিছনে মাস্টার মাইন্ড কারা তাদেরকে আইনের আওতায় আনা জরুরী। নিরীহ মানুষ গুলো কেন সবসময় নির্যাতনের শিকার হয়।
Total Reply(0)
Johan Raju ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:০৫ পিএম says : 0
ইসলাম অবমাননার কারনেই প্রতিবার দেশে সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছে। ইসলাম অবমাননা ও কটুক্তি বন্ধ করা হোক। আইনের আওতায় আনা হোক
Total Reply(0)
SH Nirob ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:০৫ পিএম says : 0
নিরিহ হিন্দুদের ঘর বাড়ি পোড়ানো ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না, যারা এইসব করছে তারা কখনই মুসলিম হতে পারে নাহ।
Total Reply(0)
Shavan Mahmud ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:০৬ পিএম says : 0
ইসলাম এই ধরনের কাজ পছন্দ করে না ‌।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:২৫ পিএম says : 0
যে বেকতি মন্তব্য করেছে তাকে ধরা জরুরি তাকে কে ইন্ধন দিয়েছে,কাবা শরিফের এবং মুসলমানদের ধর্মে আঘাত করার জন্য,কিন্তু ঘর বাড়ি জালিয়ে দেওয়া হবে কি জন্য,ঘর বাড়ি অন্যায় করে নাই,এই কাজটি মোটেই গ্রহন যোগ্য নয়,সবাই কি অন্যায় করেছে,এইগুলি কি কে এই মছিবত আমাদের মাঝে তৈরি করলেন, সবাই শান্ত থাকতে আকুল আবেদন করিতেছি,।
Total Reply(0)
হামজা ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১৯ পিএম says : 0
প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মুরাদ প্রতিনিয়ত ইসলাম-বিদ্বেষী কথাবার্তা বলে মানুষের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করছে বিদ্বেষভাব তৈরি করছে এবং তার কথাবার্তায় উস্কানিমূলক বক্তব্য রয়েছে তার এ সকল বক্তব্য এখনই বন্ধ করে তার বিচার হওয়া উচিত। সরকারের কাছে বলব আপনাদের জনপ্রিয়তা নষ্ট করছে ডাক্তার মুরাদ এর মতো এজাতীয় কিছু খারাপ মানুষ। তাদেরকে আইনের আওতায় আনুন তাদের বিচার করুন তাহলে দেশ আরো উন্নত হবে। সম্প্রীতি আরো ভালো হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন