বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আদিল রশিদ না ‘শিশির’-ব্যবধান গড়েছে কে?

প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানের বল খেলতে কি ভোগাই না ভুগেছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৭ উইকেট পেয়েছেন ওই লেগি। তবে উইকেট প্রতি খরচা তার মাত্র ১৫.৮৫! ওভারপ্রতি খরচা ৩.৭০ ! লেগ স্পিনার রশিদ খানের বল খেলতে যখন এতোটা ভুগেছে, তখন ইংল্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে সামাল দিবে কিভাবে? ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এটাই ছিল প্রশ্ন। যে প্রশ্নে টীম ম্যানেজমেন্টের উত্তর ছিল একটাই, ‘রশিদ খানকে খেলেই যে আদিল রশিদকে মোকাবেলার প্রস্তুটিটা হয়ে গেছে।’ কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যে লেগ স্পিনের সামনে অসহায়, ফ্লিপার, গুগলি বুঝে উঠতে পারে না ঠিক মতোÑতিন ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে সেটাই যে জানিয়ে দিয়েছেন আদিল রশিদ। বাংলাদেশের তিন স্পিনার সাকিব, মোসাদ্দেক, নাসির-এই তিনজনের উইকেট সমস্টি যেখানে ৭, সেখানে একাই ছড়ি ঘুরিয়েছেন আদিল রশিদ ! জানেন, ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৭ ইনিংসে ৪ বার পেয়েছেন ৪টি করে উইকেটের দেখা, যার মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ ম্যাচে ২ বার ৪টি করে উইকেট পেয়েছেন এই লেগ স্পিনার! সিরিজের প্রথম ম্যাচে তার ২টি স্পেলে (৫-০-৩৪-২ও ৫-০-২৫-২) ইংল্যান্ডের ৩১০’র চ্যালেঞ্জে ২১ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ দল। সিরিজের শেষ ম্যাচে তার টানা ১০ ওভারের স্পেলই (১০-০-৪৩-৪) বাংলাদেশের প্রত্যাশিত ৩শ’ স্কোরের পথে তৈরি করেছে প্রতিবন্ধকতা!
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২২৬’র বেশি চেজ করে জেতার অতীত নেই। সেই মাঠেই ২৭৮ চেজ করে ইংল্যান্ড ১৩ বল হাতে রেখে জিতেছে। ৭২ ঘন্টা পীচ ঢেকে রাখার পর যে মাঠে ৫০ ওভারের ম্যাচ আয়োজন ফেলে দিয়েছিল আয়োজকদের কপালে দূর্ভাবনার ভাঁজ, সেই মাঠে খেলা শুরু করতে এক মিনিটও বিলম্ব হয়নি! ভ্যাপসা উইকেটে যেখানে রাজত্ব করার কথা পেস বোলারদের, সেখানে ইংল্যান্ড স্পিনে ইনিংসের মাঝপথে রানের চাকা সøথ হয়েছে। শেষ ১০ ওভারে মুশফিকুর-সাব্বিরের ব্যাটিংয়ে৭৯ রান যোগ হলেও ৩১ থেকে ৪০Ñএই ১০ ওভারে ৪০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ ৩ উইকেট। সেখানে এই পর্বে ইংল্যান্ড ৬২ রানে হারিয়েছে ২ উইকেট। খালি চোখের এই ব্যবধানটাই সামনে এনেছেন মাশরাফিÑ‘এই ম্যাচ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন আক্ষেপ নেই। ৩১তম ওভার থেকে হঠাৎ করে ছন্দপতন হলো। ওই ১০টা ওভার আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। ক’টা উইকেট আমরা হারিয়েছি। ওই সময়টা আমরা ঠিকমতো খেলতে পারিনি। উইকেটে যেমন টার্ন করছিলো, খেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। এছাড়া এই ম্যাচে কোন অপূর্ণতা নেই।’
২০১০ সাল থেকে ঘরের মাঠে ডে-নাইট ম্যাচে বাংলাদেশ স্পিনারদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে শিশির। শিশির পড়লে বল গ্রিপিংয়ে সমস্যায় পড়ে স্পিনাররা। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচেও সেই শিশির ফ্যাক্টরকে সামনে এনেছেন মাশরাফিÑ ‘২৭৭ অনেক বড় রান। আমাদের বোলিংয়ের সময়ে যতটুকু শিশির পড়েছে, তার অর্ধেকও যদি পড়তো ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের সময়ে, তাহলে অন্যরকম ম্যাচ হতো। যে পরিমাণ টার্ন পাচ্ছিলো আদিল রশিদ, মঈন তাতে আমরাও দারুণ কিছুর আশা করেছিলাম। আমাদের দলে বাঁ হাতি-ডানহাতি যে স্পিন কম্বিনেশন ছিল, শিশির না পেলে একটা পারফেক্ট ম্যাচ হতে পারতো।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে দারুণ কিছু’র স্বপ্ন দেখিয়ে হারের কস্টটা ভুলতে পারছেন না মাশরাফিÑ ‘প্রথম ম্যাচটা আমরা যদি ক্যালকুলেটিব খেলতে পারতাম তাহলে সিরিজের ফল অন্য কিছু হতে পারতো। প্রথম ম্যাচটা আমরা ভালো ভাবে শেষ করলে আজকে আমাদের এমন হতো না।’ টসে হারটাকে শেষ ম্যাচের ফল নির্ধারক বলে মনে করছেন তিনিÑ ‘টসে জিতলে আজ সংবাদ সম্মেলনে আমাকে আসতে হতো না, ওরা আগে আসতো।’
সিরিজের প্রতিটি ম্যাচেই পড়েছে ক্যাচ। শেষ ম্যাচেও এই অপবাদ থেকে মুক্তি পায়নি বাংলাদেশ ফিল্ডাররা। তাসকিনের বলে ¯িøপে ইমরুল ওকসের ক্যাচ ছেড়ে দেয়ায় সেখানেই রনে ভঙ্গ দিতে হয়েছে। এটাও আফসোসে পোড়াচ্ছে মাশরাফিকেÑ ‘ওই সময় ক্যাচটা হলে ভালো দুটি বলে দুটি উইকেট চলেও যেতে পারতো। হয়তো স্টোকসের উপর চাপটা আরও বাড়তো। ক্যাচটা ধরতে পারলেও হয়তো আরও একটা সুযোগ পাওয়া যেত।’ প্রথম ম্যাচ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে ব্যাটসম্যানরা সøগে একটার পর একটা উইকেট দিয়ে এসেছেন বলে মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন মাশরাফি। শেষ ম্যাচে শেষ পর্যন্ত লড়তে না পারার কারণটা নাকি মানসিক, তা মনে করছেন মাশরাফি-‘মানসিক ব্যাপারটা ভালো রাখা উচিত। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি খেলা শেষ হওয়ার আগেই ছেড়ে না দেওয়া। আমার কাছেই বলাটা আসবে, এ প্রতীক্ষায় থাকতে হবে ফিল্ডারকে।’ এমন ম্যাচে ৪ রানের জন্য ইমরুল, ৫ রানের জন্য তামীম, ১ রানের জন্য সাব্বিরের ফিফটি না পাওয়াও কি হতাশার নয়?

সিরিজের সেরা ৫
ব্যাটসম্যান ম্যাচ/ইনি. রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
ইমরুল কায়েস (বাংলাদেশ) ৩/৩ ১৬৯ ১১২ ৫৬.৩৩ ৮৬.৬৬ ১/০
বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড) ৩/৩ ১৪৮ ১০১ ৭৪.০০ ৯৬.৭৩ ১/০
জস বাটলার (ইংল্যান্ড) ৩/৩ ১৪৫ ৬৩ ৪৮.৩৩ ১১৯.৮৩ ০/২
বেন ডাকেট (ইংল্যান্ড) ৩/৩ ১২৩ ৬৩ ৪১.০০ ৮০.৯২ ০/২
মাহমুদুল্লাহ (বাংলাদেশ) ৩/৩ ১০৬ ৭৫ ৩৫.৩৩ ৮৭.৬০ ০/১

বোলার ম্যাচ/ইনি. উইকেট সেরা গড় ইকো. ৪/৫
আদিল রশিদ (ইংল্যান্ড) ৩/৩ ১০ ৪/৪৩ ১৪.৫০ ৫.০০ ২/০
মাশরাফি মোর্তুজা (বাংলাদেশ) ৩/৩ ৮ ৪/২৯ ১৬.৫০ ৪.৬০ ১/০
জ্যাক বল (ইংল্যান্ড) ৩/৩ ৭ ৫/৫১ ১৯.৮৫ ৫.৩৮ ০/১
শফিউল ইসলাম (বাংলাদেশ) ৩/৩ ৪ ২/৫৯ ৩৯.২৫ ৫.৮৫ ০/০
তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ) ৩/৩ ৩ ৩/৪৭ ৪৩.৬৬ ৫.৬৯ ০/০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন