মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা.)

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বনবী, করুণার ছবি রাহমাতুল্লিল আলামিন। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের আগেই পিতা আব্দুল্লাহ মারা যান এবং মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি তাঁর মা আমিনাকেও হারান। পিতৃমাতৃহীন শিশু মুহাম্মদ (সা.) দাদা আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকেন। তিনি নাতির নাম রাখেন মুহাম্মদ অর্থাৎ প্রশংসিত। বাল্যকাল থেকে অতিশয় সৎ, বিনয়ী ও বিশ্বাসী ছিলেন বিধায় তাঁকে আলআমিন উপাধি প্রদান করা হয়। চল্লিশ বছর বয়সে মক্কার অনতিদূরে হেরা নামক পর্বত গুহায় মহান আল্লাহর স্মরণে ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় তাঁর কাছে সৃষ্টিকর্তার বাণী নিয়ে আসেন ফেরেস্তা জিব্রাইল (আ.)। সেই যে আরম্ভ, এরপর অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের কণ্টকময় পথ অতিক্রম করে দীর্ঘ তেইশ বছরে শেষনবী, বিশ্ব রসুল মুহাম্মদ (সা.)-র মাধ্যমে আল্লাহর বাণীসমূহের পূর্ণাঙ্গ কিতাব পবিত্র কুরআন মানবজাতিকে সুপথ প্রদর্শনের জন্য এ ধরায় অবতীর্ণ হয়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ন্যায়, সাম্য, মৈত্রী, মানবতা ও শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলাম।
আজ সারা পৃথিবীর সাতশ সত্তর কোটি মানুষের চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ পঁচিশ শতাংশ মানুষ বিশ্বনবীর প্রচারিত শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী। পৃথিবীতে বোধহয় এমন কোনও দেশ নেই যেখানে ইসলামের বাণী পৌঁছায়নি। সঙ্গতকারণে দুনিয়াব্যাপী ইসলাম বহু চর্চিত ধর্ম। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একজন খ্রিস্টান গবেষক মাইকেল এইচ হার্ট একদল গবেষক নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষের খোঁজ করতে গিয়ে আল্লাহর নবী পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী একশ’ ব্যক্তির তালিকার প্রথম স্থান দিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেন। তার রচিত ঞযব ১০০ :The 100 : A Ranking of the Most influential Persons in History বইটি ১৯৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও ১৯৯২-এ পুনঃপ্রকাশিত হয়। সে-বারও মাইকেল হার্ট হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্বের একশ সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় প্রথম স্থানে রেখেছেন। তাঁর প্রকাশিত পুস্তকের একশজনের প্রথম দশজন হলেন- (১) মুহাম্মদ, (২) আইজাক নিউটন, (৩) যিশু খ্রিস্ট, (৪) গৌতম বৌদ্ধ, (৫) কনফুসিয়াস, (৬) সেন্ট পল, (৭) স্তাই লুন, (৮) জন গোটেনবার্গ, (৯) ক্রিস্টেফার কলম্বাস, (১০) আলবার্ট আইনস্টাইন।
যে মানুষটি মরু আরবে সভ্যতার আলোবর্জিত একটি স্থানে অনাথ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে কোনও প্রথাগত শিক্ষাদীক্ষা লাভের সুযোগ পাননি এবং ফলস্বরূপ যাকে উম্মি (নিরক্ষর) বলে অভিহিত করা হতো, সেই মানুষকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষের মর্যাদা প্রদান যে বিশেষভাবে ভাবার বিষয়, তা বলাই বাহুল্য। লেখক মাইকেল হার্ট তাঁর বইয়ে লিখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম প্রথমে রাখায় অনেকের কাছে তা আশ্চর্য মনে হতে পারে কিন্তু লেখকের মতে, ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে সর্বাধিক সফল ব্যক্তিত্ব। আরবের মরুর দেশে অতি সাধারণ জায়গায় জন্মলাভ করে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মের প্রচারক হয়ে বিশ্বের দিকে দিকে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর চৌদ্দশ’ বছর পর আজও তিনি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রভাব বিস্তার করে আছেন। সারা পৃথিবীতে বোধহয় এমন কোনও মানুষ জন্মায়নি যার নাম প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। দুনিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম আর উত্তর থেকে দক্ষিণ এমন কোনও অঞ্চল বা দেশ নেই যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নাম মানুষের মুখে প্রতিদিন উচ্চারিত হয় না। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মসজিদে রোজ পাঁচবার আজানে মুহাম্মদুর-রসুলুল্লাহ মোয়াজ্জিনের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়।
লেখক মাইকেল হার্ট তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন, আরবের মক্কা শহর ছিল সমকালীন বিশ্বে একটি পশ্চাৎপদ এলাকা, যে স্থানটি থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকলা এবং শিক্ষাদীক্ষার কেন্দ্র অনেক দূরে ছিল। জন্মের আগে বাবাকে হারিয়ে তিনি অনেকটা অসহায় অবস্থায় দরিদ্র পরিবেশে প্রতিপালিত হন। পঁচিশ বছর বয়সে চল্লিশ বছর বয়সের খাদিজা নামের এক ধনবান বিধবা মহিলাকে বিয়ে করলে তাঁর আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু ধন সম্পদের প্রতি তাঁর কোনও আসক্তি ছিল না বরং নিভৃতে বিশ্বপ্রভু আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে ভালবাসতেন। চল্লিশ বছর বয়স অবধি হেরা গুহায় স্বর্গীয় বাণী লাভের আগে তাঁর তেমন বিশেষ কোনও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটেনি যদিও সততার জন্য স্থানীয় মানুষরা তাঁকে আলআমিন উপাধি দিয়েছিলেন।
প্রথম তিন বছর তিনি শুধু আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ইসলাম প্রচার সীমাবদ্ধ রাখেন। এরপর অনুসারীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি ঘটলে ৬১৩ সালে তিনি প্রকাশ্যে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু মক্কার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাঁর কাজের পথে বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ৬২২ সালে তিনি জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে তিনি অনেকটা শক্তি সঞ্চার করে মদিনায় একটি সর্বজনীন শাসন ব্যবস্থার প্রচলন করে নিজেকে একজন সুশাসক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু মক্কার বিরোধীরা তাঁর এ নব ধর্ম প্রচারে বাধা দিতে মদিনা আক্রমণ করলে তিনি নিজের ও অনুসারীদের সুরক্ষার জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হন ও জয়লাভ করেন। এভাবে কয়েকটি যুদ্ধের পর ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রায় দশ সহস্র অনুসারী নিয়ে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করে দুনিয়ার ইতিহাসে ইসলাম ধর্মকে স্থায়িত্ব দেন ও আরবে ইসলামি শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি তাঁর চরম শত্রুদেরও ক্ষমা করে দিয়ে মানবতার ইতিহাসে অক্ষয় কীর্তি রেখে যান। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুকালে আরবের চতুর্দিকে ইসলামের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে।
আরবের বেদুইনরা সাহসী হলেও উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে তাদের মধ্যে ঐক্য ছিল না। প্রায়শ গোত্রে গোত্রে হানাহানি লেগেই থাকত। এই প্রথম তারা হযরত মুহাম্মদের নেতৃত্বে এক এবং অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস রেখে একের পর এক রাজ্য বিজয় করে আরব ও তার পাশাপাশি এলাকায় ইসলামি সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটাল। তাঁর ইন্তেকালের পর খলিফারা দ্রুতগতিতে ইসলাম প্রচার ও ইসলামি সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটান। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে আরব বাহিনী উত্তর আফ্রিকা পেরিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের পারে পৌঁছে যায়। পূর্বদিকে তাঁরা পারস্য জয় করে ভারতের প্রান্তে এসে উপস্থিত হয়। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে সামান্য একটি বেদুইন জাতি ভারত সীমান্ত থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এরা যেখানে গেছে সেখানে দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।
অনেকের মনে আসতে পারে, এ তো তরবারির বলে ধর্ম প্রচার। ইতিহাস সাক্ষী, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কোন দিন কাউকে তরবারি দিয়ে আঘাত করেননি, যদিও আত্মরক্ষার্থে তাঁর কাছে তরবারি ছিল। একজন লোক একটি তরবারি নিয়ে আধা বিশ্ব জয় করে নিল কীভাবে! এটা তরবারি নয়, বরং ইসলামের শান্তি, ভালবাসা, সমতা ও সৌভ্রাতৃত্বের শিক্ষা। ফলস্বরূপ গড়ে উঠে মুসলিম বিশ্ব। এ যাত্রা এখনও অব্যাহত আছে বলা যায়। আত্মরক্ষার্থে শিখ ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের সঙ্গে অস্ত্র রাখে, অনেক সাধু-সন্ন্যাসি সঙ্গে ত্রিশুল রাখে, আর মুসলিম সুফিদের হাতে বড় জোর একটি লাঠি থাকে। এ লাঠির সঙ্গে কিন্তু হিংসা বা জবরদস্তির কোন সম্পর্ক নেই।
সারা বিশ্বে যেখানে মুসলিমদের তুলনায় খ্রিস্টানদের সংখ্যা অনেক বেশি, স্বাভাবিকভাবে মাইকেল হার্টের তালিকায় যিশু খ্রিস্টের নাম প্রথম স্থানে থাকার কথা, এছাড়া তিনি নিজেও একজন খ্রিস্টান কিন্তু লেখক হার্ট যুক্তি দিয়ে তা খন্ডন করেছেন তাঁর বইয়ে। ইসলামের প্রতিষ্ঠা-প্রচার-প্রসারে যেভাবে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবদান ছিল, খ্রিস্টধর্মের ক্ষেত্রে যিশু খ্রিস্টের সে ধরনের অবদান ছিল না। কারণ, সেন্ট পলের মাধ্যমে বিশ্বে খ্রিস্টধর্মের প্রকৃত প্রসার হয়েছিল। অন্যদিকে, মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কুরআন পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে, যা আজও একশ’ শতাংশ অবিকৃত রয়েছে এবং বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ে স্থান দখল করে আছে। তিনি ইসলামের তাত্ত্বিক ও নৈতিক মূল নীতিসমূহের প্রবর্তক। ইসলামের ছয়শ’ বছর আগে প্রচারিত হলেও খ্রিস্টবাদের প্রভাব ইসলামের মতো এত গতিশীল নয়। বস্তুতপক্ষে হযরত মুহাম্মদ (সা.) যুগপৎ ধর্মীয় ও মানবতাবাদী নেতা হিসেবে ইসলামের বিকাশ ও বিস্তারের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বাধিক প্রভাবশালী যথার্থ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আজও জগতবাসীর কাছে বরেণ্য। সপ্তম শতাব্দীর আরবদের বিজয় অভিযান আজ পর্যন্ত মানবসভ্যতার ইতিহাসে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তা একাধারে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবে মানব ইতিহাসে হযরত মুহাম্মদ (সা.) তুলনাহীন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
শুধু মাইকেল এইচ হার্ট কেন, দেশ-বিদেশের অসংখ্য পন্ডিত পবিত্র কুরআন তথা ইসলামের সুমহান শিক্ষায় অভিভূত হয়ে শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রচারিত ধর্মের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। কানাডার গণিত বিশেষজ্ঞ গ্যারি মিলার কুরআনের জ্ঞান ভান্ডারের আলোকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন। তিনি রচনা করেন ‘দ্য এমেইজিং কুরআন’। এভাবে ফরাসি বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলি কুরআন নিয়ে রচনা করলেন ‘দ্য বাইবেল, দ্য কুরআন অ্যান্ড সায়েন্স’। এভাবে আরও অনেক জ্ঞানী বিজ্ঞানী পবিত্র কুরআন নিয়ে গবেষণা করে নিজেদের জীবন ধন্য করেছেন। যেমন জামাইকার বিলাল ফিলিন্স, সুইজারল্যান্ডের তারিক রামাদান, কানাডার জামাল বাদায়ুই, ইনগ্রিদ মাটসন, অধ্যাপক কিথ মুরে, সাবির আলি, জসুয়া ইভান, ব্রিটেনের কারেন আমস্ট্রং, আব্দুর রহিম গ্রিন, উইলিয়াম পিকথল, ড. জঈদ গাজায়ি, ড. সারা নেলসন, ড. আব্দুল হাকিম মুরাদ, ইদ্রিস তৌফিক, আয়েশা জান, আমেরিকার আমিনা এসিমিলি, ড. লরেন্স ব্রাউন, নূর সাদেহ, ডানেল বার্গিসন, শেখ আম্মার এমনিতি, রবার্ট বাউম, ড. জিরান্ড ডির্ক, ইউসুফ ইস্তে, আব্দুর রহিম কার্তে, জসুয়া ইভানস, ড. জ্রেফি ল্যাং, জাইদ শাকির মার্গারেট মার্কাস, সিরাজ ওয়াহহাজ, সুয়াইব ওয়েব, খালিদ ইয়াসিন, হামদা ইউসুফ হ্যানসন, মাইকেল এস্তনি, করিমা আলতমায়ের, জার্মানির পিরে ভগেল, তুরস্কের হালুক নূরবাকি, ফ্রান্সের আব্দুল ওয়াহিদ ইয়াহিয়া, ভারতের ড. এনকে সিংহ প্রমুখ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেক জ্ঞানী বিজ্ঞানী পবিত্র কুরআনের উপর গবেষণা করে নিজেদের জীবন ধন্য করেছেন।
আসলে পবিত্র কুরআন এমন একটি ধর্মগ্রন্থ, যা নিজের বিশ্বস্ততা নিয়ে দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছে ‘আল-কুরআন সেই কিতাব যাতে কোনও সন্দেহ নেই’ (০২:৩২)। এমনকি কুরআন নিজেকে আল্লাহর বাণী বলে দাবি করে মানবজাতির প্রতি চ্যালেঞ্জ করে ঘোষণা দিয়েছে, ‘আর যদি তোমরা সন্দেহ পোষণ কর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি আমার বান্দার প্রতি, তা হলে তোমরা এর মতো একটি সুরা নিয়ে এস। এমনকি ডেকে নাও তোমাদের সাহায্যকারীদেরও এক আল্লাহ ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’ (২:২৩)। ‘আর যদি তোমরা করতে না পার এবং কখনও তা করতে পারবে না, তা হলে সে আগুনকে ভয় কর...’ (২:২৪)। এভাবে আরও কয়েকটি আয়াতে কুরআনের মতো আয়াত রচনা করতে পবিত্র এ গ্রন্থ মানবজাতিকে আহ্বান জানিয়েছে, যা আজ পর্যন্ত কেউ মোকাবিলা করতে পারেনি। আসলে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে মহান আল্লাহ বিশ্বমানবের জন্য আশীর্বাদরূপে প্রেরণ করেছিলেন (২১:১০৭)। তিনি ছিলেন জগতে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার অগ্রপথিক। অসাধারণ প্রতিষ্ঠা ও অতি মানবীয় ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর রসুল কখনও নিজেকে মানুষ থেকে পৃথক করেননি। কুরআন ঘোষণা করেছে, ‘আমি তোমাদের মতো একজন মানুষ, তবে পার্থক্য এই যে আমার প্রতি প্রত্যাদেশ (অহি) অবতীর্ণ হয়’ (৪১.০৬)। ‘সমগ্র মানবমন্ডলী এক জাতি’ (২ :২১৩)।
ইসলামি বিধানে আল্লাহর আইন শাসকের পাথেয়। কারণ, তাকে তার কর্মের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি হতে হবে। বর্তমান যুগের কঠিন সমস্যাসমূহ, যেমন দুর্নীতি নারী নির্যাতন, লিঙ্গবৈষম্য, আর্থিক শোষণ, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধহীনতা, নেশাদ্রব্যের বাড়বাড়ন্ত, মানবাধিকার হরণ ইত্যাদি সমস্যার প্রকৃত এবং স্থায়ী সমাধান রয়েছে ইসলামের অনিন্দ্যসুন্দর শিক্ষায়, যার জন্য মহানবী মানবজাতির কাছে রেখে গেছেন পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন ও হাদিসের অমৃত ভান্ডার।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Adv Najmus Sakib ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি নবীদের সর্দার। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষ ও জিনের জন্য নবী। তিনি শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না।
Total Reply(0)
Nishi Islam ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
তাঁর সম্মান ও মর্যাদার সাক্ষ্য পবিত্র কোরআনসহ সব আসমানি গ্রন্থে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সৃষ্টিজগতের জন্য কল্যাণস্বরূপ প্রেরণ করেছেন।
Total Reply(0)
Imran Selim ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
পৃথিবীতে নবী-রাসুলদের আগমনের ধারাক্রম মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে শেষ হয়েছে। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না।
Total Reply(0)
Lokman Bin Harun ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
লে তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষ ও জিন তাঁর আনীত শরিয়ত (জীবনবিধান) মানতে বাধ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সবার প্রতিই আল্লাহর রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৫)
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সা.)-কেই শুধু সম্মানিত করেননি; বরং তাঁর উম্মতকেও সম্মানিত করেছেন। তাদের অন্য উম্মতের জন্য সাক্ষ্য ও আদর্শ বানিয়েছেন
Total Reply(0)
Nazrul Islam ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশংসায় বলেন, ‘হে নবী! আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শক ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৫-৪৬)
Total Reply(0)
Musfikur Rahman ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ১:৩৪ এএম says : 0
আমি ধন্য হযরত মোহাম্মাদ, আহম্মদ (স:) উম্মাত ৷
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন