কোডিভ-১৯ সংক্রমণের হার যখন তুঙ্গে তখন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। প্রণোদনার সেই অর্থের আশায় ব্যাংকে একাউন্ট খুলেছিলেন ৫ দিন মজুর। পরে তাদের একাউন্ট ব্যবহার করে প্রণোদনার আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকচক্র। পরে এ মামলায় ফেঁসে যান কুড়িগ্রামের ৫ দিন মজুর। এ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জাস্টিস। সরকারপক্ষের করা স্থগিতাদেশের ওপর চেম্বার জাস্টিস ‘নো-অর্ডার দেন। এর ফলে তাদের জামিনাদেশ বহাল রইলো। আদেশের বিষয়ে জানিয়ে ৫ দিন মজুরের পক্ষের কৌঁসুলি মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, সরকারের দেয়া প্রণোদনার টাকা পাওয়ার আশায় প্রতারণার শিকার হয়ে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ভুক্তভোগী পাঁচ দিনমজুরকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন চেম্বার কোর্ট।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বিধবা ফুলমনি রানী, রণজিৎ কুমার, প্রভাষ চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মনকে জামিন দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের করা আবেদন ‘ নো-অর্ডার’ করেন চেম্বার জাস্টিস মো. ওবায়দুল হাসান।এর আগে ভুক্তভোগীদের করা হাইকোর্টের জামিন আবেদনে যুক্ত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের মাস্টাররোল কর্মচারী কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী তানভীর ইসলাম স্বপন (৩০) করোনাকালীন সরকারি প্রণোদনা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তাদের ৫ জনকে নিয়ে সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী শাখায় যান। সেখানে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব চালু করেন এবং শ্রীপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের চেক বই ও বিভিন্ন কাগজপত্রে টিপ-সই নেন।
একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের সব কাগজপত্র ও চেক বই নিয়ে নেন। পরে এই মর্মে প্রতিশ্রæতি দেন যে, তাদের এই ব্যাংক একাউন্টে প্রণোদনার টাকা পাঠানো হবে। এর কিছুদিন পর পাঁচ দিনমজুরের হিসাব নম্বরে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা চলে আসে। এসব টাকা আসে সোনালী ব্যাংক হেডকোয়ার্টার শাখা থেকে। যার মধ্যে রণজিতের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রভাষের হিসাব নম্বরে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবলের হিসাব নম্বরে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমলের হিসাব নম্বরে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ফুলমণি রানির হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা আসে।
কয়েকদিন পর অপরিচিত ৩-৪ জন লোক এসব হিসাব নম্বর থেকে টাকা তুলতে এলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয় । তারা শ্রীপুর শাখায় টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেন। তবে টাকা তুলতে আসা অপরিচিত লোকগুলোকে আটকের আগেই তারা ব্যাংক থেকে সরে যায়। ওই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হকের করা মামলায় ৫ দিনমজুরসহ শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসারক্ষণ অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তারকে আসামী করা হয়। পরে গত ২ জুলাই এই মামলার আসামী চার দিনমজুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে আসামীরা নিম্ন আদালতে জামিন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর জামিন আবেদন করলে গত ৬ অক্টোবর পাঁচ দিনমজুরকে জামিন দেন হাইকোর্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন