কুমিল্লার পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা যুবক ইকবাল হোসেনের পরিবারের দাবী বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই সে মানসিক ভারসাম্যহীন। মাজারে মাজারে ঘুরে, সেখানে থাকে আবার গাঁজাও সেবন করে। তাকে দিয়ে যেকোন মানুষ যেকোন কাজ করাতে পারে। পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার ঘটনাটি কোন ব্যক্তি বা মহল ইকবালকে দিয়ে করিয়েছে। তবে ওই ঘটনার জন্য ইকবালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন তার মা আমেনা বেগম।
তিনি বলেন, ঘটনার দুদিন আগে (১১ অক্টোবর) বিকেলে নেশা করে আমার সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসে। কেন এসেছে জিজ্ঞেস করলে কথা না বলে চলে যায়। এরপর থেকে আর বাড়ি আসেনি। তবে বেশির ভাগ সময় মাজারে বা মসজিদের বারান্দায় রাত কাটায়। ইকবালের ঘটনায় আমরা গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেলাম। তাকে এরেষ্ট করে না কেনো। দেশে এতো পুলিশ র্যাব- তারা কী ইকবালকে খুঁজে পায় না। একটা পাগলরে এরষ্ট করতে এতো দেরি কেনো। গত শুক্রবার থেকে মানুষ জানে, পুলিশও জানে ইকবাল পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখছে। তাহলে তাকে এরেষ্ট করে মেরে ফেলে না কোনো।
কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর (বকশীনগর) লস্করপুকুরপাড় এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে ইকবালের বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, ইকবাল বেশিরভাগ সময় লস্করপুকুর এলাকায় নানির ঘরে থাকতো। এছাড়া সে নগরীর বিভিন্ন মসজিদ ও মাজারে অবস্থান করতো। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরেও তার আসা-যাওয়া ছিল। তাদের দেওয়া ভোগও খেতো ইকবাল।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ইকবাল মানসিক রোগী। আগে জোগালি ও রংয়ের কাজ করতো। পাগরঅমির কারণে তার প্রথম স্ত্রী সন্তান নিয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রীও তার বাবার বাড়িতে চলে গেছে। নানুয়ার দিঘিরপাড়ের ঘটনা তাকে দিয়ে কেউ না কেউ করিয়েছে। দেশের উন্নয়ন যাদের সহ্য হচ্ছে না তারাই এটি ইকবালকে দিয়ে করিয়েছে। বাংলাদেশে দাঙ্গা লাগানোর জন্য কাজটি করতে পারে। ইকবালকে গ্রেফতার করলে সব তথ্য বের হয়ে আসবে।
এদিকে নানুয়ার দিঘিরপাড় এলাকা থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে বুধবার সন্ধ্যায় ইকবালের নাম প্রকাশ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। কেউ বলছেন, লোকটি পাগল, তাকে দিয়ে কোন চক্র এটি করিয়েছে। কেউ বলছেন, তাকে আটক করে এর পেছনে কারা জড়িত এসব বের করতে হবে।
কুমিল্লা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেছেন, লোকটি সম্ভবত নিজে থেকে ওই কাজ করেনি। তাকে দিয়ে কেউ এটি করিয়েছে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দিঘিরপাড় পূজামন্ডপে কোরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় নয়টি মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি, দাউদকান্দি ও দেবীদ্বার থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। মামলায় ৯১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কুমিল্লার এ ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ খবরে চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় উপাসনালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন