মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাসায় ডেকে নারীকে হত্যা

মোবাইল বিক্রির টাকায় খুনিদের ইয়াবা সেবন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

সারা দিন দুজন মিলে ঘুরে বেড়িয়েছে রাজধানীর শপিং মলসহ বিভিন্ন জায়গায়। সন্ধ্যার পর সঙ্গের নারীকে বাসায় গিয়ে গল্প করার প্রস্তাব দেয় যুবক। এতে সাড়া দিয়ে ওই নারী যুবকের সঙ্গে বাসায় যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে গল্প নয়, খুন হন ওই নারী। এরপর ওই নারীর লাশ বস্তাবন্দি করে ফুটপাতে ফেলে দেয় পুরুষ সঙ্গী। খুনিরা নারীর মোবাইল ফোন বিক্রি করে ইয়াবা সেবন করে।
রাজধানীর ভাটারা এলাকার এক নারীর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। গত ৮ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর ভাটারা এলাকার ছোলমাইদ ঢালী বাড়ি এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালমুখী সড়কের একটি ফুটপাত থেকে বস্তা ও কার্টনবন্দি অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়। ডিএমপির গুলশান বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে।
প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে। নিহত নারীর নাম শিপন আক্তার (৩৪)। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বামুনিয়া গ্রামে। একটি পোশাক কারখানার কর্মী তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর ওই নারীর মোবাইল ফোনটি মিসিং ছিল।
তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ জানতে পারে, গত ৮ অক্টোবর ওই নারী বাসা থেকে বের হন। এরপর আর তার ঢাকার বাসায় ফেরেনি। তিনি কোথায় গিয়েছিলেন, তা খোঁজা শুরু করে ডিবি পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খুঁজতে খুঁজতে যমুনা ফিউচার পার্কে যায় ডিবি পুলিশ। যমুনা ফিউচার পার্কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর ওই নারী এক ব্যক্তির সঙ্গে বোরকা পরা অবস্থায় সেখানে প্রবেশ করেন। মার্কেটের ভেতরে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেন। এরপর সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে বের হয়ে ফুটপাতে এসে ফুচকা খায় তারা। এরপর সেখান থেকে তারা একসঙ্গে চলে যায়।
প্রযুক্তির সহায়তায় সঙ্গের যুবককে শনাক্ত করে পুলিশ। এ ঘটনায় আব্দুল জব্বার (২৫) নামে ঢাকার এক গ্যারেজ কর্মীকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে ডিবি পুলিশ। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জব্বার জানায়, শিপন আক্তার পোশাক কারখানার কর্মী। মোবাইল ফোনে জব্বারের সঙ্গে পরিচয়। তারা মাঝে মধ্যে কথা বলতো। ৮ অক্টোবর তারা একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য বের হয়। প্রথমে তারা যমুনা ফিউচার পার্ক এবং ফুটপাতের ফুচকার দোকানে ঘোরাঘুরি করে। সন্ধ্যার পরে ছোলমাইদ ঢালীবাড়ী এলাকায় জব্বারের ভাড়া বাসায় যায় তারা। এ সময় জব্বারের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে ছিল।
ডিবি জানিয়েছে, তারা একসঙ্গে সময় কাটানোর পর ওই নারী চলে যেতে চায়। তবে জব্বার তাকে সেখানে থাকতে বাধ্য করে। ওই নারী জব্বারের কাছে টাকা দাবি করে। জব্বার সকালে টাকা দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু তখনই টাকা দাবি করে এবং চলে যেতে চায় ওই নারী। জব্বার তাকে জোরজবরদস্তি করে বাসায় রাখতে চাইলে নারী ক্ষিপ্ত হয়। একপর্যায়ে জব্বারের এ ঘটনা জনসম্মুখে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বাসার ভেতরে চিৎকার করতে থাকে ওই নারী। এতে জব্বার আত্মসম্মান রক্ষায় শিপন আক্তারকে রাত ১০টার দিকে গলা টিপে হত্যা করে।
হত্যার পর ওই নারীর মোবাইল ফোনটি ১ জনের কাছে ১০০০ টাকায় বিক্রি করে জব্বার। সেই টাকা দিয়ে ইয়াবা কিনে বন্ধু হীরাকে নিয়ে তার বাসায় আসে। হীরাকে সঙ্গে নিয়ে ইয়াবা সেবনের পর তারা লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে। এরপর লাশটি প্রথমে একটি কার্টনে ঢুকায়। পরে ভাঙারির দোকান থেকে আনা বড় বস্তায় পুরো শক্ত করে বেঁধে ফেলে। রাত তিনটায় জব্বার ও হীরা লাশটি তিনতলার বাসা থেকে নিচে নামায়। পরে ভাড়া করা রিকশায় লাশটি নিয়ে ঘুরতে থাকে তারা। এক ফাঁকে ভাটারার ওই রাস্তায় লাশটি ফেলে দেয়।
পুলিশের ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ওই নারীর লাশ পাওয়ার পর আমরা তদন্ত শুরু করি। হত্যাকাণ্ডের পর জব্বার ঢাকা থেকে পালিয়ে যায়। আমরা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করেছি। ইতোমধ্যে জব্বার হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোন এবং ফেসবুকের অত্যধিক ব্যবহার নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক বিকৃত আকাঙ্খার জন্ম দিচ্ছে। নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে, পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রায়ই তারা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এসব কারণে কখনও আত্মহনন, কখনও নির্মম খুনের ঘটনা ঘটছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের খুঁজে বের করে গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে।
পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে। তারা জব্বারের তথ্যের ভিত্তিতে ওই নারীর মোবাইল ফোন, বোরকা এবং স্যান্ডেলসহ হত্যাকাণ্ডের অন্যান্য আলামত উদ্ধার করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন