ইনকিলাব ডেস্ক : গ্রীষ্মের শুরু থেকেই নয়া দিল্লী যেমন চাইছিল তার চেয়ে অবস্থা অনেক বেশী নাজুক হয়ে পড়ে। বছরের শুরু থেকেই সেখানে অসন্তোষ চলছিল। জুনায়েদের মৃত্যু ৮ জুলাই ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে নিহত কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী তরুণ নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর প্রতিবাদে তিন মাস ধরে চলা ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের সর্বশেষ ট্র্যাজেডি। এতে এ পর্যন্ত ৯০ জন তরুণ বিক্ষোভকারী নিহত ও ১২ হাজার আহত হয়েছে। জানা গেছে, প্রায় ৭ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু গত সপ্তাহেই গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৫০ জনকে।
কারফিউ, বন্ধ ও বিক্ষোভকারী এবং পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের কারণে রাজধানী শ্রীনগর ও আশপাশের এলাকার জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে।
ভারত সরকার কাশ্মীরের ব্যাপারে খুব কমই প্রো-অ্যাকটিভ আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। এমনকি জম্মু ও কাশ্মীরে যখন নিজেদের দল ক্ষমতায় থাকে তখনো না। বর্তমানে বিজেপি রাজ্য সরকারের এক অংশীদার।
কাশ্মীরে চলমান অসন্তোষের প্রেক্ষিতে ভারত সরকার প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপসহ স্থানীয় নেতাদের সাথে কথা বলা ও বিক্ষোভ শান্ত করতে একমাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ও অন্যান্য নেতাদের পাঠায়। তারা ব্যর্থ হন। সুতরাং নয়া দিল্লী একে সে পরিস্থিতি হিসেবে দেখছে যা শক্তি দিয়ে দমন করা প্রয়োজন।
কাশ্মীরের স্থানীয় পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে গেছে, একইভাবে হাতের বাইরে চলে গেছে সীমান্ত পেরিয়ে চালানো হামলা। গত জানুয়ারিতে কাশ্মীরের দক্ষিণে পাঞ্জাবের পাঠানকোটে একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিরা ভারতের প্রতিরক্ষা নিরাপত্তার দুর্বলতাকে পুঁজি করে। গত মাসে তারা কাশ্মীর সীমান্তের উরিতে এক সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায় ও ১৮ জন সৈন্যকে হত্যা করে।
সামরিক ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতায় বিব্রত মোদি প্রকাশ্যে পাকিস্তান সীমান্তের সন্ত্রাসী শিবিরগুলোর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ছত্রীসেনা হামলার ঘোষণা দেন। তিনি পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকরভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। শুধু তাই নয়, উরি হামলার নিন্দা করতে প্রথমবারের মত দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের পাশে পান।
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো স্বীকার করা হয়নি, আসলে অদূর ভবিষ্যতে কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই। ৯ অক্টোবর ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম শরণ ৯ অক্টোবর রাতে এনডিটিভির এক আলোচনায় বলেন, আমাদের স্বীকার করতে হবে যে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক অবশ্যই বৈরী সম্পর্ক এবং উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত তা বৈরীই থাকতে পারে।
শরণ যদিও বিষয়টি বিশদ ব্যাখ্যা করেননি, কথা হচ্ছে বিরোধীয় সীমান্তে পাকিস্তান শান্তি না আনলে ভারত সরকার অসন্তুষ্ট কাশ্মীরীদের সাথে সমাধানে আসতে পারবে না। কিন্তু দু’টি কারণে তা হবে না।
প্রথমত, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যারা দেশের রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছে, তাদের কর্মকা- চালাতে একটি বিরোধপূর্ণ সীমান্ত প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের প্রধান মিত্র চীন চায় ভারতের পশ্চিম সীমান্ত অস্থিতিশীল থাকুক যতক্ষণ না তা হাতের বাইরে চলে যায় এবং দু’পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধের সৃষ্টি করে। চীনের সম্মতি ছাড়া কোনো কিছুরই স্থায়ী সমাধান হবে না এবং তার কোনো ইঙ্গিতও নেই।
শরণ বলেন যে, ভারতের নীতি লক্ষ্য হল এমন পন্থায় বৈরী সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা যাতে সংঘাতের বিস্তৃতি না ঘটে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি আরো বলেন যে ভারত তার নিজ অঞ্চলে সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা না শেখা পর্যন্ত একটি বিশ^শক্তি হতে পারে না।
এ কথার অর্থ হল ভারতের মারাত্মক দুর্বল সামরিক ঘাঁটিগুলো শক্তিশালী করা যাতে পাকিস্তান থেকে আসা জঙ্গিরা সফল হতে না পারে। গত সপ্তাহে এ ধরনের একটি হামলা ব্যর্থ করে দেয়া হয়। তবে এর অর্থ বড় ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা। এর আরো অর্থ হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর জঙ্গি ঘাঁটিগুলো চিহ্নিত করা এবং সম্পর্কের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা।
ভারতের আরো প্রয়োজন কাশ্মীরের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রথমবারের মত প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকা গ্রহণ করা বর্তমান পরিস্থিতিতে যা অর্জন করা কঠিন। মোদি ৯ আগস্ট বলেন যে, কাশ্মীরের তরুণদের হাতে যেখানে ল্যাপটপ, ক্রিকেট ব্যাট বা বই থাকা উচিত ছিল তার বদলে তাদের হাতে ছুঁড়ে মারার জন্য পাথর দেয়া হচ্ছে।
দু’মাস পেরিয়ে গেছে। আমি আশ্চর্য যে তখন থেকে অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত উন্নয়নের জন্য কী করা হয়েছে যার প্রতীক ল্যাপটপ, ব্যাট ও বই? সম্ভবত কিছুই না এবং এটাই হচ্ছে কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের ট্র্যাজেডি। সূত্র ঃ নিউজউইক।
*নিবন্ধকার জন এলিয়ট নয়াদিল্লী থেকে লিখে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন