শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

স্কুইড গেম নয়, বাস্তব জীবনেই ঋণে জর্জরিত দক্ষিণ কোরীয়রা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

ঋণে জর্জরিত মানুষকে একটি খেলায় অংশ নিতে ফোন করতে বলা হয়। বিজয়ীর জন্য থাকে নগদ ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার পুরস্কার জেতার সুযোগ। কয়েক ধাপের এ খেলায় একবার হারলেই মৃত্যু, থাকে না দ্বিতীয় কোনো সুযোগ। এমন গল্পের কোরীয় টিভি সিরিজ ‘স্কুইড গেম’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে তুমুল উন্মাদনা। নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় এ সিরিজের সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পাচ্ছে কিছু মানুষ। বলা হচ্ছে, স্কুইড গেম নয় বরং বাস্তব জীবনেই ঋণে জর্জরিত দক্ষিণ কোরীয়রা। আর তারা পান না দ্বিতীয় কোনো সুযোগও। রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্কুইড গেমের চরিত্রগুলোর সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। সম্প্রতি উদ্যোক্তা ও তরুণরা স্কুইড গেমের পোশাক পরে চাকরির নিরাপত্তার দাবিতে রাজধানী সিউলে বিক্ষোভ করেন। অবসরের কাছাকাছি থাকা ৫৮ বছর বয়সী ইউ হি-সুক একটি চলচ্চিত্রের জন্য ২০০২ সালে ঋণ নিয়েছিলেন এবং সেটি ফ্লপ হয়েছিল। এরপর একটি ছোট চাকরি শুরু করেন ইউ। তিনি বলেন, কোরিয়ায় আপনি যখন ঋণসংক্রান্ত অপরাধী হয়ে যাবেন, তখন এটি আপনার জীবন শেষ করে দেবে। ঋণ পরিশোধ করতে আমার ১৩ বছর লেগেছিল। আমি শুধু চেয়েছিলাম ঋণ পরিশোধের একটি সুযোগ। কিন্তু ব্যাংকগুলো আপনাকে উপার্জনের সুযোগও দেয় না। বিদেশীরা দক্ষিণ কোরিয়ার জীবনকে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড বিটিএস ও স্যামসাং স্মার্টফোনের মতো মসৃণ মনে করতে পারেন। তবে সিরিজটিতে দেশটির নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান ব্যক্তিগত ঋণের পাহাড়, উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ আত্মহত্যার হার এবং ঋণমুক্ত হওয়ার বিরল সুযোগের একটি অন্ধকার দিক তুলে ধরা হয়েছে। ব্যক্তিগত বিনিয়োগ ও আবাসনের ব্যয় বৃদ্ধি পারিবারিক ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলেছে। তবে ঋণ সম্পর্কে ক্ষমাশীল নয় এমন সামাজিক প্রবণতা প্রায়ই ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ঋণের মধ্যবর্তী পার্থক্যকে অস্পষ্ট করে দেয়। গত বছর দেশটিতে ব্যক্তিগতভাবে দেউলিয়া হওয়ার সংখ্যা ৫০ হাজার ৩৭৯ জনে পৌঁছেছে। এ সংখ্যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোরিয়া ক্রেডিট ইনফরমেশন সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একাধিক ধরনের ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার অনুপাত বেড়ে জুনে ৫৫ দশমিক ৪৭ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০১৭ সালে এ হার ৪৮ শতাংশ ছিল। ব্যক্তিগত ঋণে দেউলিয়া বিশেষজ্ঞ সিউলের একজন আইনজীবী বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি কোরিয়ান হতেন, তাহলে তিনি কখনই প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। কারণ ট্রাম্প অনেকবার দেউলিয়া হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে করপোরেট ঋণ থেকে ব্যক্তিগত ঋণ অনেক বেশি আলাদা। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অপর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা জাল এবং ব্যর্থতার জন্য একটি পুনর্বাসন কর্মসূচির অভাব দেশটির নাগরিকদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। এ পরিস্থিতি তাদের হতাশ করে এবং পাঁচ বছর পর দেউলিয়ার রেকর্ড মুছে ফেলার নিয়ম থাকলেও ব্যাংকগুলো প্রায়ই এটি উপেক্ষা করে। দেউলিয়া-বিষয়ক বিচারক আন বায়াং-উক বলেন, ব্যাংকিং শিল্পে ঐতিহ্যগত অনুশীলনের কারণে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ ঋণের ফাঁদে পড়েন। কম ক্রেডিট রেটিং কিংবা দেউলিয়ার ইতিহাস থাকা ব্যবসায়ীদের ঋণ নিতে হলে রাষ্ট্র পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যারান্টির প্রয়োজন হয়। ফলে ঋণ পেতে তাদের বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়। আন বলেন, ব্যর্থ উদ্যোক্তারা সামাজিকভাবে কলঙ্কিত হয়ে যান। তাই তাদের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ তাদের মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না। এমনকি তারা সহজে কোথাও চাকরিও পান না। দেউলিয়ার রেকর্ড থাকায় তারা কর্মসংস্থানের বিধিনিষেধের একটি দীর্ঘ তালিকার মুখোমুখি হন। দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মকর্মসংস্থানের সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। চাকরির বাজারের এক-চতুর্থাংশজুড়ে থাকা এ হার ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের ব্যবসাগুলোর মাত্র ৩৮ শতাংশ তিন বছর চলমান থাকে। রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন