বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল কোরআন নামের তাৎপর্য

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মাজীদ | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

কোরআনে কারীম সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা মহান রাব্বুল আলামীন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.) এর ওপর নাযিল করেছেন। কোরআনে কারীমের তিলাওয়াত এবং এর বিধানাবলির অনুসরণের মধ্যেই মানব জাতির হেদায়েত ও সফলতা নিহিত। এর মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। যে ব্যক্তি এ কোরআনকে সর্বক্ষেত্রে শিক্ষক ও সিদ্ধান্তদাতারূপে গ্রহণ করবে দোজাহানের সফলতা কেবল তারই নসীব হবে। সুতরাং কোরআনে কারীমের সাথে আমাদের আস্থা, ভালোবাসা ও সমর্পণের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারীমে মানব জাতির যে প্রভূত কল্যাণ নিহিত, মানুষের ওপর এই মহাগ্রন্থের যে ইহসান ও অনুগ্রহ তার দাবি হলো, মানুষ কোরআনে কারীম এবং কোরআনের বার্তা ও শিক্ষা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবে।

কোরআনের পরিচয় লাভের এবং এর মাহাত্ম্য-বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে অবগতি লাভের একটি উপায় এর নাম-পরিচয় এবং এর উপাধি ও বিশেষণসমূহের মর্ম ও তাৎপর্য অনুধাবন করা। সর্বোপরি কোরআনে কারীমের যেসব নাম ও বিশেষণ খোদ কোরআনে কারীমে বর্ণিত হয়েছে সেসবের তাৎপর্য অনুধাবন করলে আমরা বুঝতে পারব, কোরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ক কতটা গভীর হওয়া প্রয়োজন।

আল কোরআনের নাম ও বিশেষণের পরিসংখ্যান : কোরআনে কারীমে বিভিন্ন শব্দে ও বিভিন্ন আঙ্গিকে কোরআনের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নামবাচক শব্দসমূহ ও গুণবাচক শব্দসমূহ। সব মিলে সংখ্যা প্রায় একশ হবে। এরপর পবিত্র হাদীস শরীফে এবং সালাফ তথা সাহাবা ও তাবেয়ীনের বাণীতে এর যেসব নাম বা বিশেষণ বর্ণিত হয়েছে সেগুলোকে যোগ করা হলে সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যাবে।

এসব নাম ও বিশেষণের ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য সম্বন্ধে তাফসীরগ্রন্থগুলোর সংশ্লিষ্ট স্থানে এবং কোনো কোনো তাফসীরগ্রন্থের ভূমিকা অংশে আলোকপাত করা হয়েছে। তেমনি ‘উলূমুল কোরআন’ বিষয়ক বিভিন্ন কিতাবে স্বতন্ত্র অধ্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। তাছাড়া পূর্ববতী কোনো কোনো আলেম এ বিষয়ে স্বতন্ত্র পুস্তিকাও রচনা করেছেন।

ইমাম ইবনু জারীর তবারী রাহ.-সহ অনেকে কোরআনের চারটি নাম উল্লেখ করেছেন। যথা : আল কোরআন, আলকিতাব, আল ফোরকান ও আযযিকর। অনেকে আবার এর সাথে পঞ্চম আরেকটি নাম ‘আততানযীল’ও যোগ করেছেন। এছাড়াও অনেকে কোরআনে কারীমের জন্য ব্যবহৃত গুণবাচক বিভিন্ন শব্দ ও বিশেষণকেও নাম হিসেবে গণ্য করেছেন। ফলে নামের সংখ্যায় কম-বেশি হয়েছে।

আবুল মাআলী শায়যালাহ (মৃত্যু : ৪৯৪ হি.) ‘আলবুরহান ফী মুশকিলাতিল কোরআন’ কিতাবে কোরআনের পঞ্চান্নটি নাম উল্লেখ করেছেন। আলী ইবনু আহমদ আলহাররালী (মৃত্যু : ৬৩৮ হি.) কোরআনের নাম উল্লেখ করেছেন নব্বইয়েরও বেশি। উমর ইবনু মুহাম্মাদ নাসাফী (৫৩৭ হি.) তার তাফসীরগ্রন্থের ভূমিকায় এবং মাজদুদ্দীন ফায়রুযাবাদী (মৃত্যু : ৮১৭ হি.) ‘বাসাইরু যাবিত তাময়ীয’ নামক তাফসীরগ্রন্থে (১/৮৮-৯৬) একশত নাম উল্লেখ করেছেন।

এ ব্যাপারে সঠিক কথা এটাই যে, ভাষা ও পরিভাষার স্বীকৃত নিয়ম-কানুন অনুসারে ‘আল কোরআন’, ‘আল ফোরকান’, ‘আলকিতাব’, ‘আযযিকর’ ও ‘আততানযীল’-এই পাঁচটি শব্দ কোরআনে কারীমের মূল নাম। অন্যান্য শব্দগুলো কোরআনের সিফাত বা বিশেষণ। এই পাঁচটি শব্দ নাম হিসেবে খোদ কোরআনে কারীমেরই অনেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

আয়াতের পূর্বাপর শব্দ লক্ষ করলে বোঝা যায়, উপরোক্ত শব্দগুলো কোরআনে কারীমের মূল নামরূপে বর্ণিত হয়েছে আর অন্যান্য গুণবাচক শব্দগুলো আসলে উপরোক্ত নামসমূহের সিফাত বা বিশেষণরূপে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- ‘কোরআন কারীম’ এই যুগল শব্দের মধ্যে ‘কারীম’ শব্দটি এবং ‘কোরআন মাজীদ’-এর ‘মাজীদ’ শব্দটি।
কোরআনের এসব নাম ও বিশেষণ মাহাত্ম্যের পরিচায়ক : মহাগ্রন্থ আল কোরআন হলো সর্বস্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলার কালাম বা বাণী। আল্লাহ তাআলা যত মহান তাঁর কালামও তত মহান। যে মহামহিম আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারীম নাযিল করেছেন তাঁর যেমন সত্তাবাচক নাম-‘আল্লাহ’ ছাড়াও গুণবাচক সুন্দর সুন্দর আরো অনেক নাম রয়েছে, যা ‘আলআসমাউল হুসনা’ নামে পরিচিত এবং কোরআনে কারীম যে মহান রাসূল (সা.) এর ওপর নাযিল হয়েছে তাঁর ‘মুহাম্মাদ’ ও ‘আহমাদ’ নাম ছাড়াও আরো গুণবাচক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, তেমনি কোরআনে কারীমেরও রয়েছে বহুসংখ্যক নাম ও বিশেষণ, যা ইলাহী কালামের মাহাত্ম্যকেই ফুটিয়ে তোলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
সৈকত ফকির ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
আল্লামা ইমাম জারকানি (রহ.) বলেন, কোরআনের নামের সংখ্যা এতো অধিক হওয়ার কারণ হলো- কোরআনে কারিমের গুণবাচক নামগুলোকে মূল নামে আখ্যা দেওয়া।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩৪ এএম says : 0
আল কুরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ বিশ্বমানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ। এ মহাগ্রন্থ ছাড়া মানুষের মুক্তির চিন্তা করা একটি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
Total Reply(0)
দেওয়ান মাহদী ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩৫ এএম says : 0
কুরআন নিজেই নিজের সম্পর্কে দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানবসভ্যতার অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সব সমস্যার সমাধানের কথা বর্ণনা করেছে। আল কুরআনের গুণবাচক নামগুলোর তাৎপর্য থেকে আমরা জানতে পারব এর মহানত্ব।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩৫ এএম says : 0
আল কুরআনের মধ্যে আকিদা-বিশ্বাসের ভিত্তিতে নৈতিক চরিত্র, ইবাদত, তাহজিব, তমুদ্দুন, অর্থ ও সমাজব্যবস্থা, আইন ও আদালত, যুদ্ধ ও সন্ধি মোট কথা মানবজীবনের সব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেয়া আছে
Total Reply(0)
গাজী ফজলুল করিম ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩৬ এএম says : 0
আসুন আল কুরআন দিয়ে আমাদের হৃদয়-প্রাণকে ভরে দেই। আমাদের গোটা দেহ ও মন নিয়ে আল-কুরআনের বিশাল ভুবনে প্রবেশ করি। ইনশাআল্লাহ শয়তান আমাদের কাছেও ভিড়তে পারবে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন