শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৮ জন গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৩৮ এএম

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮ সন্দেহভাজনকে আটক করেছে এপিবিএন পুলিশ। এদের মধ্যে একজনকে চ্যাঞ্চল্যকর মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে আটক এই ব্যাক্তিই মুহিবুল্লাহ হত্যার মাস্টারমাইন্ড। ধৃত প্রত্যেকেই রোহিঙ্গা বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। ঘটনার দিন শুক্রবার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন এপিবিএন কর্মকর্তা শিহাব কায়সার। এছাড়াও শুক্রবার ভোরে সন্ত্রাসী হামলার পর একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ জসিম নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছিলো।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এপিবিএন পুলিশ কর্মকর্তা শিহাব কায়সার জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিহত রোহিঙ্গা শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরও এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে ১৪ এপিবিএন পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে উখিয়া টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির কেন্দ্রিক বেশ কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। সংজ্ঞবদ্ধ একটি চক্র শরণার্থী শিবিরে কথিত আরাসার উপস্থিতি ও দায় দিয়ে প্রশাসনের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। এব্যাপারেও ক্যাম্পে দায়িত্বরত ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক নাইমুল হক দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আরাসা কিংবা যেকোনো ধরণের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা নাকচ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে আরাসাও তাদের অফিসিয়াল টুইটার একাউন্টে হামলার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো দায় স্বীকার করেনি। কিছুদিন আগেও যখন মুহিবুল্লাহ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় আরাসা তখনও মুহিবুল্লা নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে জড়িতদের গ্রেফতার করার দাবী জানিয়ে বিবৃতি দেয়।
পুলিশ আরও বলছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা নামে কোনো সংগঠনের তৎপরতা নেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কিন্তু আরসার নাম ব্যবহার করে অপতৎরতা চালাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকারী সন্ত্রাসীরা। গুলিতে নিহত নুর আলম ওরফে হালিমের স্বজন ও ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘প্রতি রাতে ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক-ছাত্র ও স্থানীয় রোহিঙ্গারা মিলে তাহাজ্জুতের নামাজ আদায় করেন। আমিও নিয়মিত তাহাজ্জুতে শরিক হই। তবে বৃহস্পতিবার আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় মসজিদে দেরিতে যাই। ‘কিন্তু আমি গিয়ে দেখি মাদ্রাসার ভেতরে সবাই ছোটাছুটি করছে। অনেকে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করছে। তাদের দেখে আমি দূরে সরে যাই। প্রায় আধা ঘণ্টা গোলাগুলি চলে। এরপর সন্ত্রাসীরা চলে যায়।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মাহমুদ বলেন, ‘কারা হামলা করেছে সেটা সবাই জানে। ক্যাম্পে আরসা ছাড়া কোনো সন্ত্রাসী নেই। তারাই হামলা করেছে। তারা গুলি করে মেরেছে।’ গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ডি ব্লকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন।
কথিত আরসা নেতা আবদুর রহিমের নেতৃত্ব ২০ থেকে ২৫ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ওই হামলা চালিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু একটি দুর্বৃত্ত সংগঠনের শীর্ষ নেতার নির্দেশে হত্যা মিশনে অংশ নেন ১৯ দুর্বৃত্ত। এদের মাঝে ৫ জন ছিলেন অস্ত্রধারী। পূর্ব প্রস্তুতি মতে কয়েক মিনিটেই কিলিং মিশন শেষ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ তরে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে মুহিবুল্লাহর হত্যার কিলিং স্কোয়াডের সদস্য আজিজুল হককে গ্রেফতার ও হত্যার ছক সম্পর্কে জেনে প্রেস ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক।
এ পর্যন্ত মুহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে জড়িত আরসার ৫ জন সদস্য ও ৪০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। আরসার সদস্যদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়ে ইসলামি মাহাসের সদস্যরা সহযোগিতা করেছেন—এই ধারণা থেকে ওই মাদ্রাসায় হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করছে রোহিঙ্গারা। তবে পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আরসার অস্তিত্ব নেই। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-৮ (এপিবিএন)-এর অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান বলেন, ‘মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা নামে কোনো সংগঠনের তৎপরতা নেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। কিন্তু আরসার নাম ব্যবহার করে অপতৎরতা চালাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন