শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

পুরনো কৌশলেই আটকা বাংলাদেশ!

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

টি২০ কাপ
ক্রিজে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে বাঁহাতি স্পিনার ব্যবহার করা যাবে না। ডানহাতি থাকলে অফ স্পিনারদের রাখতে হবে দূরে। বাংলাদেশের কোন অধিনায়কই গৎবাধা এই চিন্তা থেকে বাইরে বেরুতে পারেন না। দেশসেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কিংবা সাকিব আল হাসানকেও দেখা গেছে এমন করতে। তুলনামূলক দুর্বল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেও এমন কৌশল নিতে দেখা গেল। যা আদতে কাজে আসেনি। পরিণতি, দারুণ সম্ভাবনাময় একটি ম্যাচের অপমৃত্যু, সঙ্গী লজ্জার হার।
সাদা চোখে দেখতে গেলে, ১৭১ রান করেও শ্রীলঙ্কাকে আটকাতে না পেরে ম্যাচ হারার বড় দায় হয়ত লিটন দাসের সহজ দুই ক্যাচ মিস। সেটিও দুই সেরা লঙ্কান ব্যাটসম্যান চারিথ আসালাঙ্কা আর ভানুকা রাজাপক্ষের। ওই সময় গোটা দলের অভিব্যক্তিই বলছিল- এমন ক্যাচ পড়ে গেলে ম্যাচ জিতব কীভাবে! লিটন আসালাঙ্কার ক্যাচ ফেলেছেন ৬৩ রানে, এর আগে রাজাপক্ষের ৯ রানে। দুটিই গুরুত্বপ‚র্ণ মুহূর্ত। পরে তারাই অসম্ভব এক জয় ছিনিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ক্যাচ দুটি ধরলে হিসেবটা পাল্টে যেতে পারত।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রক্রিয়াতেও কি কিছু গলদ ছিল না! ম্যাচদের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের দুই সেরা বোলার সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানকে আক্রমণ থেকে দূরে রাখেন মাহমুদউল্লাহ। দলের বাকিদের মার খাওয়ার মাঝে প্রথম ২ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে জোড়া উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। ম্যাচে ফিরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর তিনি আক্রমণ থেকে হাওয়া। প্রথম ওভারে ১৩ রান দেওয়া মোস্তাফিজ আসেন আর ১৫তম ওভারে। এর মাঝেই ঘটে যায় অনেক কিছু। ক্রিজে দুই বাঁহাতি ব্যাটারদের দেখে অফ স্পিনার লেলিয়ে দেওয়ার চিন্তা করে বাংলাদেশ। অনিয়মিত আফিফ হোসেন ও অধিনায়ক নিজে এই সময় বল করেছেন। মাহমুদউল্লাহ তার দুই ওভারে দেন ২১ রান। কোন সুযোগও তৈরি করতে পারেননি। আফিফ দেন ১৫। অবশ্য লিটন ভানুকা রাজাপাকসের ক্যাচ হাতে রাখতে পারলে হয়ত ৪ রান কম দিয়ে একটা উইকেট পেতেন তিনি।
এটা বাদ দিলে এই দুই অফ স্পিনারের ৩ ওভার থেকে এসেছে ৩৬ রান। এরপর সাকিব-মুস্তাফিজ আক্রমণে এলেও ম্যাচ তখন লঙ্কানদের মুঠোয়। ম্যাচ শেষে এসব কৌশলের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনে আসা সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকের কাছে। তিনি সমর্থন করলেন অধিনায়কের সিদ্ধান্ত, ‘সাকিবের জায়গায় যে বোলিং করেছে, সে কিন্তু একটা সুযোগ (ক্যাচ) তৈরি করেছে। সেটা কাজে লাগাতে পারলে পরে ডানহাতি ব্যাটসম্যান আসত। তখন সাকিব আরও বেশি কার্যকর হতে পারত।’
নিদহাস ট্রফিতেও অধিনায়ক সাকিব নিজেকে আক্রমণ থেকে দূরে রেখেছিলেন একই যুক্তিতে। সেবার তা কাজে লাগেনি। এমন নজির আছে সব অধিনায়কের বেলায়। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সাকিব-মুস্তাফিজকে আক্রমণে না এনে কেন অপেক্ষা করা হলো, এই প্রশ্ন হয়েছে চড়া। মুশফিক জানালেন, শেষের জন্য জমিয়ে রাখা হয়েছিল এই দুজনকে। যদিও শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচটা জমে থাকেনি, ‘আমার মনে হয়, সঠিক সময়ে সেরা বোলাররা বোলিং করছে কী না, এটা গুরুত্বপ‚র্ণ। আর এক দিকে যেহেতু বাউন্ডারি ছোট ছিল, যেকোনো সময়ে একজন বাঁহাতি স্পিনার আনা ঝুঁকিপ‚র্ণ হয়ে যায়। সাকিব একজন চ্যাম্পিয়ন বোলার, ডেথ ওভারে বোলিং করতে পারে, শেষ ওভারেও বোলিং করতে পারে। যদি এমন হতো যে শেষ ওভারে প্রয়োজন, তখন সে-ই হতো আমাদের বোলার। ইনিংসের শেষদিকেই তো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো হয়, তখন আমরা চেয়েছিলাম সাকিবকে আনব। কারণ শেষদিকেই কঠিন সময়টা আসে। সে এই সব মুহূর্তের চাপ সইতে পারে। আমরা এটা ভেবেছিলাম।’
এই ভাবনা আর বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বাস্তবতার ফারক নিয়েই দেশের শীর্ষ স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমে লেখা কলামে অসন্তুষ্টি ঝেড়েছেন সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তার মতে, ‘নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার আগের ম্যাচের চেয়ে অনেক ভালো ছিল এ ম্যাচের উইকেটটা। তবে এর আগে থেকেই দুই দলের ‘থিঙ্কট্যাংকের’ চিন্তাভাবনার মধ্যে বেশ বড় একটা পার্থক্য দেখলাম। অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে ছাড়াই শ্রীলঙ্কা চারজন বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে নামল, সঙ্গে একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। অন্যদকে আমরা তাসকিন আহমেদকে বাদ দিয়ে বাড়তি একজন স্পিনার খেলালাম। তবে আমার ধারণা, মাঠ ছোট বলে স্পিনার কম খেলিয়েছে তারা। এটা জেনেও আমরা স্পিনার বেশি খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসে মুশফিক তার ঢাল হলেও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অকপটেই স্বীকার করলেন নিজেদের ভুলভ্রান্তি, ‘এই মাঠে আইপিএলের ম্যাচ দেখেছি। আমাদের ভাবনা ছিল শারজার উইকেটে একজন অতিরিক্ত স্পিনার হয়তো কাজে লাগতে পারে। স্পিনাররা ভালোই করেছে। কিন্তু আমরা তো সুযোগ হারিয়েছি।’ তবে তার কণ্ঠে আশার বাণীও। পরের ম্যাচে ভুল শুধরে নেবেন প্রত্যয় জানাতেও ভোলেননি। ‘আমরা দুটি বড় সুযোগ হারিয়েছি। এ ম্যাচের ভুলগুলো পরের ম্যাচে শুধরে নেব। এ ম্যাচের ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের ব্যাটিংয়ের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আমরা এখন পরের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছি।’
সেই পরের ম্যাচটি আগামীকাল। প্রতিপক্ষ আরো শক্তিশালী- ইংল্যান্ড। ভেন্যুও ভিন্ন, আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম। দেখা যাক এবার পরিকল্পনা আর মাঠের খেলায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারে কি-না মুশফিক-রিয়াদরা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন