শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রহসন এবং শামির প্রতি ধর্মবিদ্বেষ

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

খেলার মাঠে এক হাঁটুতে নতজানু হয়ে বসা বৈষম্য ও নিপীড়নের প্রতিবাদ হিসেবে ২০১৬ সালে প্রথম বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, যখন সান ফ্রান্সিসকোর তৎকালীন কোয়ার্টারব্যাক কলিন কেপার্নিক মার্কিন জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন নতজানু হয়ে বসেছিলেন। এরপর এটি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সাথে একাত্মতার একটি বিশ্বজনীন প্রতীক হয়ে ওঠে। এখন এটি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটি সাধারণ, সর্বজনীনভাবে বোধগম্য এবং শক্তিশালী প্রকাশ।

তাহলে কেন ভারতের ক্রিকেট টিমের ১১ জন বর্ণবাদ ও বৈষম্যের সমতার প্রতীকটি সমর্থনে দুবাই স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তানের ২৪ অক্টোবর ম্যাচের প্রাক্কালে নতজানু হয়ে বসেছিলেন? কেন তাদের এ কাজটি অবিশ্বাস থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত নিন্দার উদ্রেক করল? আশ্চর্যজনকভাবে, ভারতীয় দলের এ প্রহসন বর্ণবাদ ও বৈষম্যের সমতার প্রতীকটিকে অসম্মান করেছে। অবশ্য বিষয়টি মৃদু আপত্তির মধ্যেই শেষ হয়ে যেত, যদি না পাকিস্তান ম্যাচটি জিতে নিত। এরপর থেকে অনলাইনে ভারতের পরাজয় নিয়ে অশালীন ও অশালীন মন্তব্য শুরু হয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন ভারতের ৩১ বছর বয়সী ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামি। তার ইনস্টাগ্রাম পেজ নির্লজ্জরকমের আক্রোশপূর্ণ ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্যে ভরে যায় এবং তাকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করে পরবর্তী ফ্লাইটে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। শামিকে অন্য খেলোয়াড়দের থেকে আলাদাভাবে টার্গেট করা হয়েছে এবং তার জন্য ব্যবহৃত ভাষাগুলো তার মুসলিম হওয়ার সাথে সরাসরি জড়িত। প্রকৃতপক্ষে, এ টুর্নামেন্টের জন্য দলের প্লেয়িং লাইনআপে তিনিই একমাত্র মুসলিম। এটি অপ্রাসঙ্গিক হত, যদি অনলাইনে তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে যেয়ে তার ধর্মকে লক্ষ্যবস্তু না করা হত। এখন এই বৈষম্যটিও ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ এর সমান্তরাল বাস্তব।

ভারতীয় দল কি কোনোভাবে তাদের কমরেড শামির সমর্থনে হাঁটু গেড়ে বসেছিল? করোনা মহামারি থেকে শুরু করে কাশ্মীরের সহিংসতা পর্যন্ত সমস্ত কিছু নিয়ে উগ্র গণবিতর্কে ভারতীয় ক্রিকেটারদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত অনেক সমস্যা সমাধানে ক্রিকেটাররা তাদের অতুলনীয় প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়কের বিবৃতি এর একটি উদাহরণ। কিন্তু ভারতের জাতীয় দলের প্রতিনধিত্বকারীদের জাতীয় সমস্যাগুলো নিয়ে নীরব থাকতেই দেখা যায়।
ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি এবং তার দলের সদস্যরা দেশের প্রতি অত্যন্ত অনুগত বলে পরিচিত। উপমহাদেশে, যেখানে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে প্রায়ই অন্য নামে যুদ্ধ বলা হয়, কোহলি বড়দের মতো আচরণ করেছেন। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে আলিঙ্গনরত কোহলির ছবি, যার দুর্দান্ত খেলা পাকিস্তানিদের তাদের জয় এনে দিয়েছে, ভাইরাল হয়েছে এবং উভয় দেশের মানুষের হৃদয় উষ্ণ করেছে। তিনি ম্যাচ হেরে যেভাবে পাকিস্তান দলকে তার বড় জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন, সেভাবে শামির প্রতি উদারতা এবং মমতা প্রদর্শন করেননি।
ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মধ্যে, অনেক বিশিষ্ট ক্রিকেটার শামির ধর্ম এবং দেশপ্রেমকে আক্রমণ করার নিন্দা করেছেন। কিন্তু কোহলি নীরব। এ প্রতিবাদের জন্য তার কি ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের কাছ থেকে অনুমতির দরকার ছিল? তিনি কি তার অনলাইন পেজগুলোতে বিষাক্ত মন্তব্য থেকে গা বাঁচিয়েছেন? তিনি কি এই সর্বোচ্চ মৌলিক বিষয়গুলোতে কথা বলার মূল্য নিয়ে চিন্তিত ছিলেন? আসলে তার এ নীরবতার মধ্যেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের হাঁটু গেড়ে বসার ন্যাক্কারজনক অর্থহীনতা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
চৌধুরী হারুন আর রশিদ ২৭ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
ভারতের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না
Total Reply(0)
habib ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ১০:০০ এএম says : 0
India is the first country bought ugly policy of cricket history
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন