সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনী মাঠ খালি করতেই সরকার পূজামণ্ডপের ঘটনায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তিনি বলেন, মন্দির ভাঙা বিষয়ে মোট মামলা হয়েছে ৬০টা। আসামী সংখ্যা হচ্ছে ১৫ হাজার ৯৬ জন। ইতোমধ্যে তারা (পুলিশ) গ্রেপ্তার করেছে ১৮৬ জনকে। তার মধ্যে বিএনপির ১ হাজার ৮৬৮জন। এই ঘটনার পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ আছে এবং তারা শুধু মাত্র তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্যে, ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যে এই জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দলের উচ্চ পর্যায়ের টিম স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে সরজমিন ঘটনাস্থল দেখে এসেছেন। বরকত উল্লাহ বুলু (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) সহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে এরা কেউ এর (পূজামন্ডপের হামলা ঘটনা) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না এবং তাদের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা এই মামলার মধ্যে নেই। এই মামলাগুলো করার একমাত্র উদ্দেশ্যে হচ্ছে যে, বিএনপিকে হয়রানি করা, তাদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা এবং যেহেতু তারা আসন্ন নির্বাচন করতে চায় সেই নির্বাচনের পূর্বেই যেন বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে মাঠ থেকে একদম সরিয়ে দেয়া যায় মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে বিভিন্নভাবে এজন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সব সময়ে এসব করে এসছে এবং করে এভাবে তারা রাজনীতিতে টিকে থাকতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বরকত উল্লাহ বুলুর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা ও ১৬৪ ধারায় নির্যাতন করে যে স্বীকারোক্তি আদায় করা নেয়া হয়েছে-এটা একটা মিথ্যা প্রয়াস বা চেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু ও কামাক্ষা চন্দ্র দাসসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা। তাদেরকে আবার একটা আইনগতভাবে বিপদগ্রস্থ করার একটা প্রচেষ্টা।
তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার চাই এবং প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার কথা বলছি, বিএনপির নেতাকর্মী যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে বলছি। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী দোষী ব্যক্তি তাদেরকে অবশ্যই বিচারে আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।
মামলার তালিকা সরকার তৈরি করেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা খুব পরিস্কার যে, সরকার পরিকল্পিতভাবে মাঠ পরিস্কার করার কাজ করছে। ২০১৮ সালেও নির্বাচনের ৭/৯/১০ দিন আগে থেকে তারা (সরকার) এমনভাবে মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা শুরু হলো, হাজার হাজার গায়েবী মামলা প্রত্যেকটি নির্বাচনী আসনে। প্রার্থীসহ কর্মীদের গ্রেফতার করেছিল, মাঠ একদম খালি করা হলো এবং আগের দিন রাতে ভোট করে নিয়ে যাওয়া হলো। এবার তার আগে থেকেই এই মামলাগুলো দিচ্ছে। সরকার অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করতে চায়। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, আমাদের মামলাগুলো শেষ করে ফেলবে। তারা তালিকা তৈরি করেছে সরকারের হোম মিনিস্ট্রি থেকে যে, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পিত্তি করতে হবে এব নেতাদেরকে ওই ইলেকশ যাতে করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার আমরা নির্বাচন নিয়ে চিন্তাই করছি না। আমরা এই সরকারের পতন, এই সরকার যেতে হবে এবং পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার পরে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন হতে হবে। দ্যাটস অল, ফাইনাল।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমূখ নেত্বৃৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন