শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকুন

সেনাবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ দেশের যে কোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি বিশ^াস করি, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতীয় যে কোন প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব রেজিমেন্ট ও রওশন আরা রেজিমেন্ট এর নিকট নতুন পতাকা হস্তান্তর এবং সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিটকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলাসহ আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ‘অপারেশন কভিড শিল্ড’ এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করোনা প্রতিরোধকল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে সম্মান ও মর্যাদা। যা বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।

অনুষ্ঠানের শেষে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সেনাপ্রধান চট্টগ্রামের হালিশহরস্থ আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুলে ৪, ১২ ও ২০ ফিল্ড, ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৫ ও ৭ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ১ ও ২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ এবং এনসিও একাডেমিকে জাতীয় পতাকা প্রদান এবং মুজিব রেজিমেন্ট ও রওশন আরা রেজিমেন্টকে আর্টিলারির নতুন পতাকা প্রদান করেন। অনুষ্ঠান থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালামও জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পতাকা হল জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। পতাকার মান রক্ষা করা সকল সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব এবং জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোন ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের। আজ ‘জাতীয় পতাকা’ আপনাদের হাতে তুলে দেয়া হলো। এই বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় আমি ৪, ১২ ও ২০ ফিল্ড, ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৫ ও ৭ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, ১ ও ২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ এবং এনসিও একাডেমিকে আন্তরিক অভিবাদন।

সরকার প্রধান বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত মুজিব ব্যাটারীর কামানের গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে ঘোষিত হয়েছিল ‘রেজিমেন্ট অব আর্টিলারি’র গৌরবময় পথচলা। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মুজিব ব্যাটারী ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। যা বিভিন্ন প্রশাসনিক, প্রশিক্ষণ, আভিযানিক কর্মকাণ্ড এবং প্রতিযোগিতার কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ গত ২০১৯ সালে ‘রেজিমেন্টাল কালার’ এবং ২০২০ সালে গৌরবময় ‘ন্যাশনাল ষ্ট্যান্ডার্ড’ অর্জন করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করা এই রেজিমেন্টকে জাতির পিতার নামানুসারে ‘মুজিব রেজিমেন্ট আর্টিলারি’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আজ মুজিব রেজিমেন্ট আর্টিলারির নিকট ‘নতুন পতাকা’ হস্তান্তর করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি এই ইউনিটের সকল সদস্যগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রওশন আরার আত্মত্যাগ ছিলো বীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার উৎস উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বকে সম্মানীত এবং স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর জন্মলাভ করে ‘রওশন আরা ব্যাটারী’।

তিনি বলেন, যুদ্ধপরবর্তী ১ মে ১৯৭২ সালে ‘রওশন আরা ব্যাটারী’, ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বিভিন্ন প্রশাসনিক, প্রশিক্ষণ, আভিযানিক কর্মকা- এবং প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ এই ইউনিট ২০১৯ সালে ‘রেজিমেন্টাল কালার’ এবং ২০২০ সালে গৌরবময় ‘ন্যাশনাল ষ্টান্ডার্ড’ অর্জন করে। আজ রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারির নিকট ‘নতুন পতাকা’ হস্তান্তর করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি এই ইউনিটের সকল সদস্যগণকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি এ সময় ১৯৭৫ সালের ১১জানুয়ারি কুমিল্লা মিলিটারি একাডেমিতে প্রথম ব্যাচের ক্যাডেটদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতার দেয়া ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেন ‘আমার মনে আজ যে কি আনন্দ, তোমাদের আমি তা ভাষায় প্রকাশ করে বলতে পারব না। যখন আমি আগরতলা মামলায় বন্দি ছিলাম, যখন পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী জেলে বন্দি ছিলাম, তখন ভাবতে পারিনি যে, একদিন এখানে তোমাদের প্যারেড হবে।’ এই মিলিটারি একাডেমী একদিন বিশ^ব্যাপী নাম করবে এবং সারাবিশে^র মানুষ এই মিলিটারি একাডেমী দেখতে আসবে’ বলে তিনি সে সময় আশা প্রকাশ করে যান মর্মে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা আমাদের মিলিটারি একাডেমীকে সে ভাবেই প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি।

সরকার প্রধান বলেন, অত্যন্ত পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে সরকার ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করে চলছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার (বিপিসি)’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘প্রতিরক্ষানীতি-২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। গত ১৩ বছরে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছি। আমাদের সামরিক বাহিনীতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তির সংযোজন করেছি। তার সরকারের সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের বিয়য়টি ও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার মান উন্নয়নের জন্য ফাইবার অপটিক ব্যবহারের পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। যা জোন সদর দপ্তর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন ভয়েস ও তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করবে। এ ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা এবং কৌশলগত প্রয়োজনে দেশব্যাপী সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন নিজস্ব টেলিযোগাযোগ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি। আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ সেনাবাহিনীর আভিযানিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জরুরী মেডিকেল ও রোগী স্থানান্তর সেবা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সহায়তা প্রদান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পরিবহনসহ নানাবিধ মিশন পরিচালনায় সক্ষমতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি পরিশেষে কভিড-১৯ এর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে একটি সুশৃঙ্খল ও মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপহার দেয়ার জন্য অংশগ্রহণকারি এবং ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত সকলকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে আয়োজন করায় সেনাবাহিনী প্রধান, জিওসি আর্টডক, জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং কমান্ড্যান্ট আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলকেও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এছাড়া গতকাল বঙ্গববন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মমতাজ আহমেদ ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে থাকে
Total Reply(0)
জুয়েল ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
আশা করি সবাই প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে সাড়া দিবেন
Total Reply(0)
salman ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ২:৪৮ এএম says : 0
Desh er Jonno thik ase, but ......................
Total Reply(0)
হাসান সোহাগ ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:২২ এএম says : 0
আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ সেনাবাহিনীর আভিযানিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জরুরী মেডিকেল ও রোগী স্থানান্তর সেবা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সহায়তা প্রদান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পরিবহনসহ নানাবিধ মিশন পরিচালনায় সক্ষমতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
Total Reply(0)
রুহান ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:২৩ এএম says : 0
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব
Total Reply(0)
ডালিম ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:২৪ এএম says : 0
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদাই দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকে
Total Reply(0)
সফিক আহমেদ ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:২৫ এএম says : 0
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে সম্মান ও মর্যাদা। যা বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন