শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আ.লীগের প্রতিপক্ষ আ.লীগ

ভাঙছে দলের চেইন অব কমান্ড ষ সহিংসতায় নিহত ৮ ষ বিদ্রোহী প্রায় সাড়ে সাতশ ষ আরো সহিংসতার শঙ্কা

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

আওয়ামী লীগের মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ। বিএনপি না থাকায় আগামী ১১ নভেম্বর আসন্ন দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রচুর বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে তৃণমূলে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে নিজ দলের নেতাকর্মীরাই। দলীয় কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূল পর্যন্ত। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। এরই মধ্যে মাগুরায় সহিংসতায় চারজন, সিলেটে ১ জন, রাঙামাটিতে ১ জন ও নরসিংদীতে ২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে মারামারি সহিংসতা হচ্ছে। নির্বাচন যতো এগিয়ে আসবে, সহিংসতা ততো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দিয়েও তৃণমূলে বিদ্রোহ থামাতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা। সহিংসতা কমাতে প্রায় শতাধিক ইউপি উন্মুক্ত নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় যে ইউপিতে বিদ্রোহী নেই, সেখানে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থীরা। এ নিয়েও উভয় সঙ্কটে পড়েছে সরকার। বিদ্রোহীদের নিয়ে দলের চেইন অব কমান্ড নষ্ট হওয়া, সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়া এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে জাতীয়-আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে পড়ার সমস্যা। এমনিতেই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে, ভোটাধিকার নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছে সরকার।

এদিকে প্রথমধাপে অনেক ইউপিতে এমন ঘটনা ঘটায় দ্বিতীয়ধাপে বিদ্রোহীর সংখ্যাও বেশি। বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের হুমকি দিয়েও বিপাকে দলের হাইকমান্ড। প্রায় হাজার খানেক নেতাকর্মী যারা ইউপিতে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বহিষ্কার করতে হবে দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে। আবার চাইলেই কাউকে বহিষ্কার করা যাচ্ছে না কারণ দলের হাইকমান্ড, এমপি-মন্ত্রীদের তদবির, কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধের কারণে গণহারে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংগঠন। এ নিয়ে ধীরগতি নীতি মেনে চলছে দলটি।
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয়ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়নে ভোট হবে। দুই ধাপেই বিনা ভোটে জয় পেয়েছেন ১৫৩ চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় ধাপে এরই মধ্যে ৮১ জন চেয়ারম্যানসহ ৩৬০ জন জনপ্রতিনিধি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের মধ্যে সংরক্ষিত সদস্য ৭৬ জন ও সাধারণ সদস্য ২০৩ জন রয়েছেন। তারপরও মাঠে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে প্রায় সাড়ে সাতশ’। এর আগে ২০ সেপ্টম্বর ও ২১ জুন প্রথম ধাপের ৩৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই ধাপে ৭২ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা জয়ী হন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ প্রার্থী। দুই ধাপের এক হাজার ২১০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিদ্রোহীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তাদের কথা বিএনপি নির্বাচনে নেই তাই দলীয় প্রার্থী হলেও ছাড় দেয়া হবে না। ভোটে যা হয় হবে। আর এই কারণে উত্তেজনা এবং সহিংসতাও বাড়ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের কথাও শুনছেন না কারণ এমপিরা তাদের নিজেদের লোকদের মনোনয়নের ব্যবস্থা করেছেন। জেলা-উপজেলা নেতারা কেন্দ্রে যোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থীদের নাম পাঠাননি। টাকার বিনিময়ে অনেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। রাজাকার পরিবারের সন্তান, হত্যা মামলার আসামি, নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত, চাল চোর, গম চোর, ভূমিদস্যু, দুর্নীতিবাজ, বিএনপি-জামায়াত নেতারা দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাই এসব দুর্নীতিবাজদের কিছুতেই ছাড় দিতে চান না তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা। কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের কথাও শুনছেন না বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আবার অনেক ইউপিতে এমপি ও জেলা নেতাদের প্রশ্রয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন অনেক পদধারী নেতারা। তৃণমূলের কোন্দন বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো সংসদ সদস্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত করার জন্য দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠিও দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে শরিয়তপুর ও মাদারীপুরের ৮৮টি ইউপিতে উন্মুক্ত নির্বাচন হবে। কারণ সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সংসদ সদস্যরা নিজেরা কোনো প্রার্থীর পক্ষে না থেকে সবাইকে পক্ষে রাখতে চান। এটা তারা করছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সবাইকে সাথে পাওয়ার আশায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মীজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় ‘নৌকার মনোনয়ন পেলেই পাস’ এ চিন্তা ধারা সবার মাঝে কাজ করছে তাই ইউপি প্রার্থীরা জনমুখী না হয়ে মনোনয়নমুখী ও প্রশাসনমুখী হচ্ছেন। ফলে তৃণমূলে রাজনৈতক দুর্বৃত্তায়ন হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে। টাকার বিনিময়ে কেন্দ্রে নাম পাঠাচ্ছে তৃণমূল নেতারা। এমপিরাও একই কাজ করছে। কথিত গোয়েন্দা সংস্থার পজিটিভ রিপোর্টের নামেও টাকা নেয়ার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, এসবের কারণে মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভের কারণে অনেক নেতাই বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। আবার প্রার্থী পছন্দ না এমপি, জেলা নেতারা নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী দাড় করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রকৃত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে দলের শৃঙ্খলা ফিরছে না। দিন শেষে দলের ক্ষতি হচ্ছে, চেইন অব কমান্ড নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে তৃণমূলের নির্বাচনের বিষয়টি সমন্বয় করছেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া আছে। সুতরাং কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এটা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিতে হয়। চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে নেওয়া যায় না। কিন্তু কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করে বা সংঘর্ষে জড়ায়, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সকল প্রার্থীদের সাথে কথা বলছি। যারা বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন তারা যেন দলের পক্ষে কাজ করেন সেজন্য বলা হচ্ছে। আমরা কাউকে বহিষ্কার করতে চাই না। সবাই দলের লোক। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেব।
সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সংঘর্ষ সহিংসতার বিষয়ে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবার বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর গতে বলা হয়েছে। বিদ্রোহীদের ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা সংগঠনকে বলা হয়েছে বহিষ্কার করার জন্য। দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কঠোর।

এদিকে দলের সিদ্ধান্ত কী তা দেখার সময় নেই এমন ভাব তৃণমূল নেতাদের। নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের উপর হামলা করছেন। বিদ্রোহীরাও পাল্টা জবাব দিচ্ছেন। ফলে সহিংসতা বেড়েই চলছে।
নরসিংদীতে নিহত ২ জন : নরসিংদীর রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল পাড়াতলীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহত দুজন হলেন কাচারিকান্দি গ্রামের মলফত আলীর ছেলে সাদির মিয়া (১৯) ও আসাদ মিয়ার ছেলে হিরণ মিয়া (৩৫)। আহত ব্যক্তিদের রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় দুইপক্ষই বর্তমানে সক্রিয়। এর মধ্যে শাহ আলম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদুর রহমানের সমর্থক। অন্যদিকে, ফজলুল হকের ছেলে শাহ আলম আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌস কামালের সমর্থক।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ মে ওই এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় সংঘর্ষে ৩ জন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছিলেন। এর পর থেকে ইউপি সদস্য শাহ আলমের পক্ষের লোকজন গা ঢাকা দেন। ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আবার এলাকায় ফিরে এলে বিরোধীপক্ষের লোকজনের সঙ্গে টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এতে টেঁটা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে নারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়াও মাগুরায় সহিংসতায় চারজন, সিলেটে ১ জন, রাঙামাটিতে ১ জন নিহত হয়েছেন।

গত ২৭ অক্টোবর ঢাকার ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন ওপর হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজহার আলীর সমর্থকরা। এ ঘটনায় আওলাদ হোসেনের ভাই মো. নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার জন্য ধামরাই থানায় এজাহার জমা দিয়েছেন। এছাড়া ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মজিবর রহমানের সর্মথকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছেন।

বগুড়া সদর উপজেলার নুনগোলা ইউনিয়নের রজাকপুর এলাকায় মঙ্গলবার রাতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আলিম উদ্দিনের পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন জেলা ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজার রহমানসহ পাঁচজন।
২০ অক্টোরবর শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এবং ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান খানের প্রার্থীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালান নৌকার প্রার্থী মিজান মোহাম্মদ।

বগুড়ার শিবগঞ্জে বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা : ২৭ অক্টোবর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলামের সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থী বিহার ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয় এবং কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলা করেছেন। এ ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন মতিউর রহমান। এছাড়া শেরপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর পূর্বপাড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণা সভায় হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

ভোলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর: ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, লুটপাট ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে ইউনিয়নের পাটওয়ারী বাজার ও চর টবগী গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাছির উদ্দিন ওরফে নান্নু এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জামালউদ্দিন একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চরগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ উঠেছে। সত্যতা জানতে প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে হাজির হলে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এমপি স্যারের সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে চিতলিয়া ইউনিয়নে কোনো নির্বাচন হবে না, সবাই সিলেক্টেড হবে। এই কথা এমপি মহোদয় বলেছেন।’
শরীয়তপুর-১ (সদর উপজেলা ও জাজিরা) আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপু। চিতলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২৫ জন সদস্যের স্বাক্ষর জাল প্রার্থিতা প্রত্যাহারে ঘটনা ঘটেছে।

শুধু নৌকায় যারা ভোট দিবে, তারাই কেন্দ্রে যাবে : গত ২৩ অক্টোবর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম এক সভায় বলেছেন, নৗকার সঙ্গে যারা বেইমানি করবে, তাদের হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র পাহারা দিয়ে যারা নৌকায় ভোট দিবে, তারাই কেবল ভোটকেন্দ্রে যাবে, অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই কাজই করে ফেলতে হবে। গোদাগাড়িতে যদি সব সেন্টার দখল করে নিয়ে নৌকার প্রার্থী জিততে পারে, আপনারা পারবেন না?

মাদারীপুরে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা, নারীসহ আহত ১৫ : মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমান ও শিকারমঙ্গল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ওই ২ প্রার্থীর স্বজনসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহীদ পারভেজ নির্বাচনী আলোচনা সভা করেন। এদিকে একই সময়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ও এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমান তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ইউপি ভবনের পাশ দিয়ে তাঁর বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। হাফিজুর রহমানের অভিযোগ, তাকে দেখে শাহীদ পারভেজের কর্মী-সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন। পরে তারা দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে তার (হাফিজুর) বাড়ি ও তার ভাই সোহারাব হোসেনের বাড়িতে আতর্কিত হামলা চালান। হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুড়ে ঘরের দরজা-জানালা, হাফিজুরের ১টি ব্যক্তিগত গাড়ি ও তার ঘরের সামনে থাকা ১০টি মোটরসাইকেলে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।

শিকারমঙ্গলে বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা: একই দিন শিকারমঙ্গল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিরাজুল আলম মৃধা, তার দুই ছেলেসহ কর্মী-সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল হকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্রোহীর ছড়াছড়ি, আছেন এমপিদের স্বজনরাও
যশোরের ঝিকরগাছায় ১১টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে আটটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে যশোর-২ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ নাসির উদ্দীনের ভাই ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম গিয়াস উদ্দীনও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন মাগুরা ইউপি থেকে। এ ছাড়া চৌগাছায় ১১ ইউপিতে ১৯ বিদ্রোহী আছেন।

শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৪ প্রার্থীসহ ৫৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ছয় ইউপিতে সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ মো. আতিউর রহমানের বড় ভাই মো. ইসমাইল হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তিনি কামারিয়া ইউনিয়ন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ীর ১৬টি ইউপিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে তানোরের ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৩৪ জন ও গোদাগাড়ীর ৯টি ইউনিয়নে ৩৮ জন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দুই উপজেলায় ২৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন।
পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউপিতে ৩৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। বিদ্রোহীদের মধ্যে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) আসনের সাংসদ আহম্মেদ ফিরোজ কবিরের ছোট ভাইও আছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম শামসুল আলম সাতবাড়িয়ায় নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পাবনা-২ (বেড়া-সুজানগর) আসনের সাংসদ আহম্মেদ ফিরোজ কবিরের ছোট ভাই আহমেদ ফেরদৌস কবির ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হোসেন।

লালমনিরহাটের আদিতমারীর আটটি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ছয়টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সারপুকুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য নীল কমল রায়। একই ইউপিতে আরেক বিদ্রোহী হচ্ছেন উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি বাদশা আলমগীর।
কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় ১৭টি ইউপিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দুই উপজেলায় ১৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের ১১ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে আটটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৩ জন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

নওগাঁয় ২০টি ইউপির বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৪২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী পাওয়া গেছে। সিরাজগঞ্জের ১৭ ইউপিতে ৩৫ জন, পাবনার ১০ ইউপিতে ৩৩, নেত্রকোনার ২৬ ইউপিতে ৩৬, নরসিংদীর ১২ ইউপিতে ৩২ এবং সুনামগঞ্জের ১৯টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ৩৩ জন বিদ্রোহী প্রার্থী।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবর ইউনিয়নের নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী এম এ আলীম বলেন, এলাকার জনগণ আমাকে চায় তাই দল মনোনয়ন না দিলেও আমি প্রার্থী হয়েছি। জনগণের দাবি তো আর আমি উপেক্ষা করতে পারি না। যিনি নৌকা পেয়েছেন তিনি আমার চেয়ে জনপ্রিয় কি না তা তো ভোটই বোঝা যাবে, জনগণ বলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
জাকের হোসেন জাফর ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকের সুফল।
Total Reply(0)
Prodip Kd ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
টাকায় প্রতিক দেয়া হয় কিন্তু টাকা ছাড়া দলীয় ত্যাগী নেতাদের কোনো মূল্যায়ন দেয়া হয় না , দুঃখ জনক ঘটনা
Total Reply(0)
Kaji Naim ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
ত্যাগী নেতাদের দলে কোন মূল্য নেই। তেল বাজের রাজনৈতিক চলছে সোনার বাংলায়।
Total Reply(0)
Suleman Sani ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
চমৎকার
Total Reply(0)
Ala Uddin Khan ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
রক্তাক্ত হয়ে উঠছে দেশ,বিভাজন আর বিভক্তি নিয়ে একে অন্য কে গায়েল করতে মরিয়া, আল্লাহ জানেন ভবিষ্যৎ কি হতে চলছে,,,,,
Total Reply(0)
Rubel Hasan ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
আগে নির্বাচন দেখছি জনগণ যাকে ভালো লাগছে তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করছে ,আর এখন আওয়ামীলীগ যাকে নমিনেশন দিবে সেই জয়যুক্ত হবে তাহলে বাকী নেতারা কি করবে ,
Total Reply(0)
Nasir Uddin Muznu ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। বিএনপিকে ধন্যবাদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়ায়।
Total Reply(0)
Musa Farhan ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
আল্লাহ জালেমদের ধংস করবেন।।একদিন আগে বা পরে।।
Total Reply(0)
Nasir Uddin Biplab ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
স্বাভাবিক। তেলবাজ আর টাকাওয়ালাদের দলীয় প্রতিক দিলে যা হওয়ার।।ত্যাগীদের কোনো খবর নাই,প্রতিক দেয় স্মাগ্লার,সন্ত্রাসীদের। সব দল,দেশের জন্য ক্ষতিকর।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন