মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রাজনীতিহীনতার কুফল

| প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ কিছু দল চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীতি এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, সংঘর্ষ ও নিহত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ শুধু আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ার অর্থ হচ্ছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এবং ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হওয়া। ফলে মনোনীতি এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষমতা লাভের লোভের কারণে নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার হিড়িক দেখা গেছে। সংঘাত ও খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে। আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা সংঘাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। সহিংসতায় মাগুরায় ৪ জন, সিলেটে, ১ জন, রাঙামাটিতে ১ জন ও নরসিংদীতে ২ জন নিহত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ইউপি নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও বিব্রত। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হাইকমান্ডের কথা কম আমলে নিচ্ছে। হাই কমান্ড নানা ব্যবস্থা নিলেও তাতে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, সংঘাত-সংঘর্ষ যে ততই বৃদ্ধি পাবে, তা আগাম বলা যায়।

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। বর্তমান কমিশনের অধীনে জাতীয় এবং স্থানীয়সহ যত ধরনের নির্বাচন হয়েছে, তার প্রায় সবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই কমিশন চরম ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হচ্ছে, তা সামাল দিতে নির্বাচন কমিশন যেমন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, তেমনি ক্ষমতাসীন দলও তার নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। নিজেদের মধ্যে মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যকার সংঘাত ও পারস্পরিক বিরোধিতা থামাতে পারছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, দল যাকে মনোনয়ন দেয়, তার বিরোধী প্রার্থীরা এসে তাকে রাজাকারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছে। এ এক মহাসমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার এ কথা থেকেই বোঝা যায়, যেখানে একতরফা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার কথা, সেখানে তা না হয়ে প্রার্থীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে নির্বাচনকে কলুষিত করে ফেলছে। এমনিতেই দেশে-বিদেশে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে না পারা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। তার ওপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ সরকারের ভাবমর্যাদাকে আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে যা হচ্ছে, তা কেবল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছাড়া কিছু নয়। তারা মনে করছে, ক্ষমতায় যেতে পারলে তারা সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। ফলে যেভাবেই হোক, নির্বাচিত হতে হবে। এর ফলে প্রার্থীদের মধ্যে মাস্তান ও সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এখানে রাজনীতিক হয়ে ওঠার মানসিকতা বা সুষ্ঠু রাজনীতি বলতে কিছু নেই। এটা রাজনীতি শূন্যতার ভায়াবহ কুফল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বহুদিন ধরেই এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন দলের একচেটিয়া ক্ষমতা ও আধিপত্যের কারণে বিরোধী রাজনীতি একপ্রকার উধাও হয়ে গেছে। বিরোধী রাজনীতি না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপরই বর্তায়। বহু বছর ধরেই সরকারকে এ দায় বহন করতে হচ্ছে। এখন সরকারের দায়িত্ব এ পরিস্থিতির অবসান ঘটানো এবং আর বাড়তে না দেয়া। এজন্য তাকে দেশে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যাতে সুস্থধারার রাজনীতি করার সুযোগ পায়, এ অবস্থা তৈরি করতে হবে। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বিরোধীদলের রাজনীতি অপরিহার্য। এক্ষেত্রে ব্লেম গেইমের মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি। বর্তমানে যে রাজনীতিশূন্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এ পরিস্থিতির অবসানে সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও সমঝোতা থাকা আবশ্যক। তা নাহলে, একতরফা রাজনীতি ও নির্বাচনের জেরে সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়বে, থামানো যাবে না। রাজনৈতিক অঙ্গনও উত্তপ্ত থাকলে কর্মপরিবেশ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে রাজনীতিহীন অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে হবে। এখন থেকেই সরকার ও বিরোধীদলগুলোকে কাজ করতে হবে। একটি সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির পথ তৈরি করতে হবে। গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সরকার ও বিরোধীদলগুলোকে একসঙ্গে কাজ হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন