শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সোনালি আসর

হেমন্ত তোমায় স্বাগতম

প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সা ঈ দ মা হা দী সে কে ন্দা র
বাংলাদেশে ঋতু বিশেষ প্রকৃতির ভিন্নতা বাংলা সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে থাকে। ঋতুবৈচিত্রতা পরিবেশে আনে ভিন্নতা সুতরাং মানব জীবনের পথচলায় বাংলাদেশে ঋতুসমূহ এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু, যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের সমন্বয়ে গঠিত। শরৎকালের পর এই ঋতুর আগমন। এর পরে আসে শীত তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এ দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের। ‘মরা’ কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্নে। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এ দু’অংশের অর্থ যথাক্রমে ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’। সম্রাট
আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ব হয়। এ ঋতুতে ফোটে
গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি,
কামিনী, হিমঝুরি, দেবকাঞ্চন,
রাজ অশোক।
হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়। নবান্ন (অর্থঃ নতুন অন্ন) পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। নবান্ন হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব যা সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। নবান্নে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়। নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্য মেলায়।
নবান্ন, হেমন্ত ঋতুর শান্ত প্রকৃতি অনেক কবি সাহিত্যিক নানা ভাবে তাদের রচনায় তুলে ধরেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সুফিয়া কামাল, জসীম উদ্দীন, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ।
কাজী নজরুল ইসলামের ‘অঘ্রাণের সওগাত’ কবিতায় নবান্নের চিত্রটি বেশ উপভোগ্য।বিশ্বকবি তাঁর নৈবদ্যে স্তব্ধতা কবিতায় লিখেছেনঃ ‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার
রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার
স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।’
বাংলা কবিতা তার পথ পরিক্রমায় একেক দশকে একেক চারিত্র্য নিয়ে অগ্রসর হলেও স্বদেশের রূপবৈচিত্র্যের রূপায়ণে অনড়। আর এই কাজে কবিদের সংবদেনশীলতা জুগিয়েছে এ দেশের ঋুুবৈচিত্র্য। জীবনানন্দ দাশের কবিতার প্রধান অনুষঙ্গ হেমন্ত। ঋতু হেমন্ত বাংলা সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ।
হেমন্তের সোনালি ধান আর তার শিশির বিন্দু আমাদের প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্য। ঠিক তেমনি হেমন্ত নিজে ঋতু হিসেবে সমৃদ্ধ। হেমন্ত তার রূপবৈচিত্র্য নিয়ে আবহমান বাংলায় টিকে থাকবে যুগে যুগে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন