শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মাঠে ধরা, কথায় চ্যাম্পিয়ন!

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

অন্যান্য দেশে সারা বছর যাই হোক, ক্রিকেটারদের সাথে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ যত কোন্দলই থাকুক বিশ্বকাপের সময় সেগুলা মিডিয়ায় একদমই আসে না, বিশ্বকাপের সময় সবাই ভেদাভেদ ভুলে যান, দোস্ত-দুশমন ভুলে যান, হাতে হাত মেলান। বরং দলের ভালো-খারাপ সবসময়ই বোর্ড যথেষ্ট সমর্থন করে। মানে ক্রিকেটার আর বোর্ডের মাঝে কোনো ডিসটেন্স থাকলেও সেটা কেউই মিডিয়ায় প্রকাশ করে না। কারণ এই ইভেন্ট গুলাতে তাঁদের লক্ষ্যই থাকে দলীয় পারফরম্যান্স আর রেজাল্টের দিকে।

পাকিস্তানের নতুন বোর্ড সভাপতি এলো, বিশ্বকাপের আগে স্কোয়াডে পরিবর্তন, কোচিং প্যানেলে পরিবর্তন- এতো কিছুর পরেও এদের পারফরম্যান্সে কোনো নেতিবাচক প্রভাবই পড়ে নাই। এমনকি বোর্ড থেকেও যথাযথ সর্বোচ্চ সমর্থন করা হচ্ছে। খেলোয়াড়রাও দলগত ভাবে নিজেদের সেরাটা দিচ্ছেন।
এই যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা হারলো ভারত। বোর্ড ঢালাওভাবে কারো সমালোচনা করছে মিডিয়ার সামনে? সৌরভ গাঙ্গুলি কোনো কথা বলেছে? উনিতে আরব আমিরাতেই আছেন। ওনার পেছনে তো আরো বেশি মিডিয়া ঘুর ঘুর করেন। আর সাবেক অধিনায়ক, বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা অধিনায়ক হিসেবেও তিনি কত কথাই বলার যোগ্যতা রাখেন, তারপরও বলেন না দায়িত্ববোধের কারণে। হয়তো বিশ্বকাপের পরে এদের পারফরম্যান্স বা নেগেটিভ কিছু থাকলে সেটা নিয়ে ঠিকই বলবেন, কিংবা বলবেন না মিডিয়ায়- জায়গা মত বলবেন। কিন্তু, টুর্নামেন্টের মাঝপথে মিডিয়ার সামনে ছেলেমানুষসুলভ আচরণ করবে না। ক্রিকেটাররাও একজন আরেকজনকে সমর্থন করছেন। ভুলত্রুটি সবার মধ্যেই আছে কিন্তু তারাও জানে এইটা সঠিক সময় না।
ঠিক উলটো পথে আছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ বা আইসিসির ইভেন্ট আসলেই দেখা যায় প্রেস কনফারেন্সে প্লেয়ারদের আবেগ, বোর্ড প্রেসিডেন্টের অযাচিত আক্রমণাত্মক মন্তব্য, এক পক্ষ আরেক পক্ষের মাঝে কাঁদা ছোড়াছুড়ি। ক্রিকেটাররা দেখায় আবেগ, বোর্ড সভাপতিও ঢালাওভাবে সমালোচনা করে। এরপর সিনেমার মতো সাইড ক্যারেক্টার হিসেবে আরো অনেকেই এখানে সামিল হয়। আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার মতো এরাও দুই-চারটা লাইন বলে ষোলকলা পূর্ণ করে। মনে হইতেছে আমরা বিশ্বকাপ না রণক্ষেত্রে আছি। কে কারে কথা দিয়ে মাত দিতে পারে এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে!
আমরা একমাত্র দেশ যাদের এখন কোনো রিজার্ভ খেলোয়াড় নেই বিশ্বকাপে! আমরা একটা অতিরিক্ত খেলোয়াড়কে রাখতে পারি না, কিন্তু দেখা যায় পিকনিক করতে ঠিকই বোর্ডের ৭-৮ জনের একটা বহর দলের সাথে আছে। একজন আছে ‘জিতলে আমার, হারলে তোমাদের’- এই নীতিতে চলে।
মানে বাকি দেশগুলার কাছেও নিজেদেরকে হাসির পাত্র নিজেরাই বানাচ্ছি। কথার লড়াইয়ে শুধু বোর্ড আর ক্রিকেটাররা নায়, ক্রিকেটারদের স্ত্রী, সাবেক অধিনায়ক- সবাই যোগ হচ্ছেন। বিশ্বকাপের মঞ্চটা এদের জন্য বলা চলে কমেডির জায়গা। আর সমর্থকরা প্রতি ম্যাচেই আশা নিয়ে বসে এই ম্যাচে হয়তো দলের কাছ থেকে ভালো কিছু পাবো। অন্যান্য দল বিশ্বকাপে যায় জয়ের ইন্টেন্ট নিয়ে আর আমরা যাই দায়টা কার উপর চাপানো যায় এই ইন্টেন্টে!
২০১৬ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন হল। ফাইনালে পুরস্কার বিতরণীতে ড্যারেন স্যামি খোলাসা করেছিলো বোর্ড তাদেরকে বিন্দুমাত্র সমর্থন করেনি, খরচ বহন করে নি। আমরা হলে নিজের খরচ তো দূর, মিডিয়া ডেকে আন্দোলনে বসতাম। মাঝেমাঝে মনে হয় আমরা যদি স্বপ্নেও ভারত-পাকিস্তানের জায়গায় থাকতাম তাহলে কথা চালাচালিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে দিতাম।
ওদিকে নামিবিয়া নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসে সুপার টুয়েলভেও প্রথম ম্যাচ জিতে গেছে! আর আমরা ১৫ বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলার পরেও বাছাইপর্ব পার হতে সহযোগী দেশগুলার সামনে খাবি খাওয়া লাগে। ওয়াসিম আকরাম, নাসের হুসেইনরা বাংলাদেশের প্ল্যানিং নাকি বুঝতে পারছেন না! এরা যে ২-৪ মিনিট আমাদের নিয়ে ভাবছে এটাই অনেক বড় ব্যাপার।
মাঠের খেলায় কাউন্টার অ্যাটাক দিতে না পারলেও কথার কাউন্টার দিতে একেকজন নিজের সেরাটা দিচ্ছে। বিশ্বকাপ বাদ দিয়ে ‘বাকবিতণ্ডার’ একটা প্রতিযোগিতা রাখলে ওখানে নি:সন্দেহে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে এটা হলপ করেই বলা যায়!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন