প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, সরকার দেশের বেসরকারীখাতের বিকাশে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জ্বালানী, বিদ্যুৎ, টেলিভিশন, মোবাইল, ব্যাংকিং, ইন্স্যুরেন্স প্রভৃতি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য সুযোগ উন্মুক্ত করেছে। সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২২৭ মার্কিন ডলার উন্নীত হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে তা আরো বাড়বে। অবকাঠামো খাতে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তার প্রাপ্তির জন্য আমাদের আরো কৌশলী হতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মত প্রকাশ করেন। এজন্য বাংলাদেশে একটি কার্যকরী বন্ড মার্কেট চালু করণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন।
গতকাল ‘দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন ঘাটতি পূরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক এ বাণিজ্য সম্মেলনের ৬ষ্ঠ দিন ‘দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন ঘাটতি পূরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাক্তন মুখ্য সচিব ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমানে আমাদের ব্যাংকসমূহে প্রচুর অলস টাকা রয়েছে, যদি আমরা এ ধরনের অলস টাকা বন্ডে স্থানান্তরিত করতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনীতি সত্যিকার অর্থে উপকৃত হবে।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো খাতের টেকসই উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, আমাদের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে এবং জিডিপি’র ৪ শতাংশ এখাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে, যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো ডিজিপি’র প্রায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ এজন্য বিনিয়োগ করে থাকে। এমতাবস্থায় ডিসিসিআই সভাপতি অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা নিশ্চিতকল্পে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে মো. নজিবুর রহমান বলেন, সরকার আমাদের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে অবকাঠামো খাতে উল্লেখজনক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হতো। তবে এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা। তিনি ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে দেশের বেসরকারি খাতে মধ্যকার পার্টনারশীপ আরো জোরারোপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের পুঁজিবাজার এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ (পিজ)’-এর চেয়ারম্যান এন্ড্রু বেনব্রিজ বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আমরা অত্যন্ত আগ্রহী এবং এর সম্ভাবনা নিয়ে ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করেছি। তিনি জানান, গত ২০ বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে।
গ্যারাঙ্কো’র চেয়ারম্যান ইউকিকো মুরা বলেন, স্থানীয় পুঁজিবাজার উন্নয়ন, ঋণ সহায়তা প্রদান, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে গ্যারাঙ্কো কাজ করতে আগ্রহী। যা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, যেটি জনগনের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে।
গ্যারাঙ্কো এশিয়া-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিশান্ত কুমার বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে সমীক্ষা করে বেশকিছু অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করেছে এবং আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যৎতে তা অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন টেকনাফ সোলারটেক নামক নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
এছাড়াও ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ, স্ট্যাডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং হেড অফ ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট মুহিত রহমান, মেটলাইভ বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম আলা আহমেদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ’র চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং টেকনাফ সোলারটেক-এর ব্যবস্থপনা পরিচালক নূহের লতিফ খান প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা প্রদানে সরকারের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী বন্ড চালুর জন্য পুঁজিবাজারের ওপর আরো বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। তিনি এখাতের উন্নয়নে এককভাবে ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার আহ্বান জানান।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ’র চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড চালুর মাধ্যমে ফান্ড তৈরির প্রস্তাব করেন। টেকনাফ সোলারটেক-এর ব্যবস্থপনা পরিচালক নূহের লতিফ খান বলেন, বাংলাদেশের জনগনের দক্ষতা উন্নয়নে গ্যারাঙ্কো কাজ করছে, বিভিন্ন খাতে তাদের এ ধরনের বিনিয়োগ আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন