বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার দেড় হাজার কোটি টাকা হলেও, তারা সুকৌশলে মানমাত্র ভ্যাট দিয়েছে। ফলে বছরে কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে কোম্পানিটি। এতে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
কোম্পানিটি বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও আইন না মেনে বছরের পর বছর বিক্রির তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ-ভ্যাট) অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ মে এলটিইউ’র একটি দল সিঙ্গার বাংলাদেশের সাভারের গেন্ডা এলাকার গেন্ডা ওয়্যারহাউস এবং অপর একটি দল ঢাকার ফুলবাড়িয়া ওয়্যারহাউসে অভিযান চালায়। ওই পরিদর্শন ও তল্লাশি কার্যক্রমে কোম্পানিটির বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলপত্র জব্দ করা হয়। এসব দলিলাদি যাচাই করে একই প্রতিষ্ঠানের একাধিক জায়গায় অবৈধ রেয়াত গ্রহণ, বিক্রির বিপরীতের ভ্যাট ফাঁকির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ১৪ জুন সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে এলটিইউ।
এলটিইউ’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সিঙ্গার বাংলাদেশের তিনটি মূসক নিবন্ধন রয়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গারের একটি কারখানা এলটিইউতে নিবন্ধিত। আর সিঙ্গারের সঙ্গে একীভূত হওয়া কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লায়েন্সের নামে ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে নিবন্ধিত। এছাড়া সিঙ্গারের বিক্রয়কেন্দ্র ঢাকা (দক্ষিণ) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে নিবন্ধিত। এ তিন জায়গায় মূসক নিবন্ধন থাকায় কোম্পানিটি তিন পৃথক জায়গায় কোম্পানিটি ভ্যাট ও রেয়াত জালিয়াতি, নিবন্ধনহীন বিক্রয়কেন্দ্র ও ওয়্যারহাউস পরিচালনা করে আসছে। এদিকে সিঙ্গার বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের আওতায় ১১০টি বিক্রয়কেন্দ্র ঢাকা (দক্ষিণ) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে নিবন্ধিত। তবে এলটিইউ’র অনুসন্ধানে জব্দ করা দলিলাদি হিসেবে সিঙ্গার বাংলাদেশের প্রকৃত বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৪টি। কিন্তু ঢাকা (দক্ষিণ) কমিশনারেটের আওতাধীন মতিঝিল বিভাগে কেন্দ্রীয় নিবন্ধনে কোম্পানিটির বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১১০টি।
বাকি ৩১৪টি বিক্রয়কেন্দ্র মূসক নিবন্ধনের আওতাবহির্ভূত। ফলে এসব বিক্রয়কেন্দ্র থেকে ভ্যাট আদায় করা হলেও সরকার তা পায় না বলে এলটিইউ জানিয়েছে।
এছাড়া সিঙ্গার বাংলাদেশের ১৯টি ওয়্যারহাউস রয়েছে, যা মূসক নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। কোম্পানিটি দেশে কিছু পণ্য উৎপাদন করে। আর কিছু পণ্য আমদানি করে বাজারজাত করে। উৎপাদন ও আমদানির পর পণ্যগুলো এসব ওয়্যারহাউসে রাখা হয়। এসব পণ্য ওয়্যারহাউস থেকে বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে বিক্রি করা হয়। আবার ওয়্যারহাউস থেকে ডিলার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি ও সরবরাহ করা হয়। তবে কোম্পানিটি ওইসব ওয়্যারহাউসের কোনো ভ্যাট দেয় না। এসব বিক্রয়কেন্দ্র ও ওয়্যারহাউস মূসক আইন লঙ্ঘন করে পরিচালনা করা হচ্ছে বলে এলটিইউ’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
সিঙ্গার বাংলাদেশের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আকরাম উদ্দিন আহমেদ জানান, সিঙ্গার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এলটিইউ ভ্যাট ফাঁকির মামলা করেছে কি-না তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে এলটিইউ’র কাছ থেকে কোনো চিঠি পাইনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন