তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, সন্ত্রাস প্রতিরোধের প্রয়োজনে তুরস্ক সীমান্ত অতিক্রম করে অভিযান চালাবে। ইতালির রোমে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে সোমবার তুরস্কে ফেরার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে একইসাথে সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, যদি আমরা ন্যাটোর মিত্র হই, মিত্রকে কখনোই জটিল পরিস্থিতে ফেলতে হয় না। সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করা কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠী ওয়াইপিজিকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। অপরদিকে সংগঠনটিকে তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পিকেকের সাথে সংযোগের অভিযোগে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে আঙ্কারা। এদিকে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে এক বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন এরদোগান। বৈঠকের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, বৈঠকে তারা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক বন্ধন আরো জোরদার করা এবং আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পারিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাওয়ার বিষয়েও বাইডেনের সাথে আলোচনা হয়েছে বলে জানান এরদোগান। বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোনো নেতিবাচকতা লক্ষ্য করিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরির প্রকল্পে এর আগে তুরস্ক বিনিয়োগ করলেও রাশিয়ার কাছ থেকে আকাশ প্রতিরক্ষায় এন-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার কারণে প্রকল্প থেকে তুরস্ককে বাদ দেয়া হয়। এর বদলে তুরস্ককে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই বিষয়ে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ওয়াশিংটনে বৈঠকের কথা রয়েছে বলে তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সোমবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানায়। অপর এক খবরে বলা হয়, তুরস্কে পুরাতত্ত্ববিদরা মহাবীর আলেকজান্ডারের সময়কালের বহুমূল্য সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন। পাশাপাশি সেখানে পাথর কেটে তৈরি ৪০০ সমাধিও পাওয়া গেছে। এই সমাধিক্ষেত্র প্রায় ১৮০০ বছরের পুরনো। এই কবরস্থানের দেয়ালে রয়েছে সুন্দর ওয়াল পেন্টিং। স্থানীয় মানুষজন এই আবিষ্কারকে গুপ্তধন বলে অভিহিত করছে। জানা গেছে যে, রোমান সাম্রাজ্যের সময়কালের পাথর কেটে তৈরি হয়েছে এই সমাধিক্ষেত্রে। তুরস্কের এজিয়ান সাগরের পূর্বদিকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক শহর ব্লানডোসে পাওয়া গিয়েছে এই সমাধিক্ষেত্রে। তুরস্কের এই শহরটি আলেকজান্ডারের সময় বিকশিত হয়েছিল। রোমান এবং বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের সময়কাল পর্যন্ত এই শহরে স্বর্ণযুগ চলেছিল। তুরস্কের এই গুহাগুলোতে সার্কোফ্যাগী নামের একটি প্রক্রিয়া করা হত। সার্কোফ্যাগী শব্দের অর্থ গুহার মধ্যে রাখা মৃত প্রাণী বা মানুষের দেহ। প্রচলিত মত অনুযায়ী, মারা যাওয়ার পর মানুষের আত্মা এই সমাধিক্ষেত্রে ততদিন বিশ্রাম নেয়, যতদিন না তাদের দ্বিতীয় জন্ম হয়। ফলে ওই সমাধিক্ষেত্রে সেই মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও রাখা হত। বিরোলের নেতৃত্বে তার দল এখানে চার রকমের সামাধিক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছেন। এখনে একটি ঘর সম্বলিত সমাধি ক্ষেত্রও রয়েছে। এমনকি কিছু বেশকিছু দ্র্দুান্ত ঘর সম্বলিত সমাধিক্ষেত্রও রয়েছে। এই ঘরগুলি একটি ছন্দে বা এক সমান্তরালে তৈরি করাও নয়। প্রথমে একটি ঘর তৈরি করা হত, তারপর প্রয়োজন পড়লে পাশের পাথর কেটে অন্য ঘর তৈরি করা হত। তারপর তা প্রথম ঘরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হত। এইভাবে অন্তিম সংস্কার করার জন্য বেশি জায়গা তৈরি হয়ে যেত। এইভাবেই দুই কামরা, তিন কামরা এবং চার কামরা সম্বলিত সমাধিক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তুরস্কের ইউসাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিদ বিরোল ক্যান এই খনন কার্যের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানিয়েছেন, এই সমাধিক্ষেত্রের ভেতর পরিবারতন্ত্র ছিল। অর্থাৎ একটি সমাধি গুহা বা তার বেশি গুহায় কোনও একটি পরিবারের এবং বাকিগুলো অন্য কোনও পরিবারের সমাধিক্ষেত্র ছিল। বিরোল ক্যান আরও জানিয়েছেন, পুরাতত্ত্ববিদরা নেক্রোপলিসের ব্যাপারে ১৫০ বছর ধরে জানতেন, কিন্তু ব্লানডোসে কখনও সঠিকভাবে খননকার্য করা হয়নি। বিরোলের মতে এখনও এই শহরের নীচে বেশকিছু ধার্মিক, সার্বজনিক এবং নাগরিক কাঠামো রয়েছে। এগুলির খোঁজ করা বাকি রয়ে গেছে। টিআরটি ওয়ার্ল্ড, আনাদোলু।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন