শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডাকসু নির্বাচন কতদূর

ভোটের জন্য মুখিয়ে শিক্ষার্থীরা : নীরব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

দীর্ঘ ২৮ বছর ২০১৯ সালে ফের শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদগুলো ফিরে পেয়েছিল প্রাণচাঞ্চল্য। সেই নির্বাচনে ভিসি নির্বাচিত হয়ে নুরুল হক নুরু এখন অন্যদের মতোই জাতীয় নেতা হওয়ার পথে। দীর্ঘদিনের বন্ধাত্ব ঘুচে শিক্ষার্থীরা ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন নতুন ধারা অব্যাহত থাকবে প্রতিবছর। মেয়াদ শেষে আবারও নির্বাচন, নতুন নেতৃত্ব, নতুন করে প্রচার-প্রচারণা, প্রাণ ফিরবে বিশ্ববিদ্যালয়, হল, মধুর ক্যান্টিনসহ পুরো ক্যাম্পাসে। কিন্তু বহুল প্রত্যাশিত ডাকসু নির্বাচনের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন নির্বাচন নিয়ে উদাসীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বার বার দাবি জানানোর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরবতায় ডাকসু নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ধারণা অতীতের মতো এবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে এড়িয়ে যাবে ডাকসু নির্বাচন। তাই করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর থেকেই নির্বাচনের দাবিতে সরব তারা।

ডাকসু সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কেন্দ্রস্থল। বলিষ্ঠ নেতৃত্ব সৃস্টির সূতিকাগার। গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা আর জবাবদিহিতার অন্যতম শিক্ষাগৃহ। ডাকসুর নেতৃত্বেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৯০’র গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিটিতেই অগ্রদূত ছিলেন ডাকসু নেতারা।
‹৯০-এর পর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হয়। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ। এবং বর্ধিত ৯০ দিনও শেষ হয় গতবছরের ২০ জুন। এরপর মহামারী করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরের অক্টোবরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরেই আবারও নির্বাচনের দাবি তোলেন তারা।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ধরে রাখতে অবশ্যই সংসদ কার্যকর রাখতে হবে এবং সিনেটে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকতে হবে। আমাদের দাবি-দাওয়া যদি সিনেটে উপস্থাপন করা না যায় তাহলে কীভাবে অধিকার আদায় করব? আর এ জন্যই আমাদের দরকার ডাকসু।

কবি জসিমউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ডাকসু ও হল সংসদ সচল থাকার কারণে হলের খাবারের মান উন্নয়ন থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টের উন্নয়ন ফি কমানোসহ নানাবিধ কাজ হয়েছে। যেগুলো আগে কখনো হয়নি। ছাত্রনেতারা চেষ্টা করেছেন শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে। হলগুলোতে গণরুম, গেস্টরুমের বলয় অনেকাংশে লাঘব হয়েছে এবং ছাত্রলীগ নেতাদের কথা বলার যে টোন, সেটাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এছাড়াও হলগুলোতে পানির ফিল্টারসহ নানাবিধ সংস্কারমূলক কাজ করেছে ডাকসু। বিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্টসদের জন্য সাপ্লিমেন্টারী সিস্টেম ও চালু করেছিল ডাকসু। তাই কিছু লিমিটেশন থাকা সত্ত্বেও আমরা চাই আবারও ডাকসু নির্বাচন হোক।

বিজয় একাত্তর হলের সাবেক এজিএস আবূ ইউনুস বলেন, ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের শিক্ষার্থীর স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরার আইনি কোনো বৈধতা নেই। ছাত্র সংসদ থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি হলে সেটি করা যায়।
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা বলা এবং শিক্ষার্থীদের বিষয় নিয়ে যে আলোচনা সেটা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনগতভাবে লিগ্যাল জায়গা হলো ডাকসু। আইনুনসারে প্রতিবছর ডাকসু দেওয়া এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব। শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অর্ডিয়েন্স, সে অর্ডিয়েন্স রক্ষা করার জন্য ডাকসুর প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি এবং জেনেছি যে তারা সবাই ডাকসু চায়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিস্থিতি তা হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যা চায় তা তারা বলতে পারে না। এজন্য বিষয়টা হয়ত প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।
ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন সিনেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দ্রুত ডাকসু দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনসহ নানান কাজ হয়েছে। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যদি স্বদিচ্ছা থাকে তাহলে অবশ্যই তারা ডাকসু নির্বাচন দিতে পারে। আমি ভিপি থাকা অবস্থায় ভিসির সাথে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি কিন্তু আমার মনে হয়েছে যে, তিনি বিষয়টি নিয়ে পজিটিভ না। তিনি আসলে বোঝাতে চান যে সরকার না চাইলে তিনি এটা করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, দেশে স্বৈরশাসকদের সময়ে ডাকসু নির্বাচন হলেও বর্তমানে সেটা আর নেই। ফলে ছাত্ররাজনীতিতে একটা অধঃপতন তৈরি হয়েছে এবং ছাত্ররাজনীতিতে একটা পেশিশক্তি - অর্থ নির্ভর সন্ত্রাসী রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং ছাত্র রাজনীতিতে সুষ্ঠু ধারা ফিরিয়ে আনতে অবশ্যই ডাকসু নির্বাচন হওয়া জরুরি।
নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর ড.একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, কেবল বিশ্ববিদ্যালয় খুললো। ক্লাস চলছে। আমরা লস রিকভারি প্ল্যান বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে যদি ডাকসু নিয়ে কোন কথা উঠে তো আমরা সেটা জানাবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান ডাকসুর কথা শুনে অনেকটা ইতস্তত বোধ করে বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি। ডাকসু নিয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিই তো প্রথমে তোমাকেই জানাবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন