বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অর্থনৈতিক অঞ্চল ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফেনীবাসী আরেকটি সুফল পেতে যাচ্ছে সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ নদী বন্দর। এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন ঘোষণা করেছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-বন্দর স্থাপনের বিষয়ে সম্ভ্যাবতা যাচাই শেষে এটি অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে গত মাসের ২৪ তারিখ কোম্পানীগঞ্জ নদী বন্দর স্থাপনের প্রাথমিক গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় ফেনী ও নোয়াখালী জেলার মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে।
অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ নদীবন্দর স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবে এবং অর্থনীতির চাকা আরও সচল হবে। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, নৌ-বন্দর স্থাপন হলে নির্মিতব্য দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সাথে নৌ-পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হবে। এছাড়াও সড়ক পথে পণ্য পরিবহনের চাপ অনেকাংশে কমে যাবে।
নৌবন্দর স্থাপন হলে এবং সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকায় একটি আউটার বেড়িবাঁধ বা মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করা হলে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ হবে দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর। সেখানে পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে।
এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক ও তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী একেএম সাহেদ রেজা শিমুল বলেন, ফেনীতে স্থানীয়ভাবে কোন শিল্পাঞ্চল নেই। অথচ প্রকৃতির নানাবিধ সুযোগ সুবিধা এখানে রয়েছে। নদী বন্দর গড়ে উঠলে শিল্পায়ন আরও বাড়বে। মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
ফেনী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আইনুল কবির শামীম বলেন, দেশের দক্ষিণ পূর্ব অংশে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নদী পথে পণ্য খালাসে বাড়তি সুবিধা পাবে। এতে পরিবহন ব্যয় অনেক কমবে।
নদী বন্দরের কার্যকারিতা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকার সাপ্লাইয়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, এটি বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় সুযোগ তৈরি করবে। এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। ফেনী যেহেতু সীমান্তবর্তী জেলা তাই ত্রিপুরা অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ নদী বন্দর ঘোষণার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ছয় সদদ্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাপ্ত প্রতিবেদন হতে জানা যায়, গত বছরের ৬ ও ৭ নভেম্বর সরেজমিনে পরিদর্শন করেন গঠিত কমিটি। এতে উপস্থিত ছিলেন সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহম্মেদ লিপটন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ একাধিক জনপ্রতিনিধি।
দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল পার্শ্ববর্তী হওয়ায় সন্ধীপ চ্যানেলে নাব্যতা ও প্রস্থতা থাকায় প্রস্তাবিত নদীবন্দরের তৃণভূমিতে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বাজার এবং নদী কেন্দ্রীক বিভিন্ন স্থাপনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদী বন্দর স্থাপন হলে সরকারের বিপুল রাজস্ব অর্জিত হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সন্দীপ চ্যানেলের ফেনী নদী মোহনায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর গড়ে উঠেছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশী বিদেশী বহু শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এ শিল্পাঞ্চল ঘিরে দেশীয় ছোট বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলের প্রয়োজনে সোনাগাজী উপকূলে দীর্ঘ রাস্তা ও ব্রিজের কাজ চলছে। উপজেলার বড়ধলী এলাকায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। প্রতিবেদনে বন্দরের উপযোগিতার অনুকূলে বলা হয়, সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন ফেনী নদী ক্লোজার এর পর হতে মোহনা পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য ট্রলার এর মাধ্যমে পরিবাহিত হতে দেখা যায়। এছাড়া সোনাগাজী ও মিরসরাই সংলগ্ন ফেনী নদী সন্ধীপ চ্যানেলে বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন ড্রেজিং অবস্থায় এবং মালামালবাহী কার্গো কোস্টার নোঙর করতে দেখা যায়।
অপরদিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ঘাট হতে বিভিন্ন ট্রলার ও নৌকার মাধ্যমে যাত্রী ও মালামাল নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ হতে সন্ধীপ উড়িচর চলাচল করতে দেখা যায়। এ অঞ্চলের নদী বন্দরের উপযোগিতা প্রসঙ্গে আরও বলা হয়, ফেনী নদীর ক্লোজার পর হতে মোহনা পর্যন্ত অংশে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা নিশ্চিত করা হলে গড়ে ওঠা বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত দেশি বিদেশী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত জাহাজসমূহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই অঞ্চলে আশ্রয় নিতে পারবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ফেনী নদীর ক্লোজার হতে মোহনা পর্যন্ত অংশ শিপ শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন