শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২১, ১২:১০ এএম

গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দাম বাড়তে বাড়তে এখন লাগামহীন। নিম্নবিত্ত অনেক মানুষের দৈনিক খাবারের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। পরিবারের অনেক খরচ কাটছাঁট করতে হচ্ছে। অনেকের চিকিৎসা ব্যয় সংকুলান কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় খবরের মধ্যে রয়েছে, আইএমএফ-এর এক প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এ বছর ২১৩৮.৭৯৪ ডলার হবে, যা ভারতের মাথাপিছু আয়কে (২১১৬.৪৪৪) ছাড়িয়ে যাবে। তৃতীয় খবরটি হচ্ছে, করোনায় স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির মধ্যে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকা বা তার ঊর্ধ্বে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে। এ সংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি। গত বছরের চেয়ে এ সংখ্যা ৬ হাজার ২৮টি বেশি। এসব সংবাদের ইতিবাচক আর নেতিবাচক দিক কতটা তা বিশ্লেষণের দাবী রাখে। অস্বীকার করার উপায় নেই, করোনার আগ পর্যন্ত দেশের মানুষের গড় আয়-উপার্জন ধীরে হলেও বেড়েছে। সে সময় বৈষম্যমূলক আয়ের বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করেছেন এখনো করছেন। তারা বলছেন, ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরীব আরও গরীব হচ্ছে। ধারণা করা হয়েছিল, করোনায় সবশ্রেণীর মানুষেরই আর্থিক অবস্থা খারাপ হবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। করোনাকালে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখানো হয়েছে, দেশের কোটি কোটি মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। কর্মজীবীরা কর্মহীন হয়েছে। দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়েছে। নিম্নবিত্তরা দরিদ্রে পরিণত হয়েছে। গড়ে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দরিদ্র হয়ে গেছে। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এর মধ্যেও অনেক মানুষ বড়লোক হয়েছে। ধনী শ্রেণীর অর্থ-সম্পদ বেড়েছে। তাদের অর্থ-বিত্ত উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা তাদের আয়ে আঁচড় কাটতে পারেনি। কোটিপতির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি থেকে তা বোঝা যায়। করোনার দুর্দশার মধ্যে তারা কিভাবে কোটিপতি হলো তা এক রহস্য। এ নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এই কোটিপতি কারা, তাদের আয়ের উৎস কি, এসবের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকাও স্বাভাবিক।

দুই.
করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক। দেশের অর্থনীতিসহ সবধরনের কাজ পুরোদমে চলছে। স্বাভাবিকভাবে আশা করা হয়েছিল, করোনায় নিঃস্ব হয়ে পড়া মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। লকডাউনে বন্দি হয়ে অধাবেলা-একবেলা খেয়ে কিংবা কৃচ্ছসাধন করে চলা কষ্টকর জীবন সহজ হওয়ার পথে চলতে শুরু করবে। সরকারও অন্তত তাদের জীবন সহজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেবে। অর্থ-কড়ি বা ত্রাণ দিয়ে নয়, অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে কাজটি করবে। কেউ আশা করে না, বাজারের স্বাভাবিক দামের চেয়ে কম নয়, বরং দাম যাতে না বাড়ে, এ উদ্যোগ নেবে। সাধারণ মানুষের এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারা দেখছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এতটাই ঊর্ধ্বমুখী এবং নাগালের বাইরে চলে গেছে যে, সে পর্যন্ত তাদের হাত পৌঁছছে না। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলাতে গিয়ে তারা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক কিংবা তার চেয়েও কম জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের তো বেঁচে থাকতে হবে। পুরোপুরি ক্ষুধা না মিটুক, অন্তত আধ বা কেয়ার্টার পেট ভরে বেঁচে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এই জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম করতে গিয়ে এখন তারা ক্লান্ত-শ্রান্ত, বিষন্ন। পৃথিবীতে কোনো প্রাণীই মরতে চায় না। বেঁচে থাকার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যায়। দরিদ্র মানুষের সংগ্রামটা এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি। তাদের ক্ষুধা মেটে না। ক্ষুধা নিয়েই বেঁচে আছে। সম্প্রতি কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এবং ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে সংস্থা বিশ্ব ক্ষুধাসূচক-২০২১ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বিশ্বের ১১৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬। ভারতের অবস্থান ১০১ এবং পাকিস্তানের অবস্থান ৯২। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ যে ক্ষুধামুক্ত নয়, তা এ প্রতিবেদন থেকেই বোঝা যায়। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে সবসময়ই বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের কেউ না খেয়ে থাকে না। এই না খেয়ে থাকার পরিমাপটি কি, তা কিন্তু বলা হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে, পরিসংখ্যান যে সবসময় সঠিক তথ্য দেয়, তা নিশ্চিত নয়। এটা একটা ধারণা মাত্র। আর সেসব পরিসংখ্যান যদি বিদেশি হয়, তবে তারা আমাদের দেশের মানুষের প্রকৃত অবস্থা কি তাদের পক্ষে জানা সম্ভব? আমরা নিজেরাই তো সঠিকভাবে জানি না। পাশের বাসার কেউ খেয়ে আছে, নাকি না খেয়ে আছে, এ খবর আমরা কজনইবা রাখি? তবে ক্ষুধাসূচকের অবস্থান থেকে এটা বলা যায়, বাংলাদেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষ ক্ষুধা নিয়েই দিন-রাত কাটায়। আর করোনা পরবর্তী এ সময়ে এ ক্ষুধা যে আরও বেড়েছে, তা বোঝার জন্য পরিসংখ্যানের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ মানুষ কতটা কষ্ট ও দুর্ভোগে আছে, তা খালি চোখে যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি উপলব্ধি দিয়েও বোঝা যাচ্ছে। তবে যাদের পেট সবসময় ভরা থাকে, তাদের পক্ষে এ উপলব্ধি করা সহজ নয়। সরকার যদি আন্তরিক হতো, তাহলে যেসব দরিদ্র, অতিদরিদ্র, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, তাদের কথা বিবেচনা করে অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিত। পরিতাপের বিষয়, সরকার এ উদ্যোগটি নেয়নি। কেবল টিসিবির কিছু ট্রাক মাঝে মাঝে রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে কিছু পণ্য কমদামে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। দরিদ্র হয়ে পড়া কোটি কোটি মানুষের জন্য এই ব্যবস্থা কি যথেষ্ট? অথচ সরকার যদি কঠোর অবস্থান নিয়ে বাজার মনিটর করত এবং জিনিসপত্র দাম বৃদ্ধির সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার উদ্যোগ নিত, তাহলে সাধারণ মানুষ বড়ই উপকৃত হতো। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সরকার যে টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবস্থা করেছে, তা অনেকটা লোক দেখানো ছাড়া কিছুই নয়। তারপরও যখনই টিসিবির কোনো ট্রাক এসে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষ সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সম্প্রতি বাড্ডার এক সড়কে দেখেছি, টিসিবির একটি মিনি ট্রাকের সামনে শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাকের মালামালের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তাতে অল্প কিছু পেঁয়াজ, তেলের ক্যান, চাল, ডাল আর চিনির বস্তা রয়েছে। এ দিয়ে বড় জোর চল্লিশ-পঞ্চাশ জনের চাহিদা পূরণ করা যাবে। বুঝতে অসুবিধা হয়নি, এই পণ্য পেতে তাদের অনেক সংগ্রাম করতে হবে। লাইনে দাঁড়ানো বাকি মানুষগুলোকে খালি হাতেই ফিরে যেতে হবে। ফেরত যাওয়া এ মানুষগুলো কি করবে? ধরে নেয়া যায়, তারা টিসিবির ট্রাক থেকে এক কেজি ডাল, দুই কেজি চাল, এক কেজি পেঁয়াজ কিনত। তা কিনতে না পেরে নিশ্চিতভাবেই দোকান থেকে দ্বিগুণ দামে কিনেছে। এই কেনাকাটা করতে গিয়ে অর্ধেক বা কোয়ার্টার পরিমান জিনিসপত্র নিয়েই তাদের বাসায় ফিরতে হয়েছে। তাদের আধাপেটে খেয়েই জীবনযাপন করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। এই যে মানুষের নীরব দুঃখ-কষ্ট, এটা কি সরকার বোঝে না? রাজধানীতে ৮০টি স্পটে টিসিবি’র ট্রাক চালু করা হয়েছে। প্রতি ট্রাক থেকে ২০০ মানুষ অনেকটা যুদ্ধ করে কেনাকাটা করতে পারে। এ হিসেবে প্রতিদিন ১৬০০ মানুষ স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে পারছে। এ উদ্যোগ কি কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য যথেষ্ট? অথচ বলা হচ্ছে, আমরা খাদ্যে উদ্বৃত্ত কিংবা স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদি তাই হয়, তাহলে তো চাল, ডাল, শাক-সবজির মতো মৌলিক খাদ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকত। এ দিয়েই তারা ক্ষুধা নিবারণ করতে পারত। তা তারা কেন পারছে না? সরকার যে বোঝে না, তা নয়। তবে তার এ ব্যর্থতা বালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষা করে চলেছে। এটা জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল কোনো সরকারের কাজ হতে পারে না।

তিন.
এবার আসা যাক মথাপিছু আয় বৃদ্ধি নিয়ে। এ বছরের মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলার। গত বছর ছিল ২০৬৪ ডলার। অথচ আইএমএফ বলছে, এ বছর মাথাপিছু আয় হবে ২১৩৮.৭৯৪ ডলার। দেখা যাচ্ছে, পরিকল্পনামন্ত্রীর দেয়া তথ্য আর আইএমএফ-এর তথ্যে গড়মিল রয়েছে। গড়মিল থাকুক মাথাপিছু আয় যে বেড়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে এই আয় কাদের বেড়েছে? দেশের ১৬ কোটি মানুষের কি সমহারে বেড়েছে? সবাই কি ২২২৭ ডলার বা মাসে ১৭-১৮ হাজার টাকা আয় করতে পারছে? এসব প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, সবার সমহারে আয় বাড়েনি। সাধারণত মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি করা হয়, গড় হারের ভিত্তিতে। দেশের মোট জনসংখ্যার আয়কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে তা দেখানো হয়। যেমন একজনের আয় শূন্য টাকা, একজনের ৫ টাকা, একজনের ৭ টাকা, একজনের ১২ টাকা। তাহলে তাদের মোট আয় হয় ২৪ টাকা। এই ২৪ টাকাকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে প্রত্যেকের আয় হয় ৬ টাকা। অর্থাৎ যার আয় শূন্য তার আয়ও ৬ টাকা। বোঝাই যায়, মাথাপিছু আয়ের বিষয়টির মধ্যে একটি শুভংকরের ফাঁকি লুকিয়ে আছে। করোনায় ধনীদের বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের আয় বৃদ্ধি পেল কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, লকডাউনে কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকলেও সবকিছু চালু হওয়ার পর তারা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য পঞ্চাশ-ষাট ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। বাজারে যারা নিয়মিত যায়, তারা এটা ভালভাবে বুঝতে পারছে। এ ক্ষেত্রে সরকারও ব্যবসায়ীদের যেন যেমন খুশি তেমন করার সুযোগ দিয়েছে। ধনী শ্রেণী বা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখেছে, সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখেনি। যে দেশে সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থ না দেখে, সে দেশের মানুষের কপালে দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু থাকে না। দেশের সাধারণ মানুষ এখন সেই দুর্ভাগ্য ও দুর্ভোগের মধ্যে আছে। এবার আসা যাক মাথাপিছু আয় নিয়ে ভিন্ন একটি প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়টি ভারত কোনোভাবেই মানতে পারছে না। এটা তার গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে। গত বছর যখন আইএমএফ মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারতকে ছাপিয়ে যাবে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখন ভারতের অর্থনীতিবিদরা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। সে সময় পশ্চিমবঙ্গের একটি পত্রিকায় বাংলাদেশকে হেয় ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উদাহরণ টেনে বলা হয়, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মধ্যে এক অদ্ভুত মিল। এমন দুটি দেশ (ভারত আর শ্রীলঙ্কা) ওই দুবছরে বিশ্বকাপ জিতেছিল, যারা বিশ্বকাপ জিতবে বলে অতি কল্পনাপ্রবণ ক্রিকেটভক্ত বা ক্রিকেট বিশারদরাও ভাবেননি। কপিলদেব, অর্জুনা রাণাতুঙ্গা বা তাঁদের সতীর্থরাও কি ভেবেছিলেন? নাহ। সম্প্রতি প্রায় তেমনই ঘটনা ঘটেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের ভবিষ্যদ্বাণী, চলতি আর্থিক বছরে পার ক্যাপিটা জিডিপি বা মাথাপিছু উৎপাদনে ভারতকে ছাপিয়ে যাবে বাংলাদেশ! সেই বাংলাদেশ, যাকে ১৯৭১ সালে পাক-শাসনমুক্ত করে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিল ভারত। সেই বাংলাদেশ, যার আয়তন পশ্চিমবঙ্গের দেড়গুণের মতো, রাজস্থানের অর্ধেকেরও কম। যে দেশে শিল্প বলতে পোশাক, পুঁজি বলতে কমদামী শ্রমিক। এমন উইপোকাই কিনা টপকে যাবে ভারত নামক হস্তিকে? ৫৬ ইঞ্চির ছাতিকে হারিয়ে দিতে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা? চাণক্যের পরাজয় হতে চলেছে লেডি অব ঢাকার কাছে? প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মোদী সরকারের থেকে এটাই বড় পাওনা যে, মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশও ভারতকে ছাপিয়ে যাচ্ছে! অসমে এনআরসি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অমিত শাহ বাংলাদেশিদের উইপোকার সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, উইপোকার মতো বাংলাদেশিরা ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে এবং দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করেছে, যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ জানিয়েছিল ঢাকা। আইএমএফের পূর্বাভাসের পর শাহের সেই উইপোকা তত্ত্ব নতুন করে সামনে এসেছে। অনেকেই বলছেন, সেই উইপোকাই এবার হাতিকে টপকে যাচ্ছে। প্রতিবেদনের এই শ্লেষাত্মক মন্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ভারত কোনোভাবেই চায় না তার প্রতিবেশী কেউ তাকে টপকে যাক। বিশেষ করে অর্থনীতির এই দুনিয়ায় উপমহাদেশের কোনো দেশ তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে, তা সে কোনোভাবেই মানতে চায় না। সে বন্ধুত্বের কথা বলবে ঠিকই, তবে সেই বন্ধুত্বের ধরণ হচ্ছে প্রতিবেশীকে দাবিয়ে রেখে। ফলে প্রতিবেশীরাও এখন আর তার ধার ধারছে না। তার প্রভাবকে থোড়াই কেয়ার করছে। আর বাংলাদেশ অত্যন্ত কৌশলে দক্ষতার সাথে তা এড়িয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানেই ভারতের গা জ্বলে যাচ্ছে। নিজের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারছে না, আবার অন্যের উন্নতিতে তার চোখ টাটাচ্ছে।

চার.
করোনায় চাকরি হারিয়ে, বেকার হয়ে পড়া এবং সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জীবন বাঁচাতে পুঁজি ভেঙ্গে শেষ করেছেন। তারা এখন নিঃস্ব। সাধারণ মানুষের মধ্যে যাদের সঞ্চয় ছিল তাদের এখন তা নেই। তারা তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা প্রকাশ করতে পারছে না। অনেকটা ধুঁকে ধুঁকে জীবন চালাচ্ছে। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম হু হু করে কেবল বাড়ছেই। নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই। সরকারও যেন নির্বিকারচিত্তে রয়েছে। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী এতটাই লোভী ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা যেমন খুশি তেমন পণ্যের দাম বাড়িয়েই চলেছে। দরিদ্র মানুষগুলোর পকেটের টাকা কেড়ে নিচ্ছে। তাদের মধ্যে মানবতা বলে কিছু নেই। অবশ্য ধনী শ্রেণীর গায়ে পণ্যমূল্যের উত্তাপ লাগে না। জিনিসপত্রের দাম যে আকশচূড়া, তা তারা জানে কিনা সন্দেহ। এক টাকার জিনিস পাঁচ টাকা হলেও তাদের গায়ে লাগে না। কারণ তাদের অঢেল আছে। সমুদ্র থেকে যেমন এক চামচ পানি তুলে নিলে সমুদ্রের কিছু হয় না, তেমনি এক টাকার জিনিস পাঁচ টাকা হলেও তাদের সমস্যা হয় না। সমস্যা যত সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের। সরকার যদি একটু চিন্তা করত এবং কেন জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, কারা বাড়াচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিত, তাহলে দরিদ্র মানুষগুলো কোনো রকমে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারত। সরকার কি তাদের অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার কাজটুকু করতে পারে না?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন