মেথি তিতা স্বাদযুক্ত মসলা। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়ক শক্তি ও তারুণ্যে ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দূষিত পরিবেশ এবং ভেজাল খাবারের রাজ্যে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব, যদি প্রতিদিন মেথি খাওয়া যায়। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটির মধ্যে রয়েছে ৩৫.৫ ক্যালরি, ৬.৪ গ্রাম প্রোটিন, ০.৭ গ্রাম ফ্যাট, ২.৭ গ্রাম ফাইবার এবং ৩.৭ মিলিগ্রাম আয়রন। এছাড়াও রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন বি৬-এর মতো পুষ্টিকর উপাদান, যা নানা দিক দিয়ে শরীর গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা প্রতিদিন কিছু না কিছু সমস্যায় পড়তেই হচ্ছে। যার সমাধানে প্রতিনিয়ত মরিয়া হয়ে উঠতে হচ্ছে। তবে সে সমস্যাগুলোর সমাধানও আমাদের হাতের কাছে। যেটা না জানার কারণে সমস্যার সহজ সমাধান আমরা খুঁজে পাই না। যদি রক্তে চিনি বেড়ে গিয়ে থাকে মানে ডায়াবেটিসের জন্য মিষ্টি বন্ধ, দিনদিন বুড়িয়ে যাওয়া হয়। তাহলে এর চমৎকার একটি সমাধান হলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একগ্লাস মেথির পানি। এটি খেলে শরীরে ফিরবে শক্তি। হার্টও থাকবে ভালো।
রক্তে চিনি কমাতে কীভাবে ব্যবহার করবেন মেথি? মেথি খাওয়ার আগে প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই হবে। দিনে দুবার ২.৫-১৫ গ্রাম মেথি খেতে হবে। তেতো মেথি পছন্দ না করলে মেথি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায় মেথি। সেটি খাওয়া যেতে পারে। খাবারের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে খেতে হবে। খাওয়া যেতে পারে মেথির চা। হালকা গরম পানিতে মেথি মিশিয়ে ভালোই খাওয়া যেতে পারে। তবে শুধু মেথি খেলেই হবে না। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
শুধু ডায়াবেটিস নয়। মেথি মহৌষধ। মেথির রসে সাপোনিস ও ডায়োজেনিন নামে যৌগ পদার্থ আছে। মানুষের শরীরে হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। প্রতিদিন পরিমিত মেথির রস খেলে পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়ে। মেথিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও নিয়াসিন। ত্বককে রাখে সতেজ, টানটান বার্ধক্য দূরে ঠেলে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করে। ভেজা পরিষ্কার কাপড়ে মেথিদানা গুঁড়ো করে ফোড়া, পোড়া ও বিভিন্ন চর্মরোগে ব্যবহার করলে উপকার মেলে। মুখের ব্রণ, কালো দাগ, ফুসকুড়ি উধাও হয়। মেথি খেলে স্ট্রোকের প্রবণতা অনেকটা কমে যায়। সকালে খালি পেটে মেথিদানা চিবিয়ে খেলে ওজন কমে। লেবু ও মধুর সঙ্গে মেথিদানা গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে গলাব্যথা ও কাশি কমে। দেহের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। মেথি বেঁটে চুলে লাগালে চুল পড়া কমে, চুল ঘন হয়। খুসকি কমে, চুল হয় আরও উজ্জ্বল। তবে মেথি ভিজিয়ে পিষলে পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। রোদে শুকিয়ে নিয়ে খেলে মচমচে লাগবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে বা একগ্লাস পানিতে মেথি মিশিয়ে খান। ৬ মাসের বেশি মেথি খাওয়া যাবে না। কারণ, বেশি মেথি খেলে কিছু সাইড এফেক্ট হতে পারে। ডায়ারিয়া, গ্যাস বা পেটের গন্ডগোল। অন্ত:সন্তা নারী ও শিশুদের মেথি না খাওয়াই ভালো।
মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক ও কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন