মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা
সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের শুরুতেই নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে টাকার বিনিময়ে কার্ড দেওয়া, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কার্ড বিতরণ ও চাল দেওয়ার সময় মাপে কম দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১ মাসের চাল দিয়ে কার্ডে ২ মাস এন্ট্রি করা হয়েছে। এ নিয়ে কার্ডধারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে এ সব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর একটি মহতি উদ্যোগ সফল বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার ৬০ ইউনিয়নের মধ্যে বেশকিছু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বাররা দরিদ্রদের পাশাপাশি তাদের নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কার্ড বিতরণ করেছেন। এমন কি অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের অনেকে দরিদ্র কার্ড পেয়েছেন। অথচ তারা এসব কার্ড পাওয়ার যোগ্য নয়। এমন অভিযোগ মাদারীপুর সদর ও কালকিনিতে বেশি। রাজৈর ও শিবচরে ডিলাররা চাল বিক্রির সময় মাপে কম দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সদর ও কালকিনির ইউনিয়নগুলোর অবস্থা একই রকম। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কালকিনি নবগ্রাম ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডে সাড়ে ৯শ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কার্ডধারীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২শ টাকা করে। সাড়ে ৯শ কার্ডের বিনিময়ে আদায় করা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ ইউনিয়নে ডিলাররা সেপ্টেম্বর মাসের চাল বিতরণকালে প্রতিকার্ডে ২/৩ কেজি করে চাল মাপে কম দিচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। নবগ্রাম ইউপির উত্তর চলবল এলাকার সুধন্য বাড়ৈ বলেন, “৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার অরুণ মল্লিক কার্ড দেওয়ার সময় আমার কাছ থেকে ২শ টাকা নিয়েছে। শুধু আমার একার কাছ থেকেই নয়, সবার কাছ থেকে মেম্বার ও মহিলা মেম্বাররা ২শ টাকা করে নিয়েছে। ডিলারের কাছ থেকে ৩শ টাকা দিয়ে গত মাসে ৩০ কেজি চাল এনেছি, বাড়ি এসে মেপে দেখি ২৭ কেজি।” এ এলাকার উত্তম সরকার, কেশব ঢালী, সুশীল বাড়ৈ, মনিন্দ্র বাড়ৈ, সুখদেব বাড়ৈসহ অনেকের কাছ থেকে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার অরুণ মল্লিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এদিকে সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের প্রতি মাসের ৩০ কেজি চালের মধ্যে ৩/৪ কেজি করে ওজনে কম দিয়েছে ডিলাররা। এমন অভিযোগ এলাকার শতশত হতদরিদ্র পরিবারের। বহু কার্ডে ১ মাসের চাল দিয়ে ২ মাসের চাল বিতরণ দেখানো হয়েছে। খোয়াজপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার নিলুফা বেগম বলেন, ‘আমি কিছু অনিয়ম দেখতে পেয়ে সাথে সাথে প্রতিবাদ চেয়ারম্যানের কাছে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।’ খোয়াজপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুন্সী চাল বিতরণে অনিয়ম হচ্ছে না দাবি করে বলেন, “হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণে কোন অনিয়ম আমার এলাকায় এখানো হয়নি। আমার অজান্তে যদি কোথাও এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।” সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের সাবেক জিএস রুবেল খান বলেন, “খাদ্য গুদাম থেকে ডিও‘র মালামাল নেওয়ার সময় কিছু অসাধু কর্মচারী মাপে কম দেয় বলে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ডিলারদেরকে জনগণের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। খাদ্য গুদামে টাকা না দিলে মালমাল ডেলিভারিতে অসহযোগিতা করা হয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারী থাকা প্রয়োজন।” জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. তানভীর আহমেদ বলেন, “এ পর্যন্ত কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার অফিসে অভিযোগ বাক্স খোলা হয়েছে।”
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন