শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

অবহেলায় পড়ে আছে শাহ ইসমাইল গাজী (রহ.)-এর মাজার

পীর-আউলিয়াদের বিচরণ ভূমি পীরগঞ্জ

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবুল খায়ের, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায় তার “দেবী চৌধুরানী’’ নামক উপন্যাসের ১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, একদা উত্তর বাংলা জয় করার ইচ্ছায় গৌড়ের বাদশার পাঠান সেনাপতি শাহ্ ইসমাইল গাজী (রহ.)কে পীরগঞ্জে প্রেরণ করেন। ফলে রাজা নীলাম্বরের সাথে ইতিহাস বিখ্যাত যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল এই পীরগঞ্জের মাটিতেই। এই যুদ্ধে নীলাম্বর রাজার পরাজয় ঘটলেও অসংখ্য মুসলিম সৈন্য শাহাদৎ বরণ করেন এ যুদ্ধে। রংপুরের এই পীরগঞ্জে ৪০৯ দশমিক ৩৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় অসংখ্য পীর দরবেশের মাজার রয়েছে। এর মধ্যে শাহ্ ইসমাইল গাজী (র.)-এর মাজার রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন বড়দরগাহ্ নামক স্থানে ও চতরা ইউনিয়নের কাটাদুয়ার নামক পৃথক দু’স্থানে অবস্থিত। উল্লেখিত যুদ্ধে যারা শাহাদৎ বরণ করেছিলেন, এদেরই একজন নাম না জানা বুর্জুগের মাজার রয়েছে পীরগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের পশ্চিম-দক্ষিণ ধারে একটি ছোট্ট কুঠরীর মধ্যে। শাহ ইসমাইল গাজী’র বড়দরগাস্থ মাজার আজ অবহেলিত অবস্থায়। এটির উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি আজও পর্যন্ত। প্রতœতত্ত্ব বিভাগ শুধুমাত্র একখানা সাইনবোর্ড দিয়েই তাদের দায়িত্ব সেরেছেন। শাহ ইসমাইল গাজী (র.)-এর পীরগঞ্জে আগমনের পূর্বে ও পরে বহু পীর-দরবেশের বিচরণভূমি হয়ে উঠেছিল পীরগঞ্জের মাটি। সেজন্য পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মাজার গড়ে উঠেছে। অগনিত পীরদের আগমনেই কালক্রমে এই উপজেলার নামকরণ হয়েছিল পীরগঞ্জ। মূলত পীরগঞ্জ হলো পীর দরবেশের কেন্দ্রভূমি। শুধু যে নীলাম্বর রাজা আর ইসমাইল গাজী (র.)-এর স্মৃতি বিজড়িত এই পীরগঞ্জ তাই নয়। বরং আরো অনেক ঐতিহাসিক ঘটনায় সমৃদ্ধ এ পীরগঞ্জের মাটি। পীরগঞ্জের খালাশপীর হাটে শায়িত রয়েছে খালেছ পীর (র.)-এর পবিত্র মাজার। মধ্যযুগীয় সাধক কবি কাজী হেয়াত মামুদের মাজার রয়েছে পীরগঞ্জের ঝাড়বিশলা গ্রামে। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ-এর সাথে সুর মিলিয়ে অত আগে তিনি উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন, “পড়িবে শুনিবে লোক, স্মরণ করিবে মোক’’। রবিন্দ্রনাথ তার জবাব দিয়েছেন তার সাহিত্য সামগ্রী প্রবন্ধে। সেই মধ্যযুগীয় সাধক কবি হেয়াত মামুদের জন্ম ও সমাধিভূমি এই পীরগঞ্জের মাটিতেই। এদিকে বউলবাড়ীর কামেল পীর কাদের কাদেরী (রহ.) বাজিতপুরের হযরত মওলানা মফিজ উদ্দিন আহম্মদ (রহ.) পীরগঞ্জের পুণ্যভূমিতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও মহাসড়ক সংলগ্ন ধাপেরহাটের মরহুম নায়েবউল্যাহ্, হাসানপুরের মরহুম তমিজ উদ্দিন নামক পীর ও মাদারগঞ্জ হাটের মাদার পীর-দরবেশের নাম পীরগঞ্জের মাটির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তাই পীরগঞ্জের মাটি হলো অসংখ্য পীর-দরবেশের চরণ ধুলোয় মিশ্রিত মাটি। এই দরবেশের পুণ্য ভূমিতে এ পর্যন্ত যারাই ক্ষমতাই এসেছেন, তারাই উল্লেখিত পীর দরবেশের কোন না কোন মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর এসব মাজার উন্নয়নের কথা কেউ তেমনভাবে ভাবেননি। ফলে মাজারগুলোর আশানুরূপ উন্নয়নও ঘটেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ সাজিদ সরকার রাশেদ ১৮ জুলাই, ২০২০, ১১:১৫ পিএম says : 0
এই পীরগঞ্জের মধ্যে একজন অন্যতম পীর শুয়ে আছেন যার কথা অনেক লোকে বলে না বা জানে না অথবা জানার চেষ্টাও করে না। তিনি হচ্ছেন আব্দুর রহমান চাক্তাই পীর সাহেব। তিনি ইয়েমেন থেকে এসেছিলেন। তিনি এসেছিলেন আনুমানিক বারোশো খ্রিস্টাব্দের পরে ধারণা করা হয় হযরত শাহজালাল ইয়েমেনী রহমতুল্লাহি আলাইহির সঙ্গে এসে থাকতে পারেন। কারণ দুইজনেই ইয়ামান থেকে এসেছিলেন। চাক্তাই হচ্ছে ইয়ামেনের একটি শহর এবং সেই শহরের ভাষা ছিল তাই চাক্তাই। ইয়েমেন কে বর্তমানে তুরস্ক বলা হয়। তার মাজারটি বহু পূর্বে আবিষ্কার হলেও মসজিদ সংস্কার করা হয় 1890 সালে এবং পুনঃসংস্কার করা হয় 1960 সালে। এবং তার মাজারকে কেন্দ্র করে একটি মাদ্রাসা গড়ে ওঠে 1961 সালে যা পীরেরহাট রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা নামে পরিচিত। মূলত রহমানিয়া নাম দেয়ার কারণ আব্দুর রহমান পীর সাহেব। পীরেরহাট কে পীরেরহাট বলবো আরো কারণ হচ্ছে আব্দুর রহমান পীর সাহেব। অথচ এই তথ্যগুলো কেউ কখনো সংগ্রহ করে না এবং কেউ এ নিয়ে কথা বলে না আমাদের এত প্রাচীন একটি সম্পদ যা প্রত্নতত্ত্ববিদরা ও সংরক্ষণ করে না।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন