শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজপথে নামার কোনো বিকল্প নেই

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা সব সময় যেটা বলে আসছি, এখনো বলছি- কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র পথ হচ্ছে এদেরকে (আওয়ামী লীগ সরকার) সরিয়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা, পার্লামেন্ট তৈরি করা। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, সবাই রাজপথে নেমে আসি এবং আমাদের শক্তি দিয়ে, জনগণের শক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার তৈরি করি।

গতকাল শনিবার কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির মরহুম সদস্য তরিকুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তরিকুল ইসলাম স্মৃতি সংসদ’ এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও সম্প্রীতি ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে, অন্যদিকে এখন আবার হঠাৎ করে একলাফে লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিলো ডিজেল-কেরোসিনের দাম। ফলে আরো দ্বিগুণ বাড়বে দ্রব্যমূল্য। এখন সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? তাদের তো এখন না খেয়ে অপুষ্টিতে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, যেহেতু আজকে মানুষ জেগে উঠেছে, নিজের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করতে শুরু করেছে, ভোটের কথা বলছে, ভাতের অধিকারের কথা বলছে, স্বাস্থ্য অধিকারের কথা বলছে। সুতরাং সেইখান থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে হবে। সেই কাজ তারা শুরু করেছে বিভিন্ন রকম ইস্যু তৈরি করে মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গোলোযোগের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ৭ মাসে ৮৪জন নিহত হয়েছে এবং সব তাদের লোক। তারা নিজেরা নিজেরা এখন মারামারি করে। কারণ বিরোধী দল তো নেই।

কর্মীদের হট্টগোলে মহাসচিব ক্ষুব্ধ:
তরিকুল ইসলামের স্মরণ সভা উপলক্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের নিচতলার মিলনায়তনে সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি তিল পরিমান ঠাঁই ছিলো না। নেতৃবৃন্দ যখন বক্তব্য দিচ্ছেন তখন পেছনের দিকে এবং মূল মঞ্চের দুই পাশে কর্মীরা সর্বক্ষণ কথা বলতে থাকে। এ নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বক্তব্য দিতে এসে কর্মীদের কানাঘুষা ও কথা বলা বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু কর্মী সেদিকে কর্ণপাত করছিলো না। এক পর্য়ায়ে তারা বলেন, কথা শুনতে না চাইলে এই কক্ষের বাইরে চলে যান অথবা আপনারা মাইকে এসে কথা বলেন, আমরা মঞ্চে বসে শুনি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতির বক্তব্য দেয়ার সময়েও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ডায়াস থেকে তিনি নিজের আসনে বসে পড়েন। হট্টগোল দেখে মহাসচিব বলেন, সমস্যা হচ্ছে আমরা কেন এরকম সভায় আসি সেটা বোধহয় আমরা নিজেরাও জানে না। এটা একটা স্মরণ সভা এমন একজন নেতা যিনি আমাদের অতীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন এবং সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তার স্মরণ সভায় এসে আমাদেরকে এই সমস্ত সমস্যা সামাধান করতে হয়।

তিনি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা নিজেরা কিছু জানুন এবং নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। তা না হলে কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে না।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুজ্জামান শিমুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জয়ন্তু কুমার কুন্ড, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে তরিকুল ইসলামের ছোট ছেলে বিএনপির সহ-সাংগঠিনক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর-খুলনার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিকেলে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। সেখানেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

যশোর ব্যুরো জানায়, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে যশোরে স্মরণ সভা হয়েছে। গত শুক্রবার জেলা পরিষদের মিলনায়তনে জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, অনেক আগেই থেকেই বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। সব নির্বাচন হচ্ছে রাতের বেলায়। দেশে কোন গণতন্ত্র নেই। সে কারণে সরকার হঠাৎ করে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। এতে দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ নিস্পেশিত হয়ে যাবে। কেননা জ্বালানির সাথে সব কিছুর সম্পর্ক। পরিবহন ভাড়া বাড়ার সাথে সাথে সবকিছুর দাম বাড়বে।

তরিকুল ইসলামের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জাফর সাদিকের সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, ডিজেল কৃষকরা ব্যবহার করেন। সেচে খরচ বাড়বে কৃষকের। এতে বর্তমান সরকারের কিছু যায় আসে না। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না। জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে জোর করে দেশ পরিচালনা করছে। এজন্য বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে জনগণকে সাথে নিয়ে তিব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন