টানা পরিবহন ধর্মঘটে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে অচলাবস্থা চলছে। নগরীতে পরিবহন মালিকদের একটি অংশের বাস-মিনিবাস চলাচল করলেও গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সর্বনিম্ন ভাড়া (ওঠানামা) পাঁচ টাকা থেকে একলাফে ১০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্তের আগেই বাস-মিনিবাস এবং টেম্পুতে ৫০ থেকে ১০০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকেরা। এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে পথে পথে যাত্রীদের কথা কাটাকাটি, হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। আংশিক বাস চলাচল করার পরও কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ কমেনি।
গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাস্তায় নেমে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হন কর্মজীবীরা। বাস দেখলেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সবাই। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসে ঝুলে গন্তব্যে গেছেন অনেকে। যাত্রীর তুলনায় বাস-মিনিবাসের সংখ্যা কম হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ে অফিসমুখী লোকজন। স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরও চরম বিপাকে পড়তে হয়। নগরীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ছিল কর্মজীবী মানুষের ভিড়, জটলা। এ সুযোগে যথারীতি কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করেছে রিকশা ও অটোরিকশা চালকেরা।
অনেকে বাধ্য হয়ে ভ্যানগাড়িতে চড়ে কিংবা হেঁটে কর্মস্থলে গেছেন। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে গিয়ে অনেক যাত্রীকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ জনদুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে গতকাল সকাল থেকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নগরীতে বাস চলাচল শুরু করে। তবে মালিক সমিতির অপর একটি অংশের বাস রাস্তায় নামেনি। চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে যেতে যারা বের হয়েছেন তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে তাদের। নগরীর বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতে মানুষের ভিড় কিন্তু বাস নেই। পিকআপ, মাইক্রোবাস কিংবা অটোরিকশায় দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
বন্ধ রয়েছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরিসহ ভারী যানবাহন। এর ফলে আমদানি-রফতানিমুখী পণ্য ও কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। গতকাল তৃতীয় দিনের মত চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। স্বাভাবিকের তুলনায় কন্টেইনার ও পণ্য পরিবহন অনেক কমে গেছে। এতে বন্দরে এবং বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের স্তুপ জমছে। রফতানি পণ্য যথাসময়ে বন্দরে না পৌঁছায় বেশ কয়েকটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারছে না। বন্দরের অভ্যন্তরে মালামাল খালাস স্বাভাবিক থাকলেও ডেলিভারি পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্দরে বেশ কয়েকটি জাহাজে ভোগ্যপণ্য খালাস হচ্ছে। কিন্তু এসব পণ্য পরিবহন না হওয়ায় বাজারে সঙ্কট এবং মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিল্পের কাঁচামাল আটকা পড়েছে আবার শিল্প কারখানায় উৎপাদিত রফতানিমুখী পণ্য বন্দরে যেতে পারছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন