বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনগণের ওপর ঋণের বোঝা দিয়ে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে -ড. মোশাররফ

দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হওয়া পদ্মাসেতু প্রকল্প জনগণের ওপর ঋণের বোঝা বাড়িয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি
গতকাল সোমবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সাহেব বাংলাদেশে এসেছেন। আমি আশা করি, তার সময়ে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছিলো, সেজন্য অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিলো। সেসময়ে এই পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের জন্য কতো টাকা প্রয়োজন ছিলো আর আজকে কতো পরিমাণ বেশি টাকা খরচ করে এই সেতু আজকে করা হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ে ঋণের চাপ (বোঝা) বৃদ্ধি করে আজকের সরকার প্রধান জেদের বশবর্তী হয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করছেন বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা না নিয়ে। এই বিষয়টি আশা করি বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট তলিয়ে দেখবেন।
পাশপাশি বাংলাদেশে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের বিষয়েও বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রজেক্ট বাংলাদেশে আছে। যে বড় বড় প্রজেক্টে বড় বড় যে কা--কারাখানা এখানে হচ্ছে। আমরা আশা করি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এখানে এসেছেন, এগুলো তলিয়ে দেখবেন।
গত রোববার তিনদিনের সফরে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ঢাকায় আসেন।
২৯১ বিলিয়ন ডলারে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। তবে প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে তারা মাঝপথে অর্থায়ন স্থগিত করলে শুরু হয় তিক্ততার। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ২০১৩ সালের শুরুতে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়। নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই এখন পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এর উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম এ হাদীর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ টেনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ভু-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। বিদেশী মেহমানদের আগমন ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের আগমন থেকে বুঝা যায়, বাংলাদেশ এমন একটি জিয়ো পলিটিক্যাল স্টেটেজিক পয়েন্টে রয়েছে যে, সারা বিশ্বের নজর পড়ছে, ভবিষ্যতেও পড়বে।
চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে এবার ২৫টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর করে গেছেন। অর্থাৎ সেগুলো হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ে। আমি আশা করি, দুই দেশের জনগণের স্বার্থে যে প্রকল্পগুলো হবে, সেগুলোতে তারা বাস্তবায়ন করবেন, যাতে বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবে।
এসব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই চুক্তিগুলো হওয়াতে বর্তমান সরকার তাদেরকে ক্রেডিট দিতে অনেক কিছু বলছেন। আমি বলতে চাই, এসব সমঝোতা স্মারক চুক্তিগুলো করে চীনের প্রেসিডেন্ট এই ম্যাসেজ বাংলাদেশকে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ যাতে করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারে, সেক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশে পাশে আছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট দশম সংসদের বিরোধীদলের নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের সাথে সাক্ষাৎ না করা এবং কেনো খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন, তার একটি ব্যাখ্যা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, চীন অনির্বাচিত সংসদকে রিকগনাইজ করে না বলেই এই সংসদের বিরোধী দলের নেতাকে রিকগনাইজ করে নাই। জনগণের নেতাকে রিকগনাইজ করেছেন বলেই শি জিনপিং বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। অতএব, চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ এটাই একটা ম্যাসেজ যে, তিনি বাংলাদেশের জনগণকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
মরহুম অধ্যাপক এমএ হাদীকে একজন ‘দেশপ্রেমিক চিকিৎসক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে চিকিৎসা সেবাকে জনগণের দ্বারপ্রান্তে নিতে তার উদ্যোগী চিন্তা-ভাবনার কথাও তুলে ধরেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোশাররফ।
গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে মেগা প্রজেক্ট মানেই মেগা দুর্নীতি। আজকে যখন আমরা এখন মিটিং করছে, তখন বাংলাদেশ সফর করছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, উনি একজন নাম করা ডাক্তার। উনাকে আমরা একবারও মনে করাইনি- আপনার সময়ে পদ্মাসেতু প্রকল্প ব্যয় ছিলো ৭ হাজার কোটি ডলার। আজকে সেটা ৩২ হাজার কোটি ডলার হয়েছে। হের-ফেরটা কোথায়? এই টাকা ২২ বছরে কোথায় যাবে?
অধ্যাপক আব্দুুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ তাহির, ড্যাবের অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন