শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দারিদ্র্য বিমোচনে মডেল

বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দেড়গুণ করার ঘোষণা বিশ্বব্যাংকের

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৬ পিএম, ১৭ অক্টোবর, ২০১৬

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বের মডেল বাংলাদেশে ঋণ সহায়তা বাড়িয়ে দেড়গুণ করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
গতকাল সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য ঋণ সহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি অপুষ্টি দূর করতে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দেন। বিকেলে দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে গণবক্তৃতা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্য দেশও সুফল পাবে।
কিমের ঢাকা সফরকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের ‘স্বীকৃতি’ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। আর বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের তিক্ত স্মৃতি মুছে দেবে এই সফর।
গতকাল সকালে অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রায় চল্লিশ মিনিটের বৈঠকে কিমের নেতৃত্বে বিশ্ব ব্যাংকের নয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার এবং ঢাকার আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে মুহিতের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন।
বৈঠকের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।
মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশের যোগাযোগসহ সব খাতেই বিশ্ব ব্যাংক সহায়তা দিয়ে থাকে। পদ্মা সেতুতে যে তহবিল বিশ্ব ব্যাংকের দেয়ার কথা ছিল, তারা অন্যান্য প্রকল্পে সেটি দিয়েছে। এর মাধ্যমে বিষয়টির সমন্বয় হয়েছে।”
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে যে ‘জটিলতা’ ছিল তা কেটে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কিমের দিকে তাকিয়ে মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আশা করছি তারা সে প্রত্যাশা পূরণ করবে।”
২৯১ কোটি ডলারে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের। তবে প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে তারা মাঝপথে অর্থায়ন স্থগিত করলে শুরু হয় তিক্ততার। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ২০১৩ সালের শুরুতে পদ্মা সেতুতে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ না নেয়ার ঘোষণা দেয়। নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই এখন পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাংলাদেশ ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কিম বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গেই আছি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।”
জিম ইয়ং কিম তার বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। সেটি উদযাপন করতেই আমি বাংলাদেশে এসেছি। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের জন্যই এবার ‘বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত দিবস’ বাংলাদেশে পালন করছি।”
সংবাদ সম্মেলনে কিম বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে; এখন তা ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা হবে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তার অন্যতম ‘ফোকাস’।
কিম জানান, বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন দেশে ঋণ সহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তাও ৫০ শতাংশ বাড়ানো হবে। এর বাইরে শিশু অপুষ্টি দূর করতে বাংলাদেশকে আগামী দুই বছরে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হবে।
বিকেলে সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অর্জনকে ‘চমৎকার’ হিসেবে বর্ণনা করে কিম বলেন, এই অভিজ্ঞতা অন্য দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পারচেজিং পাওয়ার পেরিটি) বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার যেখানে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় তা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিশ্ব ব্যাংক প্রধান বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নতুন ধারণার প্রবর্তন যে খুবই জরুরি তা বাংলাদেশ খুবই দ্রুত অনুধাবন করতে পেরেছে।” এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের দল গড়ে তুলে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার মত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার কথা স্মরণ করেন কিম।
তিনি বলেন, “জনগণের পেছনে বিনিয়োগ করা ঠিক ততটাই জরুরি, যতটা জরুরি অবকাঠামো ক্ষেত্রের বিনিয়োগ।” অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সেই বিনিয়োগ বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ সকালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য বরিশাল যাবেন কিম। ফিরে এসে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বিকালে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিদায় নেবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব ব্যাংক তিন বছরের প্যাকেজে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (আইডিএ) হিসেবে বাংলাদেশকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। এর আওতায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ২৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে।
২০১৪-১৫ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আইডিএ-এর আওতায় চার বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৯৪৪ মিলিয়ন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়। পুরো প্যাকেজের প্রতিশ্রুতির মধ্যে মোট কী পরিমাণ পাওয়া গেল, তা হিসাব করা যাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বর্তমানে আইডিএ প্যাকেজের মেয়াদপূর্তির পর।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Firoz ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১:৪৬ পিএম says : 0
abar jeno jamela na hoy
Total Reply(0)
Tania ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১:৫১ পিএম says : 0
agulo ke thik vabe kaje lagate hobe
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন