সুখী হওয়ার সংজ্ঞা নিশ্চিতভাবে দেয়া সম্ভব নয়। সুখের বিষয়টি একেক জনের কাছে একেক রকম। এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের ধন-সম্পদের অভাব না থাকলেও মনে সুখ নেই। আবার এমন অনেকে আছে, যারা দুবেলা দুমুঠো পেটভরে খেতে পারলেই নিজেকে সুখী মনে করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এই দলে। উন্নত বিশ্বের মানুষের কাছে সুখের সংজ্ঞা ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। তাদের খানা-খাদ্যের অভাব না থাকলেও অনেকে নিজেকে অসুখী মনে করে। তারা আরও অনেক কিছুই চায়। অর্থনীতির ভাষায়, মানুষের চাহিদার শেষ নেই। একটির চাহিদা মিটে গেলে আরেকটির চাহিদা সামনে হাজির হয়। উন্নত বিশ্বের জনগণের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বেশি কাজ করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে আমরা দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করতে পারিনি, সেখানে দরিদ্র মানুষের মূল চাহিদাই হচ্ছে, দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা। একটি দিন এই চাহিদা মিটাতে পারলে, পরের দিনও যাতে এভাবে চলতে থাকে তারা এ কামনাই করে। যেহেতু মৌলিক চাহিদা মিটাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়, তাই অন্য চাহিদা মেটানোর দিকে দৃষ্টি দেয়ার সুযোগ খুব কম। যাদের নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে জীবনযাপন করতে হয়, ইচ্ছা থাকলেও বাড়তি চাহিদা মেটানোর সুযোগ তাদের থাকে না। এ নিয়ে আফসোস থাকলেও কিছু করার নেই। মনে আক্ষেপ ও হতাশা নিয়েই জীবনযাপন করতে হয়। এখানেই অসুখী হওয়ার বিষয়টি লুকিয়ে থাকে। করোনা মানুষের জীবন যেমন কেড়ে নিয়েছে, তেমনি বেঁচে থাকা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। কোটি কোটি মানুষের আয় কমিয়ে দরিদ্র করেছে। দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। পুরনো দরিদ্র তো রয়েছেই, তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন ৩ কোটি দরিদ্র (ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গর্ভানেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী)। নতুন-পুরনো মিলিয়ে দেশে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি বা তার বেশি। এই মানুষগুলো কি সুখী? বেঁচে থাকার জন্য তারা কি তাদের মৌলিক খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারছে? পেটে ক্ষুধা রেখে কেউ কি সুখী হতে পারে?
দুই.
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সুখী। বিশ্ব সুখী দেশের প্রতিবেদন তাই বলছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১। গত বছর ছিল ১০৭। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৬ ধাপ এগিয়েছে। এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। যেখানে দেশের ৬ কোটি বেশি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে, সেখানে এই সুখের তালিকা কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচনা করা দরকার। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, বিদেশী সংস্থা কি করে আমাদের দেশের মানুষের সুখের পরিমাপ করে? অবশ্য তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ, তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সূচকের পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে এ তালিকা করে। এসব পরিসংখ্যান দেয়া হয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে। যেমন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ২৫৫৪ ডলার। গত বছর ছিল ২২২৭ ডলার। এক লাফে তা ৩২৭ ডলার বেড়ে গেছে। করোনায় দুর্দশায় নিপতিত হওয়া অর্থনীতির মধ্যে এ পরিসংখ্যান কি বাস্তবসম্মত? যেখানে অর্থনীতিবিদসহ দেশের বিভিন্ন সংস্থা বলছে, সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে, কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে, সেখানে এ আয় বৃদ্ধি কি সাধারণ মানুষের কাছে কাঁটা গায়ে নুনের ছিটার মতো মনে হচ্ছে না? জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতিতে অসংখ্য মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে যেখানে অনাহারে, অর্ধহারে কিংবা কম খাবার খেয়ে কোনোরকমে দিন পার করছে, সেখানে তাদের আয় বৃদ্ধির বিষয়টি প্রহসন ছাড়া আর কি হতে পারে? তবে করোনার মধ্যেও কিছু মানুষের আয় বেড়েছে। তারা কারা? তারা হচ্ছে, ধনী শ্রেণী কিংবা লুটেরা শ্রেণী, যারা করোনার জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার মধ্যেও কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। এক কোটি টাকা বা তার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে প্রায় এক কোটি। সরকার এদের আয় বৃদ্ধিকেই ধরে নিয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দিয়েছে। এটা সরকারের জন্য খুশির খবর। এতে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, এ চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। এই উন্নয়ন যে গোষ্ঠীগত এবং তাতে সাধারণ মানুষ নেই, তা সরকার আমলে নিচ্ছে না। দেশে যে কোটি কোটি নতুন দরিদ্র হয়েছে, তা স্বীকারই করছে না। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সরকারের সুবিধাভোগী ধনীক শ্রেণীই সরকারের কাছে অগ্রগণ্য। তাদের উন্নতিই সরকারের উন্নতি বলে ধরে নিচ্ছে। অথচ সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, সুষম উন্নয়ন। পিরামিড আকারের মতো উন্নয়ন নিচ থেকে উপরের দিকে ধাবিত হবে। দরিদ্র থেকে ধনী পর্যন্ত। তা না হয়ে উন্নতির চিত্রটি হয়ে গেছে উল্টো-পিরামিডের মতো। ধনিক শ্রেণী ফুলেফেঁপে উঠেছে, সাধারণ মানুষের উন্নয়ন চোঙ্গাকৃতির হয়ে শুকিয়ে গেছে। উন্নতিটা এখন এভাবেই হচ্ছে। উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে সরকার হয়তো বলতে পারে, মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে। উন্নতি হয়নি কোথায়? এ কথার যুক্তি দিতে গেলে শুভংকরের বিশাল একটা ফাঁক ধরা পড়বে। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা অনেক কথাই বলেছেন। বলা হয়েছে, দেশে যে ৬ কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র এবং কোটি কোটি বেকার রয়েছে, তাদের আয় হচ্ছে কিভাবে? বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মাথাপিছু আয় নিয়ে একবার মন্তব্য করেছিলেন, ‘মাথাপিছু আয়ের হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছে। এর পরের স্তর হচ্ছে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। এ স্তরে পৌঁছাতে হলে মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। অথচ বাংলাদেশ যে মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলছে, তার আন্তর্জাতিক কোনো মানদণ্ড নেই। এটা বাংলাদেশেরই তৈরি।’ তার এ মন্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি একটি ফাঁকি ছাড়া কিছু নয়। এর কোনো বাস্তব ভিত্তি বা মানদণ্ড নেই। মানদণ্ড হচ্ছে, সরকার যেটা ঘোষণা করবে, সেটাই। আমরা যদি মাথাপিছু আয়ের কথা বিবেচনা করি, তাহলে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ বা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে লক্ষ্য রয়েছে, তাতে ঐ সময়ে মাথাপিছু গড় আয় হতে হবে ৪ হাজার ডলারের বেশি। এখন এই আয় ২৫৫৪ ডলার। আগামী পাঁচ বছরে সেই আয়ে পৌঁছানো কি সম্ভবপর? যেখানে বর্তমান মাথাপিছু আয় নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে? হ্যাঁ, যেহেতু কোনো মানদণ্ড নেই এবং সরকার তার ইচ্ছা মতো ঘোষণা করে দিতে পারেÑএ হিসাবে তা সম্ভব। চার হাজার কেন, পাঁচ-ছয় হাজার বা তার বেশিও ঘোষণা করে দিলেও কে হিসাব করতে যাবে? এ বছরই যদি ঘোষণা দিত ৩ হাজার ডলার হয়ে গেছে, তাহলে কি কিছু বলার থাকত? ২০২৬ কেন আগামী বছরই যদি ঘোষণা দেয় ৪ হাজার ডলার হয়ে গেছে, তাহলেও কিছু বলার থাকবে না। মানুষ কেবল শুনবে তাদের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলার হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের কোটি কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হয়ে যাবে, দরিদ্র হওয়ারা নিম্ন বা মধ্যবিত্তে পরিণত হবে এমন চিন্তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে করা অসম্ভব। আমরা ভাল করেই জানি, দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগে চরম মন্দাবস্থা চলছে। শিল্প কারখানা চালু হওয়ার পরিবর্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন কারখানা প্রতিষ্ঠা করে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে। এ পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে কীভাবে আমরা প্রকৃত অর্থে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবো? কাগজে-কলমে ঘোষিত উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে কি সাধারণ মানুষের দুর্দশা রাতারতি বদলে যাবে বা তাদের জীবনমান একেবারে ঝকঝকে তকতকে হয়ে যাবে? বিশ্লেষকরা কিছুদিন এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করবে বটে, তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে তা থেমে যাবে। সাধারণ মানুষের জীবনের টানাপড়েন যে বদলাবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
তিন.
বাংলাদেশ চিরকালই একটি দুঃখী দেশ, এটা সবারই জানা। এদেশের মানুষকে শত শত বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত হয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন সইতে হয়েছে। এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে অনেক সংগ্রাম ও রক্ত দিতে হয়েছে। অবশেষে নিজের দেশে সুখে-শান্তিতে বসবাসের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তারপরও এদেশের মানুষ সুখের সন্ধান পায়নি। তাদের অর্থনৈতিক সংকটের অবসান হয়নি। তার চেয়েও বড় বিষয়, এখনও সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে একটি সুখী সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়। এ থেকে এটাই বোঝা যায়, স্বাধীনতার ৫০ বছর হলেও দেশের জনগণের দুঃখ ঘোচেনি। তাদের সুখের জন্য যে ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন-তা সোনার হরিণ হয়েই রয়েছে। তা নাহলে, সুখী দেশের তালিকায় একশ’র উপরে থাকবে কেন? বলা হয়, আমাদের দেশের মানুষ অল্পতেই তুষ্ট হয়। মোটা কাপড় আর মোটা চালের ভাত খেতে পারলে তাদের আর কিছু লাগে না। তাদের এ চাহিদার বিপরীতে তো আমাদের সম্পদ অনেক ছিল। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছের কথা আমরা সবাই জানি। যার গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ থাকে, তার তো অসুখী হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন না হলেও এটা সবাই স্বীকার করবেন, বিভিন্ন সময়ে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা জনগণকে সুখে রাখতে বা সুখী করতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। জনগণ তাদের ‘গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ রক্ষা এবং তা বৃদ্ধির দায়িত্ব একেকবার একেক শাসক দলের উপর দায়িত্ব দিয়েছে। তারা যে এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পরিবর্তে উল্টা জনগণের সম্পদ দিয়ে নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিল বা আছে, তা মোটামুটি সবারই জানা। সাধারণ মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখেছে এবং দেখছে শাসক গোষ্ঠী ও তার লোকজন নিজেদের সুখী করার সব বন্দোবস্ত করাতে ব্যস্ত। একশ্রেণীর মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে। ধনী আরও ধনী, দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে। এটা এক ধরনের প্রপঞ্চ ছাড়া আর কিছুই নয়। জনগণেরও কিছু করার নেই। তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেরাই বেঁচে থাকার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির মাধ্যমে নিজেদের সুখী করার চেষ্টা করছে। ফসলের বাম্পার উৎপাদন করছে। বিদেশ গিয়ে আধুনিক দাসবৃত্তি অবলম্বন করে বিলিয়ন বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে। মানুষের এই উদ্যমী ভূমিকার কারণেই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে। এ নিয়ে শাসক গোষ্ঠীরও গর্বের সীমা নেই। জনগণের এ ভেবে দুঃখ হতে পারে, কার ফসল কার ঘরে যায়। বাম্পার ফসল আমরা ফলাই, কৃতিত্ব নেয় শাসক গোষ্ঠী। তাদের আরও দুঃখ হতে পারে এই ভেবে যে, যখন তাদের উৎপাদিত ফসল রক্ষায় সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না। উৎপাদিত ফসল উৎপাদন খরচ দিয়েও কেউ কেনে না। এ দুঃখে কৃষকদের রাস্তায় ফসল ফেলে প্রতিবাদ করতে আমরা দেখেছি। এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে! আবার যাদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়, সেই অর্থও আবার চোরে চুরি করে নিয়ে যায়। সরকার রক্ষা করতে পারে না। জনগণের উৎপাদিত ও উপার্জিত সম্পদই যখন রক্ষা করা যায় না, তখন তাদের কি সুখী হওয়ার কারণ থাকতে পারে? সরকারের মধ্যে এমন আত্মতুষ্টি রয়েছে, যে উন্নয়ন হচ্ছে তার সবই সে করেছে। বস্তুত সরকারের একার পক্ষে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে বেসরকারি খাত ও ব্যক্তি উদ্যোগ। সরকারি উদ্যোগে রাস্তা-ঘাট আর কিছু বড় প্রকল্প বা স্থাপনা নির্মাণ করলে চেহারা ভাল দেখা যায় ঠিকই, তবে তা সার্বিক উন্নয়নের প্রতীক নয়। দেশের মানুষের অর্থনীতির কথা যদি বিবেচনা করা হয়, তবে দেখা যাবে, স্বচ্ছন্দে চলার মতো আর্থিক সঙ্গতি সাধারণ মানুষের এখন নেই। খুবই টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। একদিক টান দিলে, অন্যদিক উদাম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। যদি এমন হতো, মানুষ তার অভাব মিটিয়ে জীবনযাপন করে স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছে, তাহলে সেটাই হতো উন্নয়নের মূল সূচক বা সাসটেইনঅ্যাবল ডেভালপমেন্ট।
চার.
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে উন্নতি করতে চায় না। তবে উন্নতি করতে চাইলেও সবাই তা পারে না। সক্ষমতার একটা পর্যায় পর্যন্ত থেমে থাকে। এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করতে পারে রাষ্ট্র ও সরকার। এখন সরকার যদি উন্নয়নের ফাঁকা বুলি আওড়ায়, তবে ঐ ব্যক্তিকে উন্নতির ফোঁকরে পড়ে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তার কথা বলারও উপায় থাকে না। সরকার যখন কঠোর হয়ে উঠে এবং জনগণকে দাবিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তার সাথে পৃথিবীর কোনো শক্তিই কুলিয়ে উঠতে পারে না। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ কোনো সরকারের আচরণ এমন হতে পারে না। সাধারণ মানুষের দুর্ভাগ্য, তাদের পক্ষ হয়ে কথা বলার কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই।
darpan.journalist@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন