বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

খাদ্যের অধিকার পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ডা. মাওলানা লোকমান হেকিম
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আর খাদ্যের উপরই নির্ভর করে সুস্বাস্থ্য। খাদ্য ছাড়া কেউ বাঁচতে পারে না। খাদ্যের অধিকার হলো মানুষের মৌলিক অধিকার এবং এটি মৌলিক প্রয়োজনও বটে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘোষণা অনুসারে খাদ্যের প্রতি মানুষের অধিকার হলো অবশ্য পালনীয় কর্তব্য এবং অতি প্রতিষ্ঠিত স্বীকৃতি। নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে সবার এককভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে মর্যাদার সাথে মানসম্পন্ন খাবার পাওয়ার ও কেনার অধিকার আছে। জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপটিয়ারে দেয়া তথ্য অনুযায়ী খাদ্যের অধিকার বলতে বুঝানো হয়েছে ক্ষুধা খাদ্যের অনিশ্চয়তা ও পুষ্টিহীনতা বৃদ্ধি পায় এমন কোনো কাজ সরকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কোনো কাজ অন্য কেউ ঘটাতে থাকলে সরকারকে তা থেকে বিরত রাখতে হবে। দারিদ্র্য উচ্ছেদ করার নিমিত্তে সরকার তার লভ্য সম্পদের বেশিরভাগ বিনিয়োগ করবে।
খাদ্যের অধিকার বলতে কারো ভিক্ষা বা অনুদান পাওয়া নয় বরং প্রতিটি মানুষের নিজেদের মর্যাদার সাথে খাওয়ানোর যোগ্যতা থাকা। মানব শিশু জন্মের পর বড় হতে থাকে এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বার্ধক্যে উপনীত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বয়সের সব পর্যায়ে খাদ্যের তালিকা ও পরিমাণ এক নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো বয়সেরই মানুষের খাদ্য ভোগের পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশের শিশু, মা ও জনগণের একটি বিশাল অংশ তাদের প্রয়োজনীয় খাবার পেতে বা জোগাড় করতে পারেন না। এর কারণ মূলত দু’টি। একটি উৎপাদন কম ও অপরটি উপার্জন কম। মানুষের উপার্জন ক্ষমতা বিভিন্ন উপায়ে বাড়ানো যায়। যেমন- মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য উর্বর জমি রেখে যাওয়ার লক্ষ্যে জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে অথবা জৈব পদার্থ মাটিতে যোগ করে এমন ফসল যেমন-ধৈঞ্চা, বরবটি, মুগ, খেসারি ইত্যাদি চাষ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। রাসায়নিক সার মাটিতে যেগুলো দেয়া হয় তার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। নিম্নমানের রাসায়নিক সার ব্যবহার করে একদিকে কৃষক যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অন্যদিকে জমি প্রয়োজনীয় খাদ্য না পাওয়ায় আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না, ফলে কৃষক বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের এসব অবস্থা দূর করার জন্য প্রয়োজনে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) মোবাইল ল্যাবরেটরি নিয়ে মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
বীজ এবং উন্নত চারা ভালো ফসলের পূর্বশর্ত। বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষকদের ও মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভালো বীজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। অনুরূপ নার্সারিম্যানদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত চারা উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। সেচের পানি নষ্ট হওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে উন্নত সেচনালা ব্যবহারসহ পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ফসল উৎপাদনে চিরাচরিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সাথে সাথে প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন- উন্নত বীজ, প্রয়োজনীয় সার, বিদ্যুৎ, ডিজেল প্রভৃতি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ধান বা গমের দিকে না ঝুঁকে উদ্যান ফসল বা ফল ও শাকসবজি চাষে এগিয়ে আসতে হবে। এতে অপুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধান হবে, ফসল চাষে অধিক লাভবান হওয়া যাবে এবং অতিরিক্ত পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করার দিকেও নজর দিতে হবে। এতে করে কর্মসংস্থান ও আয় উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি বনায়ন কথাটি অনেকের কাছে পরিচিত হলেও সবাই সমানভাবে এ বিষয়ের কাজে এগিয়ে আসেনি। বসতবাড়ির আশপাশে পানির প্রাপ্যতা যেখানে কম, উচ্চমূল্যের ফসল যেখানে চাষ করা যায় না সেখানে ফলের বাগান করা যেতে পারে। ক্ষেতের আইলেও বিশেষ ধরনের বনজ গাছ লাগানো যায়। প্রথম দু’চার বছর হয়তো আয় আসবে না কিন্তু পরবর্তীতে অধিকহারে লাভবান হাওয়া যাবে। সুতরাং যেখানে সুযোগ আছে বা যখনই সুযোগ হয় তখনই ফলদ বা বনজ গাছ লাগানো উচিত। এ কাজে অবস্থাবানদের প্রথম এগিয়ে আসা উচিত। পুষ্টি সরবরাহে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও মাছের কথা সর্বজনস্বীকৃত। এগুলোর উৎপাদন বাড়াতে হবে। উন্নত জাত ব্যবহার ও আধুনিক পরিচর্যা পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো যায়। এতে অপুষ্টি দূর হবে, অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। খাদ্য সবার জন্য যেমন দরকার তেমনি সম্মিলিতভাবে এ দেশ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য সবাইকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সরকার কর্তৃক দেয়া সুবিধা কাজে লাগিয়ে যার যেখানে সুযোগ আছে তার সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
ষ লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন