শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উন্নয়ন পরিকল্পনায় সমৃদ্ধ ঘোষণাপত্র

আ‘লীগের ২০তম সম্মেলন

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : আর মাত্র দুইদিন পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। এরইমধ্যে সরকারি দলটির ঘোষণাপত্রের খসড়া সাজানো হয়েছে ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে। ঘোষণাপত্রে ১০টি খাতে করণীয় নিয়ে দিকনির্দেশনা থাকছে। এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- এবং পরিকল্পনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন, ব্লু ইকোনমির প্রতি দেয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। এছাড়া মেগাপ্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি থাকছে। নতুনভাবে গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্প দ্রুত শেষ করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে তুলে ধরে তার সব অর্জন ও পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শক্তি ও সম্পদ দুটোই। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, নেতৃত্ব ও সাযুজ্যপূর্ণ নীতিমালার গভীর সংমিশ্রণ। একটি নিম্ন আয়ের দেশ হতে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের যে অভুতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে, তার প্রধান কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ও তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের। তিনি দেশকে মর্যাদা ও সম্মানে বিশ্ব পরিম-লে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। সমসাময়িক রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শক্তি ও সম্পদ দুটোই। তাঁর দৃঢ় মনোবল, সাহসী নেতৃত্ব, তাৎক্ষণিতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে দেশে ও বিদেশে তুমুল জনপ্রিয় করে তুলেছে। তিনি এখন তৃতীয় বিশ্বের অনন্য কণ্ঠস্বর।
জাতীয় কাউন্সিলের আগ মুহূর্তে খসড়া ঘোষণাপত্রে মত দেয়ার জন্য দলের নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। দলের আজকের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত সম্মতি দেয়া হতে পারে। সম্মেলনে কাউন্সিলররা এটি অনুমোদন দেবেন।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
নারীর ক্ষমতায়ন-লিঙ্গ সমতা : ২০২০ সালে উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষের অনুপাত ১০০ শতাংশে উন্নীতকরণ। অর্থনীতি, সামাজিক এবং রাজনীতিসহ সব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি : সব প্রাথমিক স্কুলে একটি এবং মাধ্যমিক স্কুলে ৩টি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করা। প্রাথমিক স্কুলে ৩০ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্কুলে শতভাগ স্কুলে আইসিটি ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হবে।
শিক্ষা : শিক্ষা অংশে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ৬টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। আগামীতে আরও ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ১ হাজার কোটি টাকা স্থায়ী তহবিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। দেশের শিক্ষার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে পরিণত করার কাজ চলছে।
আইনের শাসন: প্রথমবারের মতো সব দলের সঙ্গে আলোচনা ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা ও জনবল নিয়োগের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকারের জিরো টলারেন্সের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারসহ অন্যান্য প্রসঙ্গও উল্লেখ থাকবে।
স্থানীয় সরকার : কেন্দ্রীয় সরকারের কোন কাজগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অর্পণ করা যায়, তা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন সুনির্দিষ্ট করা হবে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শিল্প-বাণিজ্য : বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে একটি পরিপূর্ণ শিল্প ব্যবস্থায় পৌঁছানো। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণকে সর্বাধিক সুযোগ দেয়া। কৃষি প্রক্রিয়াজাত যন্ত্রপাতি ও উপকরণ আমদানিতে শূন্য কর সুবিধা প্রদান। পর্যাপ্ত জ্বালানি, বন্দর ও পরিবহন অবকাঠামোর সংস্থান করা। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রফতানি বিরুদ্ধ বাধা দূরীকরণ। শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চতকরণ। সরকাররি আইন ও বিধিমালা ব্যবসাবান্ধব হিসেবে তৈরিকরণ। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল : ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৫৬টি (সরকারি খাতে ৪২ টি এবং বেসরকারি খাতে ১৪ টি) অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭টির বাস্তবায়ন চলছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় বৃদ্ধি ও ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও আইসিটি : ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫১৪ কিলোওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ সালের মধ্যে ৯৬ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে। ২০ হাজার মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২৪ হাজারের টার্গেট করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ আইসিটি আয় ২ বিলিয়ন এবং রফতানি আয় ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণের পরিকল্পনা। আইসিটি শিল্পের জন্য ১ বিলিয়ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানবসম্পদ তৈরি করা। ২০২০ সালের মধ্যে টেলিঘনত্ব ১০০ শতাংশ, ইন্টারনেট বিস্তার ১০০ শতাংশ এবং ব্রডব্যান্ড ৫০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা থাকছে।
এছাড়াও পররাষ্ট্র সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, যুবশক্তি সম্পৃক্ত উন্নয়নে দেশের বেকারত্বে হার কমানোর পরিকল্পনা থাকবে। কৃষি, শিল্প ও অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও স্বল্পদক্ষ শ্রমশক্তি বিদেশ পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি করা সর্বোচ্চ অগ্রধিকার।
এদিকে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সম্মেলন সফল করতে বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বেশ তৎপর দলটি।
আইনের শাসন অধ্যায়ে খালেদা জিয়ার পুত্রদের শাস্তি সংযোজিত
শান্তি, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া খালেদা জিয়ার দুই সন্তানের শাস্তির রায়কে আইনের শাসন বলে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘোষণা পত্রের ৪৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানির মামলার রায় হয়েছে, আসামি সাজা পেয়েছে। খালেদা জিয়ার দুই সন্তানের অর্থপাচার মামলায় আদালত শাস্তির রায় দিয়েছে। ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর সিঙ্গাপুরে পাচার করা অর্থ দুনীতি দমন কমিশন ফেরত এনেছে।
প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্রে জেলহত্যার বিচার পুনরায় শুরু, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু ও অনেকের রায় কার্যকর, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও বাহাত্তরের সংবিধানের মৌলিক নীতি কাঠামো পুনঃস্থাপিত প্রভৃতি সাফল্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন