‘খোকা ঘুমাল, পাড়া জুড়াল, বর্গী এল দেশে/বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দিব কিসে?/ধান ফুরাল, পান ফুরাল, খাজনার উপায় কী?/আর কটা দিন সবুর করো, রসুন বুনেছি।’ প্রাচীন এই ছড়ার একটি অর্থ হতে পারে, আবহমান বাংলার কৃষকদের শেষ অবলম্বন ছিল রসুন।
শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশের ফসলী মাঠ থেকে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে বিনা চাষে রসুনের আবাদ। আর এ সময় নরম মাটিতে রসুনের বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকার কষৃক।
সাধারণত বিলের পানি কার্তিকের শেষের দিকে মাঠ থেকে নেমে যায়। অগ্রহায়নের শুরুতে জমির নরম পলিমাটিতে হালচাষ ছাড়াই রসুন বীজ রোপণ করা হয়। তাড়াশ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে মাগুড়াবিনোদ ও সগুনা ইউনিয়নের চর এলাকায় রসুন চাষ বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রায় ৫১৭ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হওয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হালচাষ ছাড়া ২৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের বীজ লাগানো ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বাকী জমি চাষের মাধ্যমে রসুনের বীজ রোপন করা হবে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, এ বছর চলনবিল তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের চর-কুশাবাড়ি, বিন্নাবাড়ি, চরহামকুড়িয়া, বিলনান্দ, কুন্দইল, মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের শ্যামপুর, বিল হামকুড়িয়া, নাদোসৈয়দপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিগুলোতে বোনা আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগেই। ওই সমস্ত ফসলী জমিতে আমন ধান কাটা শেষে নরম মাটিতে বিনাচাষে রসুন রোপণের ধুম পড়েছে। ওই সকল জমিতে বিনাচাষে রসুনের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। এ কারণে প্রতি মৌসুমে ওই এলাকার কৃষকরা বিনাচাষে রসুনের আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন।
বিনাচাষে উৎপাদন পদ্ধতি হলো- কার্তিক মাসের শেষে জমি থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাঁদামাটিতে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। রোপণ শেষে ধানের নাড়া (খড়) বিছিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে জমিতে প্রতি বিঘা ২৫ থেকে ৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ, ২০ কেজি জিপশাম ও দুই কেজি বোরন সার প্রয়োগ করা হয়। রোপণের ২৫-৩০ দিন পর গাছ রড় হলে পানি সেচ দিয়ে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ২০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়।
তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, জমি থেকে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে রসুন চাষে কৃষকের মাঝে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। এখন চলছে রসুন রোপণের ভরা মৌসুম। চোখ মেললেই দেখা যায়, নারী-পুরুষের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী ও ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা মিলে বিলের জমিতে লাইন ধরে বসে রসুনের কোয়া রোপণ করছেন।
তাড়াশের মাগুরা ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুরে গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন জানান, প্রতি বছরের মত এবারো তিনি তার তিন বিঘা জমিতে বিনা চাষে রসুন লাগিয়েছেন। বিনা চাষে রসুন আবাদে খরচ কম হয়। পাশা-পাশি ফলন ও লাভও ভাল হয়।
এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, বিনাচাষে রসুন আবাদে লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর তাড়াশ উপজেলায় রসুন আবাদ ক্রমেই বাড়ছে। জমি চাষ করে রসুন লাগাতে কৃষকের অনেক সময় লাগে। কিন্তু বিনাচাষে রসুন লাগাতে একদিকে যেমন জমি চাষে কৃষকের খরচ হয় না, অন্যদিকে কৃষকের বেঁেচে যায় অনেক সময় ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন