শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে যাচ্ছে স্থিতিশীলতা তহবিল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ নিয়ে গঠিত ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ থেকে প্রথমবারের মতো ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত এসেছে। তহবিল পরিচালনার জন্য গঠন করা পরিচালনা পরিষদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর দীর্ঘ দিন থেকে উড়তে থাকা পুঁজিবাজারে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সংশোধনে যাওয়া পুঁজিবাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে দুই দিনে এটি বিএসইসি’র দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত। আগের রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে সূচকের ভিত্তিতে মার্জিন ঋণের সীমা পরিবর্তন করা হয়। জানানো হয়, সূচক যতই হোক না কেন, বিনিয়োগকারীরা ১০০ টাকা মূলধনের বিপরীতে চাইলে ৮০ টাকা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন। এই সিদ্ধান্তে গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ে ১১৫ পয়েন্ট। আর এর পরই স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে বিনিয়োগের ঘোষণাটি এল।

কমিশনের সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেকেন্ডারি মার্কেটে তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে স্থিতিশীলতা তহবিলে জমা হওয়া টাকা থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবিতে। তারা সেই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে।
তহবিলের টাকা দিয়ে ৫০ কোটি টাকার একটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডও গঠন করা হবে। এরও স্পন্সর হবে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড। স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিকে সামনে রেখে ফান্ডটির নামকরণ করা হবে ‘সুবর্ণজয়ন্তী ফান্ড’।

১০ বছর মেয়াদি এই মিউচ্যুয়াল ফান্ডটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় থাকবে। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সংশোধনে যাওয়া পুঁজিবাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে দুই দিনে এটি বিএসইসি’র দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত। গত সোমবার সূচকের ভিত্তিতে মার্জিন ঋণের সীমা পাল্টে দেয়া হয়। জানানো হয়, সূচক যতই হোক না কেন, বিনিয়োগকারীরা ১০০ টাকা মূলধনের বিপরীতে চাইলে ৮০ টাকা মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন।
এই সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারেিদর মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পড়ে। পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ে ১১৫ পয়েন্ট। আর এর পরই স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে বিনিয়োগের ঘোষণাটি এল।

চলতি বছরের শুরুর দিকে এই তহবিল গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও তহবিলটি আকার পেতে শুরু করে বছরের মাঝামাঝি সময়ে। এদিকে চলতি বছরের শুরুর দিকে অবণ্টিত লভ্যাংশের কথা জানতে পেরে সেটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করে বিএসইসি। শুরুতে কোম্পানিগুলোর ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি অবণ্টিত লভ্যাংশের খবর আসে। তবে তহবিল গঠনের আলোচনার পর কোম্পানিগুলো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অবণ্টিত লভ্যাংশ নিতে বিনিয়োগকারীদের জানায়। এরপর বেশির ভাগ অবণ্টিত লভ্যাংশই কোম্পানিগুলো বিতরণ করেছে বলে জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত কত টাকা তহবিলে জমা পড়ল, সেটি এখনও জানানো হয়নি। তবে সেটি দেড় হাজার কোটি টাকার কম হবে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সূত্রে জানা গেছে। এই তহবিল গঠনের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এর ৪০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারে। ৫০ শতাংশ অর্থে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দেয়া হবে। আর ১০ শতাংশ অর্থ অতালিকাভুক্ত কোম্পানি বা সরকারি সিকিউরিটিজ, স্থায়ী আমানত ও বেমেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যাবে।

এর মধ্যে আইসিবি’র মাধ্যমে যে বিনিয়োগ হচ্ছে, সেটি মূলত ৬ শতাংশ সুদে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানিটিকে দেয়া হবে। তারা এই অর্থ বিনিয়োগ করবে পুঁজিবাজারে। সভায় এছাড়াও চারটি সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে একটি নতুন কোম্পানিকে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে টাকা তুলতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রসপেক্টাসও অনুমোদিত হয়েছে। তৃতীয় সিদ্ধান্তটি ছিল পুরস্কার-সম্পর্কিত।

তালিকাভুক্ত হবে জেএমআই হসপিটাল
স্থিতিশীলতা ফান্ড থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছাড়াও আরও চারটি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিএসইসি। জেএমআই হসপিটাল রিকুইসাইটকে ৭৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে তোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার দর নির্ধারণ হবে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে।
এই টাকায় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা ছাড়াও ভবন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, ঋণ পরিশোধ ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ বহন করা হবে।

২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া কোম্পানিটির শেয়ারের বিপরীতে সম্পদ মূল্য ছিল ২৭ টাকা ৭৮ পয়সা। পুনর্মূল্যায়নসহ এটি দাঁড়ায় ২৯ টাকা ৯৯ পয়সা। গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটির ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি আয় ২ টাকা ৪২ পয়সা। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৯০ কোটি টাকা। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে যে দাম ঠিক হবে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ কমে সে শেয়ার দেয়া হবে।

দুই বেমেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড অনুমোদন
বিএসইসি এইচএফএএমএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ডের প্রসপেক্টাসও অনুমোদন করে। ফান্ডটির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে এইচএফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড দেবে আড়াই কোটি টাকা। বাকি ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ফান্ডটির প্রতিটি ইউনিটের মূল্য হবে ১০ টাকা। ট্রাস্টি হিসেবে থাকবে আইসিবি আর হেফাজতকারী হিসেবে কাজ করছে ব্র্যাক ব্যাংক।

সভায় বাংলাদেশ রেইস ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড নামে আরও একটি বেমেয়াদি ফান্ডের প্রসপেক্টাসও অনুমোদন করা হয়। এই ফান্ডটিরও প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশ রেইস ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট কোম্পানি দেবে আড়াই কোটি টাকা। বাকি ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ফান্ডটির প্রতিটি ইউনিটের মূল্য হবে ১০ টাকা। ট্রাস্টি হিসেবে থাকবে সেন্টিনেল ট্রাস্টি। হেফাজতকারী হিসেবে কাজ করবে কাস্টডিয়াল ট্রাস্টি।
পুরস্কারের সিদ্ধান্ত
কমিশন সভায় পুঁজিবাজারে কর্মরত বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে প্রতি ক্যাটাগরিতে (স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি) সর্বোচ্চ কর্মদক্ষ ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ থেকে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন