ভোলার দৌলতখানের মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। ধার-দেনা করে জাল-নৌকা মেরামত করে জেলেরা ইলিশ শিকারে নদীতে গিয়ে ঘাটে ফিরছেন শূন্যহাতে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জেলেদের জীবন-জীবিকার ওপর। জেলেদের আহরণ করা ইলিশ বিক্রির সিংহভাগ ব্যয় হচ্ছে জ্বালানি খরচ বাবদ। যা থাকে তা দিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণের খরচ হয় না। অনেক সময় খরচের টাকা উঠে না। এমনিতে নদীতে মাছ নেই, নতুন করে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ‘এ যেন মরার উপর খাড়ার গা’।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দৌলতখানের পাতার খাল এলাকায় সারি সারি নৌকা ঘাটে বাঁধা। জেলেরা নৌকা জাল মেরামতের কাজ করছেন। তাদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ।
ওই ঘাটের রুহুল আমিন মাঝি জানায়, গত ইলিশের ভরা মৌসুমে মেঘনা নদীতে কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরতে পারিনি। মৌসুম শেষে ‘মা ইলিশ রক্ষা’ অভিযানের ২২ দিন ইলিশ ধরা থেকে বিরত ছিলাম। এখন আবার ‘জাটকা রক্ষা’ অভিযান শুরু হয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময় নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে নামতে পারে না জেলেরা। তাই ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ভবানীপুর ঘাটের সিরাজ মাঝি বলেন, দোকান থেকে ৮শ’ টাকার বাজার করে নদীতে গিয়ে ৪শ’ টাকার মাছ পেয়েছি। দোকানের পাওনা টাকাও পরিশোধ করতে পারিনি; সংসার চালাবো কিভাবে? এনজিও কর্মীরাও কিস্তির টাকার জন্য বাড়িতে গিয়ে চাপ দিচ্ছে। এখন আমাদের না খেয়ে মরার দশা হয়েছে।
এছহাক মোড় এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী বাবুল জানান, ইলিশের মৌসুম শেষ। ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য মাছও নদীতে কমে গেছে। জেলেরা নদীতে গিয়ে সামান্য পরিমাণ মাছ নিয়ে ঘাটে আসছে। ওই মাছ বিক্রি করে তাদের খরচ পুষিয়ে নিতে পারছে না। মাছ না পাওয়ায় জেলেরা পরিবার নিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, দৌলতখানে ২১ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এছাড়াও অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে কয়েক হাজার। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এসব জেলেরা। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হাছনাইন বলেন, এখন নদীতে জাটকা রক্ষা অভিযান চলছে। এসময় ১০ ইঞ্চির ছোট মাছ ধরা নিষিদ্ধ। জেলেদের জালে এখন বড় সাইজের কাক্সিক্ষত ইলিশ ধরা পড়ছে না। একদিকে ইলিশ কম ধরা পড়ছে, অন্যদিকে জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মৎস্যখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে লোকসানে পড়েছে এ উপজেলার জেলেরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন