শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কেন মোদি নতুন কৃষি আইন থেকে পিছু হটেছেন?

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৯ নভেম্বর ঘোষণা দিয়েছেন যে, তার সরকার এক বছরেরও বেশি আগে কৃষি আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত ৩টি আইন বাতিল করবে, যা অত্যন্ত অজনপ্রিয় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা রাজধানী দিল্লির চারপাশে একত্রিত হয় এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তাপদাহ ও করোনা মহামারির সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যেও আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এ বিক্ষোভে ৬শ’ ৭০ কৃষক নিহত হন, যাদের মধ্যে কিছু শিখ ছিলেন।

শিখ ধর্মের সাধুদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় গুরু নানকের জন্মদিনে মোদির এ ঘোষণা দিল্লির উপকণ্ঠে এবং তার বাইরেও আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। কৃষক আন্দোলনের সংগঠকরা তাদের শিবিরে মারা যাওয়া যে কৃষককের শহিদ হিসাবে গণনা করেছেন, আপাতত তাদের জয় হয়েছে। কিন্তু বিরূপ মোদিকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করার জন্য বিক্ষোভটি কি আসলেই যথেষ্ট শক্তি অর্জন করেছিল?
মোদি সরকারের ২০১৬ সালে ‘বিমুদ্রকরণ’ নিয়ে এর পরীক্ষা, ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড-১৯ লকডাউনের জন্য এর কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি এবং তারপর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব, বিগত মাসগুলোতে করোনাভাইরাস প্রটোকলের প্রতি তার অবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি বেদনাদায়ক স্মৃতি তৈরি করেছে। এসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কৃষির ক্ষেত্রে এগুলো রাজ্য থেকে রাজ্যে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।

এর মধ্যে, নতুন আইনের ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতো। প্রথমত, কৃষকদের নিজের পণ্য মন্ডি বা বাজারের বাইরে এবং সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার অনুমতি দেওয়ার কথা ছিল। এটি পণ্য বিক্রিতে কৃষকদের আরো সুবিধা দিত এবং তাদের মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর কম নির্ভরশীল করত। কিন্তু এখন চাষিরা আশঙ্কা করছেন যে, তাদের ব্যবসাতে কারসাজি করা হতে পারে।

বিক্ষোভকারীরা মোদির ঘনিষ্ঠ একজোড়া বহুজাতিক সংস্থার দিকে আঙুল তুলেছিল এই আশঙ্কায় যে, তারা এ নয়া সংস্কারের ফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হয়ে উঠবে। কৃষকরা আরো যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নতুন ক্রেতা, বড় বা ছোট মন্ডিগুলোকে এড়িয়ে যাবে, এমনকি প্রতারকদের বিক্রয়স্থল থেকে দূরে রাখার মতো সবচেয়ে মৌলিক নিরাপত্তা সুবিধাগুলোও বিলুপ্ত করে দেবে।

সামগ্রিকভাবে, নতুন আইন তারা ভালোর চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে এবং সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল রাজ্যে প্রণোদনা ঘাটতি করবে এবং সর্বত্র চাল ও গমের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলবে। তাদের অবস্থার সুবিধা নেওয়া হবে এই ভয়ে কৃষকরা তাদের লাঙ্গল ফেলে রেখে ট্রাক্টর নিয়ে দিল্লি গেটে অবস্থান নেয়। জানুয়ারিতে সরকার ১৮ মাসের জন্য আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছিল, কিন্তু কৃষকরা আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে।
ভারতের কিছু রাজ্যে মন্ডি ব্যবহার করা হলেও অন্যগুলিতে কার্যত উপেক্ষা করা হয়। দিল্লির ৯শ’ কিলোমিটার পূর্বের রাজ্য বিহার ২০০৬ সালে মন্ডি ব্যবস্থা বাতিল করে। তবুও এটি দেশের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্যগুলোর অন্যতম হিসাবে রয়ে গেছে। সেখানকার কৃষকদের বলা হয়েছিল যে, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে এবং ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য কিনবে, কিন্তু তা হয়নি। উত্তর ভারতের কৃষকরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
কৃষকদের বিক্ষোভ এখনো শেষ হয়নি। আন্দোলনের নেতারা বলছেন যে, এসব আইন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের লড়াই চলবে। আইনটি এ মাসের শেষ দিকে শীতকালীন সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মোদি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে পিছু হটতে জানেন না। এক্ষেত্রে তিনি ২শ’ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয়ের আবাস উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল দ্বারা প্ররোচিত হতে পারেন। কারণ প্রদেশটির পশ্চিম অঞ্চলগুলো কৃষকদের পক্ষে আন্দোলন করার লক্ষণ দেখিয়েছে। আর মোদির মূল উদ্দেশ্য সফল করতে গেলে উত্তর প্রদেশকে চটানো চলবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন