শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকার খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে গভীর চক্রান্তে মেতেছে: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৩৩ পিএম

ক্ষমতাসীন সরকার বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য রহস্যজনক। দেশনেত্রী যাতে সুস্থ হতে না পারেন সেজন্যই বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে গড়িমসি করছে। কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাসীনরা মানবতা, বিবেক ও সহমর্মিতার ধার ধারে না। নিজেদের ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য ক্রুর জিঘাংসায় ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে তারা পিছপা হয় না। পথের কাঁটা সরাতে তারা সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আইনী প্রক্রিয়া, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম তথা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য উক্ত যে প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী তা এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতের মুঠোয়। নাৎসী কায়দায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। নানান চর্চার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র স্থির ও বলশালী হয়। গণতন্ত্রে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি অপরিহার্য অংশ। কিন্তু গণতন্ত্র যাতে ধারাবাহিক ও স্থির হতে না পারে সেজন্যই বিএনপি এবং এর নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ধ্বংস করতে এক বিষাক্ত নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচিতে দুর্বিনীত আক্রমণ, হামলা ও নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সকল ধরণের অত্যাচারের যন্ত্র নামিয়ে আনা হয়েছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর। দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মসূচি পালনকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে নরসিংদী জেলা বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে। খুলনায় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত হন। হামলায় আরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়।

এসময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। এদের মধ্যে- ১৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জামিরুল ইসলাম জামিল, ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সোহাগ, ২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হেদায়েত হোসেন, বিএনপি কর্মী জাহাঙ্গির, মোস্তফা, মোল্লা ইউনুছ, তৌহিদুজ্জামান মুকুল, ওয়ার্ড যুবদল নেতা সাহাবুদ্দিনসহ ৮ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে এবং বিএনপি‘র খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক স¤ক্সাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মীর কায়সেদ নান্নু, আবু হোসেন বাবুসহ ৭১ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়। এছাড়া ২টি মামলা হয়। প্রথম মামলায় খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৮ জনের নামে মামলা হয় এবং অজ্ঞাতনামা ৭১ জন ও দ্বিতীয় মামলায় মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মর্তুজা ও মহানগর বিএনপির নেতা শফিকুল ইসলাম তুহিনসহ ৪০/৫০ জনের নামে মামলা হয়।

নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশ বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন ও সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনসহ কয়েকশত নেতাকর্মীকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং কার্যালয়ের বাহির থেকে নরসিংদী সদর উপজেলার তাঁতী দলের সাধারণ স¤ক্সাদক আজাহার উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন মিয়া, শহর বিএনপি‘র সদস্য মানিক মিয়া, নুরআলাপুর ইউপি যুবদল সদস্য রাজিবুল ও শরীফ মিয়াসহ ১৯ গ্রেফতার করে পুলিশ নিয়ে যায় ।

বরগুনা জেলা বিএনপি সমাবেশে পুলিশ লাঠি চার্জ করে অনেককে আহত করে এবং সমাবেশ থেকে ছাত্রদলের রুবেল শিকদার, মিজনুর রহমান, সিয়াবসহ ৭ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে । ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন তোফাকে গ্রেফতার করা হয়। নাটোর এবং সাতক্ষিরা জেলা সমাবেশে পুলিশী হামলা ও অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলা বিএনপি অফিস ব্যাপকভাবে ভাংচুর করে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার আহবায়ক কমিটির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক নাসিরউদ্দিন নাসির, মহসিন হল ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাউসার আহমেদ আশিক এবং সূর্যসেন হল ছাত্রদলের ছাত্রনেতা মিনারুল ইসলাম রাহাতসহ আরও অনেকেই গতকাল কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশী হামলায় আহত হয়েছে।

এছাড়াও গত ২০ নভেম্বর সারাদেশে বিএনপির গণ-অনশন চলাকালিন খুলনা, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা জেলায় পুলিশ ব্যাপকভাবে হামলা চালায় ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে এবং পটুয়াখালী জেলা বিএনপির গণ-অনশনে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে সদর উপজেলার ছাত্রদলের আহবায়ক জাকারিয়া ও জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি ভিপি শাহিনসহ অসংখ্য নেতকর্মী আহত হয়।

রিজভী বলেন, সরকারের নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর নির্দয় হামলা এবং নেতাকর্মীদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহাল করছে। আওয়ামী সরকারের মধ্যে অন্যের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতার ছিটেফোটাও নেই। একটি উন্মুক্ত ও কার্যকরী নির্বাচনের বদলে যাদের জীবনদর্শণ একদলীয় নাৎসীবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত তারা গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীর মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন এটাই স্বাভাবিক। দেশনেত্রী বেগম জিয়ার কিছু হলে দেশের কোটি কোটি জনতা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। আমরা আবারো আহবান জানাচ্ছি-অবিলম্বে দেশনেত্রীর মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ পাঠাতে উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন