বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দক্ষিণ আফ্রিকায় উদ্ভূত করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ভয়াবহ’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৩৭ পিএম

করোনাভাইরাসের নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট, যেটির উৎপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই ভ্যারিয়েন্টটি ব্যাপকভাবে মিউটেট (আচরণ পরিবর্তন) করেছে। এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দেয়া হয়েছে বি.১.১.৫২৯। তবে দ্রুতই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটির গ্রীক নাম (আলফা, ডেল্টা) নির্দিষ্ট করবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি প্রদেশে কিছু মানুষ এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে বাস্তবে এটি আরও ছড়িয়ে গেছে। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি দেশ - দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, লেসোথো, এসওয়াতিনি - থেকে সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে। এই ভ্যারিয়েন্টটি কতটা দ্রুত ছড়াতে পারে, প্রচলিত টিকার মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ থেকে কতটা রক্ষা পাওয়া সম্ভব এবং এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষা পেতে কী করা যেতে পারে - তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন ভ্যারিয়েন্টে অন্তত ৭৭ জন শনাক্ত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থা ইমপেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইনফেকশাস ডিজিজের একজন ভাইরোলজিস্ট নতুন এই ভ্যারিয়েন্টকে 'ভয়াবহ' ও 'এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরণ' বলে বর্ণনা করেছেন। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকংয়ে মোট ৫৯ জন নুতন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের 'মিউটেশনের ধারা অস্বাভাবিক' এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে এটি ‘অনেক ভিন্ন’। "এই ভ্যারিয়েন্ট আমাদের অবাক করেছে। বিবর্তনের হিসেবে এবং পরবর্তী মিউটেশনের হিসেব করলে এটি কয়েক ধাপ লাফ দিয়েছে।" এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক অলিভিয়েরা বলেন, সব মিলিয়ে ৫০টি মিউটেশন রয়েছে যার মধ্যে ৩০টি মিউটেশেনই স্পাইক প্রোটিনে। অধিকাংশ টিকাই স্পাইক প্রোটিনের এই ভ্যারিয়েন্টগুলোকে আক্রমণ করে।

ভাইরাসের যে অংশটি - রিসিপটর বাইন্ডিং ডোমেইন - আমাদের শরীরের কোষের সাথে প্রথম সংযোগ ঘটায়, নুতন ভ্যারিয়েন্টে সেটির ১০টি মিউটেশন রয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতিকর হিসেবে আলোড়ন তৈরি করা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই মিউটেশন ছিল মাত্র দুটি। অনেকগুলো মিউটেশন থাকা মানেই যে তা ক্ষতিকর, তা নয়। কিন্তু মিউটেশনগুলো আসলে কী ক্ষতি করছে - তা জানা জরুরি।

চিন্তার বিষয় হলো, চীনের উহানে উদ্ভূত ধরণের চেয়ে এটি অনেক ভিন্ন। এর অর্থ হলো, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তৈরি হওয়া টিকা - যেগুলো মূল ধরণটি ব্যবহার করে বানানো হয়েছিল - নতুন ধরণের জন্য সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে। এই ভ্যারিয়েন্টটিতে দেখা যাওয়া কয়েকটি মিউটেশন এর আগে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। যেমন, এন৫০১ওয়াই করোনাভাইরাসকে সহজে সংক্রমিত হতে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয়। নতুন ভ্যারিয়েন্টে আরো কিছু মিউটেশন রয়েছে যার ফলে শরীরের অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারে না এবং ভ্যাকসিনকে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর করতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলেন: "মিউটেশনগুলো ভাইরাসকে সংক্রমণে, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী করেছে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। ইমিউন সিস্টেমের বিভিন্ন অংশকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতাও থাকতে পারে এগুলোর।" এর আগেও করোনাভাইরাসের নতুন আবিষ্কৃত হওয়া ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আতঙ্ক শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এ বছরের শুরুতে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক তৈরি করেছিল বেটা ভ্যারিয়েন্ট, কারণ ইমিউন সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি ছিল ঐ ভ্যারিয়েন্টের। কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুত সংক্রমিত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি ভয়াবহ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেন: "বেটা শুধু ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিতো, আর কিছু না। ডেল্টার সংক্রমণের ক্ষমতা ছিল বেশি। নতুন ভ্যারিয়ন্টের এই দুই ধরণের ক্ষতি করারই সামর্থ্য রয়েছে।" সূত্র: বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন