শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুসার লাঠি

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:১৩ এএম

হজরত মুসা (আ.) এর জান্নাতি লাঠির অস্তিত্ব সর্ম্পকে প্রাচীন ইতিহাসে নানা গল্প কাহিনী আছে। ইসরাইলের আগ্রাসন কবলিত ‘হ্যাকার গ্রুপ’ সে বরকতময় ‘আসায়ে মুসা’ অর্থাৎ মুসার লাঠি নামের এ দলটি কর্তৃক বিলম্বে হলেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের কাজ করার খবরটি অবশ্যই উৎসাহ ব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণা দায়ক।

আরবিতে প্রবাদ আছে: ‘লি-কুল্লে ফেরআউনা মুসা’ অর্থাৎ প্রত্যেক জালেম অত্যাচারী ফেরাউনকে শায়েস্তা করার জন্য একজন মুসা থাকে। এ তাৎপর্য পূর্ণ বাক্যটির শিক্ষণীয় দিক বিশেষভাবে উপলব্ধি করা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া নামে খ্যাত ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের ইতিহাস সবার জানা, পুনরাবৃত্তি এখানে নিষ্প্রয়োজন। গত ১৭ নভেম্বর ‘ইনকিলাবের’ আন্তর্জাতিক পাতায় প্রকাশিত ‘ইসরাইলে মুসার লাঠির সাইবার হামলা’ শিরোনামে ‘পার্সটুডে’ সূত্রের একটি খবর ছাপা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের ওপর ব্যাপক সাইবার হামলা চালিয়েছে মুসার লাঠি নামের একটি হ্যাকার গ্রুপ। তারা ইসরাইলের বড় বড় কোম্পানির সার্ভার ভেঙ্গে দিয়েছে। বর্তমানে তাদের হাতে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তথ্য চিত্র রয়েছে, যা প্রকাশ করা হতে পারে। এ ঘটনার পূর্বেও মুসার লাঠি গ্রুপ ইসরাইলের সাইবার হামলা চালিয়েছে বলে মনে হয়। পত্রিকায় এ খবরে বলা হয় যে, গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) মুসার লাঠি গ্রুপটি জানায়, তারা ইসরাইলের বহু প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে সাইবার হামলা চালিয়েছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার তথ্য তারা হাতিয়ে নিয়েছে, এর মধ্যে ইসরাইল জুড়ে এদের মৌলিক সিস্টেমগুলোর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য সর্ম্পকে তথ্যচিত্র রয়েছে। হ্যাকার গ্রুপটি বলেছে, আর্ন্তজাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে যেসব স্থাপনার এরিয়াল ইমেজ পাওয়া কঠিন, তাদের হাতে এখন ইসরাইলের সেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও এসে পৌঁছেছে।

ফিলিস্তিনে মুসলিমদের প্রথম কেবলা মসজিদে আকসা অবস্থিত। দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.) কর্তৃক বায়তুল মোকাদ্দাস (জেরুজালেম) মুসলমানদের দখলে আসার পর সুদীর্ঘকাল তাদের অধিকারে থাকে। ১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম আগ্রাসী ইসরাইলের কবলে পতিত হয় এবং ফিলিস্তিনের বিশাল ভূখন্ডে থাবা বিস্তার ছাড়াও প্রথমবারের মতো ১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে ইসরাইলিরা মসজিদে আকসায় অগ্নি সংযোগ করে। তাদের এই ন্যক্কারজনক ঘটনার এক মাসের মধ্যে মরক্কোর রাজধানী রাবাতে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) গঠিত হয় এবং ইসরাইলকে প্রতিরোধ করার লম্বা চওড়া কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠিত হবার অর্ধ-শতাব্দী পার হয়ে গেছে। এ সংস্থা ইসরাইলের আগ্রাসী তৎপরতা কতটুকু রোধ করতে পেরেছে , সে প্রশ্ন না করেও বলা যায়, সে সময় মিসর কর্তৃক ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দায়ে ওআইসি ও আরবলীগ হতে তাকে বহিষ্কার করে এক ঘরে করা হয়। আর এখন এ সংস্থার সদস্যভুক্ত কোনো কোনো রাষ্ট্র যেন ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। যাইহোক, এবার দেখার বিষয়, মুসার লাঠি (হ্যাকার দল) সেই অজগর রূপ ধারণ করে কি’না ।

ইমামগণ লিখেছেন, যে সময় হজরত মুসা (আ.), হজরত শোয়েব (আ.) এর সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি মুসা (আ.)কে নির্দেশ করেন যে, অমুক গৃহে রাখা লাঠিগুলো থেকে একটি লাঠি নিয়ে এসো। মুসা (আ.)সে গৃহে প্রবেশ করে একটি লাঠি নিয়ে আসেন, যা হজরত আদম (আ.) জান্নাত হতে সঙ্গে নিয়ে এনেছিলেন। অতঃপর এ লাঠি সকল নবীর উত্তরাধিকার সূত্রে সংরক্ষিত ছিল, যা হজরত শোয়েব (আ.)এর নিকট আসে। হজরত মুসা (আ.) প্রথম নির্দেশ অনুযায়ী একটি লাঠি এনে শোয়েব (আ.)কে দেখালে তিনি বলেন, এটি যেখান থেকে এনেছো, সেখানে রেখে এসো। মুসা (আ.) নির্দেশ পালন করেন। এভাবে শোয়েব (আ.) এর নির্দেশে মুসা (আ.) সাতবার লাঠি বদলাতে থাকেন। এ সময় হজরত শোয়েব (আ.) অনুভব করেন যে, আল্লাহর নিকট মুসা (আ.) কোন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। পরের দিন ভোরে হজরত শোয়েব (আ.) মুসা (আ.)কে বলেন, বকরিগুলো চৌরাস্তায় নিয়ে যাও এবং চরানোর পর নিয়ে আসবে, তবে তুমি ডান পাশে থাকবে, যদিও সেদিকে ঘাস ইত্যাদি নেই, তার বিপরীত বাম দিকে ঘাস প্রচুর পরিমাণে আছে; কিন্তু সেদিকে একটি বিরাট অজগরও রয়েছে, যা বকরিগুলোকে মেরে ফেলতে পারে। কাজেই দায়িত্বটি তোমাকে সাবধানে পালন করতে হবে। অতঃপর মুসা (আ.) বকরিগুলো চৌরাস্তার দিকে নিয়ে যান, তখন সেগুলো আপন মনে বাম দিকে যেতে থাকে, কিন্তু তিনি গতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে বকরীগুলোকে স্বাধীনভাবে চরতে দেন। কিছুক্ষণ পর মুসা (আ.) ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় হজরত শোয়েব (আ.) এর কথিত অজগরটি এসে পড়ে। তখন মুসা (আ.) এর সাথে রাখা লাঠি ঐ অজগরের মোকাবিলা করে তাকে মেরে ফেলে। মুসা (আ.) জাগ্রত হয়ে রক্তাক্ত লাঠি ও মৃত অজগর দেখতে পান। তিনি হজরত শোয়েব (আ.)কে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। শুনে তিনি খুবই সন্তুষ্ট হন এবং বলেন, এ বছর যেসব বকরি দুই রঙের জন্ম হবে, সেগুলো হবে তোমার। বাস্তবে তাই হলো, সব বকরিই দুই রঙবিশিষ্ট হয়। এসব ঘটনায় হজরত শোয়েব (আ.) অনুভব করতে পারেন, আল্লাহর নিকট মুসা (আ.) এর আলাদা শান ও মর্যাদা রয়েছে। অতঃপর মুসা (আ.) হজরত শোয়েব (আ.) এর নিকট নির্ধারিত সময় অবস্থান করার পর তার স্ত্রীকে নিয়ে বিদায় গ্রহণ করেন।

হজরত মুসা (আ.)এর লাঠি অজগর হয়ে যেত, এ সর্ম্পকে কোরআনে একটি কাহিনী এইরূপ বর্ণিত হয়েছে: তখন তিনি নিক্ষেপ করলেন নিজের লাঠিখানা এবং তৎক্ষণাৎ তা জলজ্যান্ত এক অজগরে রূপান্তরিত হয়ে গেল। (সূরা আরাফ: আয়াত ১০৭)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এটি হজরত মুসা (আ.)এর একটি ‘মোজেযা’ ছিল। কেউ কেউ বলেন, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, সে অজগর ফেরাউনের প্রতি হা করে মুখ বাড়াল, তখন সে সিংহাসন হতে লাফিয়ে পড়ে এবং হজরত মুসা (আ.) এর শরণাপন্ন হয়, আর দরবারের বহু লোক ভয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। পরবর্তী আরেক আয়াতে বলা হয়েছে: ‘আমি মুসা (আ.)কে নির্দেশ দিলাম যে, তোমার লাঠিটি ফেলে দাও, তা মাটিতে পড়তেই সবচেয়ে বড় সাপ হয়ে সমস্ত সাপগুলোকে গিলে খেতে শুরু করল, যেগুলো যাদুকররা যাদুর দ্বারা প্রকাশ করেছিল। (সূরা :আরাফ)।

বোঝা যাচ্ছে যে, ফেরাউনের যাদুকর দল তাদের যাদুর মাধ্যমে ময়দানে সাপ ছেড়ে দিয়েছিল, হজরত মুসা (আ.) এর লাঠি অজগর রূপ ধারণ করে জ্যান্ত সাপগুলোকে গিলে খায়। ঐতিহাসিক বর্ণনানুযায়ী এইরূপ হাজার হাজার যাদুকরের হাজার হাজার লাঠি আর দড়িগুলো যখনই সাপ হয়ে দৌড়াতে লাগল, তখন সমগ্র মাঠ সাপে ভরে গেল এবং সমবেত দর্শকদের মাঝে এক অদ্ভুত ভীতি সৃষ্টি হলো। কিন্তু হজরত মুসা (আ.)এর লাঠি যখন এক বিরাট আয্দাহা বা অজগরের আকার ধারণ করল তখন সে সবগুলো সাপকে গিলে খেয়ে শেষ করে ফেলল।

হাজার হাজার বছর সেই আগেকার দিনের নবীর লাঠি অজগর আকার ধারণ করে শত্রু যাদুকরদের গিলে খাওয়ার কোরআনিক কাহিনীর আলোকে বলা যায় যে, ফিলিস্তিনে মুসার লাঠির হ্যাকার দল হয়তো সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। হজরত মুসা (আ.)এর লাঠির বরকত তারা লাভ করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Mhafuz ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
Tuhin ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
Congratulations Mosar lathi
Total Reply(0)
Sherif Gomadar ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ,,, আল্লাহ চাইলে সব কিচুই জেন সম্ভব।
Total Reply(0)
MD Abdulla Al Mamun ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ তাকে আরও শক্তিশালী করার তৌফিক দান করুক
Total Reply(0)
SH Shopon ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৪ এএম says : 0
অবশেষে একটা ভালো নিওজ পেলাম
Total Reply(0)
Md Humayun Kabir ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৬:৩৪ এএম says : 0
মাশাল্লাহ্ এগিয়ে যাও আল্লাহ্ সহায়।
Total Reply(0)
মোঃ বাতেনুর রহমান ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ১০:১০ এএম says : 0
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ। ভাই আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন