বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নিত্যপণ্যের দামে অস্বস্তি

বাজারমূল্যে ক্রেতাদের অসন্তোষ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

পণ্যমূল্য সমন্বয়ে আলাদা বিভাগ খোলার দাবি ক্যাবের

বেশ কয়েকমাস ধরেই উত্তাপ ছিল সবজির বাজারে। তবে শীতকালীন মৌসুমের সবজির সরবরাহ বাড়ায়, কমতে শুরু করেছে দাম। ডিম-মুরগি-গোশতের দামও অপরিবর্তিত। এতে ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি মিললেও চিন্তার ভাঁজ অন্যান্য নিত্যপণ্যে। বেড়ে যাওয়া দামেই কিনতে হচ্ছে এসব পণ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের স্থিতিশীল না থাকায় দিনদিন দুরূহ হয়ে পড়ছে ক্রেতাদের। এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার বলে মনে করে দেশের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণকারী বেসরকারি সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব)। স¤প্রতি সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স ও বিজনেস অ্যাফেয়ার্স নামে মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি ডিভিশন সৃষ্টি করার প্রস্তাব রেখেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি ডিভিশন সৃষ্টি করা হলেই কেবল মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এসব দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হতে পারে বলে মত তার।
দেশে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একক কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ না থাকলেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মূলত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপরেই বর্তায়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের কার্যক্রমের সমন্বয় প্রতিষ্ঠায় পৃথক কোনো বিভাগ নেই। গত কয়েক বছরে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, প্রতিযোগিতা আইন ২০১২, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ তৈরির পাশাপাশি এসব আইন বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন বিভাগ, কমিশন ও কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগের পরও ভোক্তাদের অধিকার, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা রক্ষা হয়নি, ব্যবসায়িক প্রতারণা রোধ করা যায়নি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মুক্তবাজার পরিবেশে ভোক্তাদের কল্যাণ ও জীবনমানের উন্নয়নের বিষয়টি বহুলাংশে পণ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা ও ব্যবসায়িক নৈতিকতার ওপর নির্ভরশীল। নেপথ্যে থেকে এসব কাজ সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য পৃথক ডিভিশন না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে কনজ্যুমারস অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন ও বিজনেস অ্যাফেয়ার্স নামে মন্ত্রণালয়ে পৃথক ডিভিশন সৃষ্টি করা হলে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা জনস্বার্থমূলক হবে।
গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কারওয়ান বাজার, ফকিরাপুল, মালিবাগসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় শীতের কয়েকটি সবজি ও ডিম তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও ভোক্তাদের দাবি, ভরা মৌসুমে শীতের সবজির কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা থাকার কথা। সেই তুলনায় দাম এখনও বেশি। সবজির কেজি গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল। বাজারে ১০ থেকে ১২ দিন আগে দেড়শ টাকার ওপরে কেজি বিক্রি হওয়া শিম এখন ৩০ টাকাতে পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে কিছুদিন আগে বাজারের সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া সবজিটি এখন সব থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে শিমের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর চলতি মাসের শুরুর দিকে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি।
শিমের পাশাপাশি গেলো এক সপ্তাহে গাজরের দামও কিছুটা কমেছে। মানভেদে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
শিম ও গাজরের দাম কিছুটা কমলেও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। গত সপ্তাহের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। আর আর কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এদিকে পটল, বরবটি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ফুলকপির পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং বাঁধাকপির পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় থাকা অন্য সবজির মধ্যে ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলাশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দামও। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। প্রতিকেজি গরুর গোশত ৬০০ এবং প্রতিকেজি খাশির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা কেজি।
মুরগির পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম ও পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের মতো ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পেঁয়াজের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সবজি ও ডিমের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও সুখবর নেই নিত্যপণ্যের দামে। বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দর ৮০ থেকে ৮৪ টাকা আর প্যাকেটজাত চিনি কিনতে লাগবে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। দেশি মসুর ডালে পাঁচ টাকা বেশি নিতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। প্রতি কেজি দেশি মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। আর ভারতীয় মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে।
আগের মতোই দুই কেজির প্যাকেট আটার দাম ৮০ থেকে ৮২ টাকা। আর খোলা আটার কেজি ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ টাকা। দুই কেজি ময়দার এক প্যাকেটের দাম ১০৪ টাকা। আর খোলা ময়দার কেজি পাওয়া যাবে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। অপরিবর্তিত রয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। খোলা সয়াবিন কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। প্রতি কেজির দাম রাখছেন ১৫০ থেকে ১৫৫ এবং পামঅয়েল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। এ ছাড়া বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল ব্র্যান্ডভেদে পাওয়া যাচ্ছে ১৫৩ থেকে ১৫৮ টাকার মধ্যে। হেরফের দেখা যায়নি চালের দামে। মিনিকেটের কেজি ৫৮ থেকে ৬২, নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। স্বর্ণা ও বিআর-২৮ জাতীয় চালের কেজি মানভেদে দর ৪৬ থেকে ৫০ টাকা।
এদিকে, ইলিশের দাম প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও অন্য মাছের ক্ষেত্রে দাম কিছুটা কম দেখা গেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার টাকা আর এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকা রাখছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া মানভেদে রুই ও কাতলার কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২৩০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকায়। শিং মাছের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ এবং কই মাছের কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম পরিবর্তন আসেনি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন